Advertisement
E-Paper

প্রান্দেলিই তো দেখছি তিকিতাকা খেলাচ্ছেন

মার্সেলো লিপ্পির ইতালির সঙ্গে প্রান্দেলির টিমের তফাত কি? তফাত একটাই চার বছরে আজুরিদের ফুটবল অনেকটাই বদলে গিয়েছে। আলট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবলের সঙ্গে তিকিতাকা খেলতে শুরু করেছে ইতালি। পাস-পাস-পাস এবং সঠিক পাস। স্পেন নয়, প্রান্দেলির টিম-ই তো দেখলাম তিকিতাকা খেলতে শুরু করেছে।

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০৩:২৭
ম্যাচ ঘোরানো হেড। বান্ধবীকে ফ্লাইং কিস। ছবি: এএফপি।

ম্যাচ ঘোরানো হেড। বান্ধবীকে ফ্লাইং কিস। ছবি: এএফপি।

ইতালি-২ (মার্চেসিয়ো, বালোতেলি)

ইংল্যান্ড-১ (স্টারিজ)

মার্সেলো লিপ্পির ইতালির সঙ্গে প্রান্দেলির টিমের তফাত কি?

তফাত একটাই চার বছরে আজুরিদের ফুটবল অনেকটাই বদলে গিয়েছে।

আলট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবলের সঙ্গে তিকিতাকা খেলতে শুরু করেছে ইতালি।

পাস-পাস-পাস এবং সঠিক পাস। স্পেন নয়, প্রান্দেলির টিম-ই তো দেখলাম তিকিতাকা খেলতে শুরু করেছে। অন্তত ইংল্যন্ডের বিরুদ্ধে শনিবার বেশি রাতের ম্যাচটা যখন রবিবার ভোরে শেষ হল, তখনও মনে হচ্ছিল ফুটবলের কি একটা নতুন দিক দেখাতে শুরু করল ইতালি? টিম যখন গোল পাচ্ছে না তখন বিপক্ষকে শেষ করতে তিকিতাকা, আর এগিয়ে যাওয়ার পর কাতানেচিও! রক্ষণে লকগেট ফেলে দেওয়া। প্রান্দেলির টিম যেন ইতালি ফুটবলে নতুন এক অধ্যায় শুরু করেছে। যার ভিত্তি অবশ্যই ওই পাস-পাস-পাস এবং সঠিক পাস। কাগজপত্র পড়ে দেখছি, ইংল্যান্ড ম্যাচে ইতালিয়ানদের সম্পূর্ণ করা সঠিক পাসের শতাংশ ছিল ৯৩.২। ছেষট্টি থেকে ধরলে গত ৪৮ বছরে বিশ্বকাপের এক ম্যাচে সর্বোচ্চ শতাংশ সঠিক পাসের রেকর্ড।

নেইমার, মেসি, রোনাল্ডোর বিশ্বকাপে আন্দ্রে পির্লো নামেও এক জন ম্যাজিশিয়ান আছে। ইতালির বছর পঁয়ত্রিশের মিডিওকে ম্যাজিশিয়ান বলাই ন্যায্য। টিমের মাস্টার মাইন্ডেড ফুটবলার। যথার্থ নেতা। ইতালি যে গ্রুপ অব ডেথের কঠিন ম্যাচটা জিতল তার পিছনে মাঠের বাইরে যদি কাজ করে প্রান্দেলির মস্তিষ্ক, তা হলে মাঠের ভিতরে সেই কৃতিত্ব পির্লোর। কী অনবদ্য অ্যান্টিসিপেশন! খেলা তৈরির ক্ষমতা! দু’পায়ে সঠিক পাস দেওয়ার অসাধারণ দক্ষতা। সেট পিসে একশোয় একশো! দেখতে দেখতে এক-এক সময় আমাদের বেটো বা প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে পড়ে যাচ্ছিল। ইতালি গোলমুখী ইংল্যান্ডের আক্রমণ পির্লো যেন ম্যাজিকের কায়দায় ভ্যানিশ’ করে দিচ্ছিল।

আবার ইতালির প্রথম গোলের সময় ওর ফলসটা কী অসাধারণ। ঘাড় ঘুরিয়ে ডান দিকে মার্চেসিয়োকে দেখেই বলটা ছেড়ে দিল। গোল তো হবেই। আবার ইনজুরি টাইমে পির্লোর যে ফ্রিকিকটা ইংল্যান্ডের ক্রসপিসে লেগে ফিরল সেটাও কী অসাধারণ!

তবে দুই প্রাক্তন বিশ্বকাপজয়ী দলের লড়াই দেখে আমার মন ভরেনি। বিশেষ করে ইংল্যাল্ডের খেলা দেখে। রুনিকে কেন এত পিছন থেকে খেলালেন হজসন, বোঝা গেল না। ওকে আরও একটু সামনে খেলানো উচিত ছিল। ইংল্যান্ড শুরু করেছিল ৪-২-৩-১ ছকে। সামনে স্টারিজকে রেখে। তবে ইতালি ২-১ এগিয়ে যাওয়ার পর পরিবর্ত লাল্লানাকে একটু পিছন থেকে ব্যবহার করে স্টারিজকে স্ট্রাইকার করে দেওয়া কিন্তু হজসনের মাস্টার স্ট্রোক। প্রথমার্ধে মার্চেসিওর চমৎকার জমি ঘেষা শটে গোলের দু’মিনিটের মধ্যে রুনির ক্রস থেকে স্টারিজ ১-১ করে দেওয়ার পর মনে হয়েছিল ম্যাচটা দারুণ জমবে। এটা ঘটনা, স্টার্লিং, স্টারিজ, ওয়েলব্যাকদের মতো নতুন প্রতিভাবান ফুটবলারদের হজসন টিমে নেওয়ায় ইংল্যান্ডের গতি কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু দলটা গোছালো নয়। কেমন যেন পরিকল্পনাহীন। জেরারের অবস্থা খারাপ। জানি না অ্যাশলে কোলকে বিশ্বকাপে কেন নেওয়া হল না। দলটার মধ্যে কেমন যেন নাভার্স ব্যাপার-স্যাপার লক্ষ্য করলাম। প্রথম ম্যাচে উরুগুয়ের বিশ্রী হারের পরেও তাই ইংল্যান্ডকে গ্রুপ থেকে নক আউটে ওঠার ব্যাপারে বাজি ধরতে পারছি না। শুনলাম অ্যালান শিয়ারার হতাশায় টুইট করেছে, “ইংল্যান্ডের তরুণরা ম্যাচের শেষবেলায় তোমাদের যখন পায়ে টান ধরছে, তখন পঁয়ত্রিশ বছরের পির্লো কী ভাবে দাপটে খেলছে দেখেছ!”

প্রান্দেলি এক বার বলেছিলেন মারিও বালোতেলিকে বাদ দিয়ে টিম করবেন। এটা ঘটনা যে, বালোতেলি নানা ঝামেলা পাকায়। তীব্র গতিতে গাড়ি চালিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তবে আবার বিপক্ষের ডিফেন্ডারকে নিজের শক্তপোক্ত চেহারা দিয়ে কভার করে বলটা কন্ট্রোলেও রাখে। নিজের ইগো থেকে বেরিয়ে এসে মারিওর শেষের কাজটাকেই বিশ্বকাপে গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন ইতালি কোচ। উইং থেকে আসা যে কোনও বলে বালোতেলি হেড করে একেবারে মেপে। এই ম্যাচেও ক্যানদ্রেভা যখন অনেকখানি উঠে গিয়ে বলটা তুলল তখন বালোতেলির ‘টাইমিং অব জাম্প’ এত ভাল হল যে, ২-১ হওয়া ছাড়া অন্য কিছু ঘটার ছিল না। প্রান্দেলি ম্যাচটা শুরু করেছিলেন আক্রমণাত্মক ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। ২-১ লিডটা ধরে রাখতে শেষ দিকে তা পাল্টে দাঁড়াল ৫-৩-২। অনেকেই ক্লাব পর্যায়ে গোলের মধ্যে থাকা ইমোমোবাইলের কথা বলছেন। ও পরে নেমেওছিল বালোতেলির বদলে। ছেলেটা প্রতিভাবান। কিন্তু অভিজ্ঞতা কম। ফলে বালোতেলির মতো ফুটবলার দরকারই প্রান্দেলির টিমে। চোটের জন্য গোলে বুফোঁ খেলেনি। সিরিজু খেলল এবং বেশ ভাল খেলল।

তবে ব্রাজিলে এসে শুরুতে কঠিন ম্যাচ জিতলেও এখনই ইতালির ফাইনালে যাওয়ার ব্যাপারে বাজি ধরব না। আপাতত সেমিফাইনাল থাক!

fifa world cup 2014 subrata bhattacharja fifaworldcup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy