Advertisement
১১ মে ২০২৪
বাংলা বনাম কলকাতার আজ বাঁচার লড়াই

নাইট সংসারে এখন উত্তেজনা আর সাতে পাঁচের জটিল অঙ্ক

মাইক হর্নের সঙ্গে প্লেয়ারদের কথাবার্তা হল? উঁহু। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিশ্বজয়ী টিমের মোটিভেটর মোটে তিন-চার দিন টিমের সঙ্গে আবু ধাবিতে ছিলেন। তাঁকে আর এখন কোথায় পাওয়া যাবে? তা হলে ২/৬-এর ‘প্রতিষেধক’? কী ভাবে আসবে? টিমে মোটিভেশনাল, এনথুসিয়াজমের সেশন চলছে। পরের পর। বোঝানো চলছে, মনে করো বুধবার থেকে টুর্নামেন্ট শুরু। যেখানে আর একটা ভুলও করা চলবে না। এখন ভুল মানেই মৃত্যু!

লক্ষ্মীদের হারাতে দিল্লির উড়ানে নাইটরা। ছবি: টুইটার

লক্ষ্মীদের হারাতে দিল্লির উড়ানে নাইটরা। ছবি: টুইটার

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

মাইক হর্নের সঙ্গে প্লেয়ারদের কথাবার্তা হল?

উঁহু। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিশ্বজয়ী টিমের মোটিভেটর মোটে তিন-চার দিন টিমের সঙ্গে আবু ধাবিতে ছিলেন। তাঁকে আর এখন কোথায় পাওয়া যাবে?

তা হলে ২/৬-এর ‘প্রতিষেধক’? কী ভাবে আসবে?

টিমে মোটিভেশনাল, এনথুসিয়াজমের সেশন চলছে। পরের পর। বোঝানো চলছে, মনে করো বুধবার থেকে টুর্নামেন্ট শুরু। যেখানে আর একটা ভুলও করা চলবে না। এখন ভুল মানেই মৃত্যু!

কিন্তু সাতে সাত? আদৌ আর সম্ভব নাকি?

কে বলল, সাতে সাত চাই? সাতে পাঁচ হলেও চলবে।

যে কোনও নাইট-নেশাড়ুর মোতেরার বিপর্যয়-উত্তর তিন সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং তার কেকেআর-প্রেরিত উত্তর। মুশকিল হল, যা দিতে গিয়ে নাইট ম্যানেজমেন্টের কোনও কোনও কর্তা কর্কশ ভঙ্গিতে ‘বলতে বাধ্য নই’ বলে ফোন রেখে দিলেন। কেউ যদিও বা দিলেন, কিন্তু রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচ প্রসঙ্গ ওঠামাত্র ককিয়ে উঠলেন, “প্লিজ, আর না। দিল্লি ম্যাচ নিয়ে কথা বললে ঠিক আছে। কিন্তু রয়্যালস ম্যাচটা নয়। কখন দিল্লির ফ্লাইটে উঠব ভাবছি। এই জায়গাটাই এখন বিষাক্ত ঠেকছে!”

অতীব স্বাভাবিক। যে টিমের ২ রানে ছ-ছ’টা উইকেট উড়ে যায়, ১৭০ তাড়া করতে গিয়ে ১২১-০ থেকে জঘন্য হার গিলতে হয় যে টিমকে, তাদের সংসারে যে পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় কিং খানের ‘হোয়্যারস দ্য পার্টি টুনাইট’ বাজবে না, সেটা পাঁচ বছরের অবোধ শিশুও বলে দিতে পারবে। যেটা বলতে পারবে না সেটা হল, এমন দুর্বিপাক অবস্থা থেকে টিমটাকে টেনে তোলার জন্য ঠিক ক’টা ‘রিকভারি সেশন’ প্রয়োজন?

নরেন্দ্র মোদীর শহরে নাইটদের বিপর্যয়ের রাত থেকেই ব্যাপারটা চালু হয়ে গিয়েছে। প্রথম দিকে যদিও উত্তেজনা প্রশমিত করে প্রত্যাবর্তনের প্রচেষ্টা সম্ভব ছিল না। বরং শোনা গেল, ম্যাচ হারার পরপরই ড্রেসিংরুমে উত্তেজিত হয়ে পড়েন ক্যাপ্টেন গম্ভীর। সিনিয়র সদস্য সহ টিমকে নাকি রূঢ় ভাবে তিরস্কার করেন নাইট অধিনায়ক। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর অবশ্য কেকেআর ম্যানেজমেন্টকেই আবার ক্রিকেটারদের বলতে শোনা গিয়েছে, তোমরা খারাপ খেলে হেরেছ, সেটা যেমন ঠিক। তেমন এটাও ঠিক যে আমাদের সব কিছু খারাপ চলছে না। ক্যাপ্টেনের ফর্ম ফিরেছে। ওপেনিংয়ে রবিন উথাপ্পা রান করে দিয়েছে। আমাদের যেমন পরপর কয়েকটা দিন খারাপ গিয়েছে, আমাদের তেমন সামনের কয়েকটা দিন পরপর ভালও যেতে পারে। আমরা দু’তিন ওভারে একটা জেতা ম্যাচ প্রতিপক্ষকে দিয়ে আসছি। প্রতিজ্ঞা করো, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ম্যাচ থেকে যেন সেটা বন্ধ হয়। বলা হচ্ছে, বাকি সাতটা ম্যাচের সাতটাতেই জিততে হবে বলে যে কেকেআরের সামনে উদ্ভট অঙ্ক সৃষ্টি করে দেওয়া হচ্ছে, সেটাকে সত্যি ভাবলে চূড়ান্ত বোকামি হবে। সাতে সাত নয়, সাতে পাঁচটা জিতলেও প্লে অফে যাওয়া যেতে পারে। কারণ বাকি টিমগুলোও যে পয়েন্ট হারাচ্ছে না, এমন নয়। ম্যাচ ধরে ধরে কোনটা কঠিন আর কোনটা সহজ সেটাও কেউ কেউ বলে দিলেন। ইডেনে আরসিবি ম্যাচ কঠিন। সিএসকে ম্যাচও। কিন্তু কটকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে পরাভূত করা মোটেও জটিল ক্যালকুলাস নয়।

শুনতে ভালই লাগবে। কিন্তু বহির্জগতের হিসেবটা অন্য রকম। সেখানে প্লে অফ সাম্রাজ্যে পৌঁছতে হলে, কাট অফ মার্কস চোদ্দো ম্যাচে ৯। যেখানে বলা হচ্ছে, বুধবারের গম্ভীরের কেকেআর বনাম পিটারসেনের দিল্লির যুদ্ধ যমুনাতীরে যে জিতবে, সে আইপিএল টেবলে বেঁচে থাকবে। যে হারবে, তার ঠিকানা হবে অতলস্পর্শী অন্ধকূপ। পয়েন্ট টেবিলের প্রেক্ষিতে দু’টো টিমই মোটামুটি এক। দু’টো টিমই সাতটা ম্যাচের পাঁচটায় হেরেছে, দু’টো টিমই গত ম্যাচ পর্যন্ত হারের গড্ডালিকাপ্রবাহ থেকে বেরোতে পারেনি। কিন্তু তূল্যমুল্য বিচারে বোধহয় কেপি-র দিল্লির মননটা ফুরফুরে গম্ভীরের কেকেআরের চেয়ে। অন্তত গুমোট ব্যাপারটা দিল্লিতে নেই।

এ দিন সকালে স্পনসরদের অনুষ্ঠানে এসে পিটারসেন-দুমিনি-কার্স্টেন ম্যাচ তো বটেই, ম্যাচ বহির্ভূত নানা প্রসঙ্গেও কথাবার্তা বলে গেলেন। কেপি বলছিলেন, “নাইটদের হালকা ভাবে নেব কী ভাবে? আমাদের নিজেদের অবস্থাই সুবিধের নয়। তার উপর ও ভাবে হেরে আসা টিম মানে, তারা ক্ষুধার্ত থাকবে।” অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে প্রাক্-যুদ্ধ সম্মান-প্রদর্শন। নাইট সংসারে ও সব নেই। বরং টিমের সঙ্গে জড়িত কোনও কোনও কর্তা উত্তেজিত প্রশ্ন তুলছেন ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে। কেন বাদ ক্রিস লিন? কেন আবার ইউসুফ পাঠান? কেন সাকিব আল হাসান ছ’নম্বরে যেখানে তিনি বাংলাদেশের হয়ে তিন নম্বরে যান? শোনা গেল, বুধবার কালিস (৬৪ ম্যাচের পর যিনি বাদ পড়েছিলেন) বা মর্কেলের মধ্যে এক জন ফিরতে পারেন। আন্দ্রে রাসেলের জায়গায়।

আবহ দেখলে কেমন যেন আশ্চর্য লাগবে। কী ম্যাচ হওয়ার ছিল, আর কী হচ্ছে! নিলামের দিন থেকে কেকেআর বনাম দিল্লি ডেয়ারডেভিলস যুদ্ধকে ধরা হচ্ছিল ইডেনের ঐতিহাসিক ৫ মে-র ক্ষুদ্র সংস্করণ। এক দিকে বাংলা, অন্য দিকে কলকাতা। কিন্তু দুই টিমের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ৫ মে-র গনগনে উত্তেজনা দূরের ব্যাপার, নাতিশীতোষ্ণ আঁচও নেই! তিন বাংলা ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সও আহামরি নয়। লক্ষ্মী-শামি চলনসই, বাদ পড়া মনোজ তিওয়ারিকে এ দিনও বিমর্ষ ভাবে হোটেলের লবিতে ঘুরতে দেখা গেল। বরং একটা দু’পক্ষে যেন সন্ধিপ্রস্তাবের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। যখন দিল্লির এক বঙ্গ ক্রিকেটারের মোবাইলে ঢুকল নাইট কর্তার মেসেজ‘ভাল খেলছ। তোমাদের আর আমাদের অবস্থা তো এখন একই। কাল মাঠে দেখা হবে!’

খুব সহজে, বাস্তবের রুক্ষ পৃথিবীতে নাটকীয় রোমান্সের সম্ভাবনা মৃত। যমুনাতীরে আজ নিতান্তই শুষ্কং-কাষ্ঠং দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির টুর্নামেন্টে বেঁচে থাকার লড়াই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE