Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নেইমার-অস্কারের মধ্যেই যা সাম্বার ঝলক দেখলাম

ভাগ্যিস, চোদ্দো হাজার লোকের সই করা দরখাস্তটা জমা পড়েছিল ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের সদর দফতরে! চার বছর আগে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে সে বারের ব্রাজিল কোচ দুঙ্গাকে এসএমএস করেছিলেন পেলে। পারলে নেইমার আর অস্কারকে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যাওয়া হোক। দুঙ্গা দু’জনের প্রশংসা করলেও বিশ্বকাপের দলে রাখেনি। বিশ্বকাপ নিয়েও ফিরতে পারেনি। তখনই ওই চোদ্দো হাজার সই নেইমারদের জন্য। তার পরেই দলে নেইমার আর অস্কারকে দলে জুড়ে দেন ব্রাজিলের ফুটবল কর্তারাই। না হলে, গান্সো-দিয়েগো-নেটোদের মতো সাড়া জাগিয়েও হারিয়ে যাওয়া ব্রাজিলীয় ফুটবলারদের দলে নেইমার-অস্কারও পড়ে যেতে পারত।

উত্তাল ব্রাজিল। ছবি: রয়টার্স।

উত্তাল ব্রাজিল। ছবি: রয়টার্স।

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০৩:৫১
Share: Save:

ক্রোয়েশিয়া-১ (মার্সেলো-আত্মঘাতী)

ব্রাজিল-৩ (নেইমার-পেনাল্টি সহ ২, অস্কার)

ভাগ্যিস, চোদ্দো হাজার লোকের সই করা দরখাস্তটা জমা পড়েছিল ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের সদর দফতরে!

চার বছর আগে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে সে বারের ব্রাজিল কোচ দুঙ্গাকে এসএমএস করেছিলেন পেলে। পারলে নেইমার আর অস্কারকে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যাওয়া হোক। দুঙ্গা দু’জনের প্রশংসা করলেও বিশ্বকাপের দলে রাখেনি। বিশ্বকাপ নিয়েও ফিরতে পারেনি। তখনই ওই চোদ্দো হাজার সই নেইমারদের জন্য। তার পরেই দলে নেইমার আর অস্কারকে দলে জুড়ে দেন ব্রাজিলের ফুটবল কর্তারাই। না হলে, গান্সো-দিয়েগো-নেটোদের মতো সাড়া জাগিয়েও হারিয়ে যাওয়া ব্রাজিলীয় ফুটবলারদের দলে নেইমার-অস্কারও পড়ে যেতে পারত।

ফুটবল-বিধাতাকে ধন্যবাদ, সেটা হতে দেননি। তাই এ বারের বিশ্বকাপ শুরুই হল নেইমার-অস্কারের চোখ ধাঁধানো যুগলবন্দি দিয়ে। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ ভাগ্য এ বার ওদের উপর নির্ভর করছে অনেকটা। এক যুগ আগে এশিয়ায় বিশ্বকাপ জয়ী রোনাল্ডোর জন্য যেমন ছিল রিভাল্ডো আর রোনাল্ডিনহো। সেই ‘থ্রি আর’ না হলেও এ বার স্কোলারির অস্ত্রাগার আলো করে থাকা নেইমার-অস্কার পাশুপাতও কোনও অংশে কম নয়। যেমন ড্রিবল, তেমনই গতি, তেমন পাসিং-পজেশন-কাউন্টার অ্যাটাক। দু’জনের বল ছাড়া মুভমেন্ট এবং শটেও সেই চেনা সাম্বা ফুটবলের ঝলক। মেরেধরে যা আটকানো যায় না। আর অস্কার তো মাঠ জুড়ে প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের ডিফেন্সিভ থার্ডের যত বিবর্ণ চেহারা, তা নিজের ঝলমলে ফুটবল দিয়ে ঢেকে দিল। ওর খেলার ধরন গ্যালারিতে হাজির কাকার মতোই। পারফেক্ট স্কিমার। প্রয়োজনে গোলটাও করে আসতে পারে। মদরিচদের বিরুদ্ধেও ঠিক সে ভাবেই ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলতে থাকা দুই ডিফেন্ডারকে নিয়ে একটা গোল করল শেষ মুহূর্তে। নেইমারের দুটো গোলের পিছনেই অস্কারের প্রয়াস। প্রথমটায় তিন ক্রোট মিডিওকে হারিয়ে বাড়াল মিলিয়ন ডলারের পাস। আর পেনাল্টি পাওয়ার সময় ফ্রেড বলটা পেয়েছিল অস্কারের কাছ থেকেই। তবে ওটা পেনাল্টি কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আমার মতে, ওটা ৫০-৫০ পেনাল্টি। ফ্রেডকে লভরেন দু’হাত দিয়ে থামানোর চেষ্টা করলেও জাপানি রেফারি নিশিমুরা পেনাল্টি না দিলে বলার কিছুই ছিল না।

সদা ব্যস্ত স্কোলারি। ছবি: উৎপল সরকার।

আর নেইমার? ৬৪ বছর পর নিজের দেশে বসা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ৭০ মিনিট পর্যন্ত ব্রাজিল ১-১ ড্র করছে। এই অসহনীয় চাপের পরিস্থিতিতে পেনাল্টি থেকে নেইমার যখন ওর দ্বিতীয় গোলটা করল তখন ভিআইপি এনক্লোজারে বসা ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফকেও লাফাতে দেখলাম।

পত্রপত্রিকা পড়ে জেনেছি, নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচের দিন পেলে থেকে মারাদোনা কেউই টেনশন মুক্ত ছিল না। নেইমার যেন সেই গোত্রেরও বাইরে! মাঠে নামল খেলা দেখতে আসা কাকা আর তার ছেলের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করে। দশ মিনিটের মধ্যে মার্সেলোর আত্মঘাতী গোলে পিছিয়েও দমেও গেল না। বরং ঠান্ডা মাথায় ক্রোয়েশিয়া রক্ষণের অরক্ষিত জায়গা থেকে গোলকিপার প্লেটিকোসাকে যে ভাে ব পঁচিশ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ে চকিতে গড়ানো শটে পরাস্ত করল, তা কেবল দৃশ্যসুখই বাড়ায়। ফ্রেড-হাল্করা বিপক্ষ রক্ষণের ধাক্কাধাক্কি সামাল দেওয়ায় নেইমার অরক্ষিত জায়গাটাও পাচ্ছিল।

অভিনব সেলিব্রেশন। গোল করে হার্ট-সাইন দেখালেন অস্কার। ছবি: এপি।

প্রথম ম্যাচ দেখে যদিও বিশ্বকাপে ব্রাজিল কত দূর যাবে বলাটা বোকামি। কারণ, নক-আউটের বিশেষ স্ট্র্যাটেজি-ট্যাকটিক্স স্কোলারি গ্রুপ লিগে ঝোলা থেকে বের করবে বলে মনে হয় না। তবে অস্কাররা প্রথম ম্যাচে যতটাই ঝলমলে, ওলিচদের আটকাতে গিয়ে ঠিক ততটাই ফ্যাকাসে দাভিদ লুইজদের রক্ষণ। অতীতে জর্জিনহো, কাফু, লিওনার্দো, ব্র্যাঙ্কোদের মতো ব্রাজিলীয় সাইড ব্যাকরা ওভারল্যাপে গিয়ে ঠিক সময় ডিফেন্সে নেমে আসত। কিন্তু দানি আলভেজ আর মার্সেলো সেটা করতে পারছিল না। গুস্তাভোও কভারিংয়ে দোনোমোনো করছিল। এই জায়গাটা কিন্তু খুব ভাইটাল। কারণ, নক আউটের শুরুতেই স্পেন বা নেদারল্যান্ডসের মতো দলগু এ রকম ফাঁকফোকর সহজে ছেড়ে দেবে না। এর জন্যই ওলিচ-পেরিসিচ-মদরিচরা ব্রাজিলের ডিফেন্সিভ থার্ডে একটা সময় দাপানো শুরু করেছিল। কিন্তু অতিরিক্ত ফিজিক্যাল ফুটবল খেলতে গিয়ে ক্রোটরাই ম্যাচে ফিরে আসতে দিল ব্রাজিলকে। ওদের গোলটা মার্সেলোর পায়ে লেগে ঢুকলেও দোষটা দাভিদ লুইজের। ও জেলাভিচের কাছাকাছিই ছিল না। আর এই গোলের পরেই মার্সেলোর আত্মবিশ্বাসে টান পড়ায় হঠাৎই ব্রাজিলকে লং বল খেলতে দেখলাম। আর এরিয়াল বলে ব্রাজিল কিপার জুলিও সিজারের দুর্বলতা চার বছরেও সারেনি সেটাও দেখাল প্রথম ম্যাচ। কাপ জিততে গেলে দ্রুত রক্ষণের ত্রুটি সারাতে হবে। তবে প্রথম দিন তো ওরাই কামাল করল। প্রথম গোল করল নেইমার। প্রথম ব্রাজিলীয় হিসাবে বিশ্বকাপে আত্মঘাতী গোল করল মার্সেলো। এ বারের প্রথম হলুদ কার্ডটাও দেখল ব্রাজিলের ‘ওয়ান্ডার কিড’। শেষের দুটো যেন গোটা বিশ্বকাপে আর না দেখা যায় সেটাই প্রার্থনা হোক গোটা পৃথিবীর ব্রাজিল সমর্থকদের।

ব্রাজিল: জুলিও সিজার, দানি আলভেজ, থিয়াগো সিলভা, দাভিদ লুইজ, মার্সেলো, পওলিনহো (হার্নানেস), লুই গুস্তাভো, হাল্ক (বার্নার্ড), অস্কার, নেইমার (রামিরেজ), ফ্রেড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

brazil fifaworldcup world cup 2014 chuni goswami
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE