Advertisement
E-Paper

প্রথম গেম জিতলেও ওখানেই ছিল হারের ভিত: বিমলকুমার

ফাইনাল শেষ হওয়ামাত্র সাইনা নেহওয়ালের মুখটা কেমন যেন রক্তশূন্য, ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিল কয়েক লহমার জন্য। সামান্য পরে চোয়াল শক্ত করে হাঁটা লাগালেন পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চের দিকে। ওই রকম সময়েও বার্মিংহামের বার্কলে কার্ড এরিনায় মোবাইল কল রিসিভ করে সাইনার নতুন ব্যক্তিগত কোচ বিমল কুমার আনন্দবাজারকে বললেন “খুবই দুঃখজনক হার।

স্বপন সরকার

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৭
ইতিহাস গড়েও ট্রফি এল না সাইনার। ছবি: এএফপি।

ইতিহাস গড়েও ট্রফি এল না সাইনার। ছবি: এএফপি।

ফাইনাল শেষ হওয়ামাত্র সাইনা নেহওয়ালের মুখটা কেমন যেন রক্তশূন্য, ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিল কয়েক লহমার জন্য। সামান্য পরে চোয়াল শক্ত করে হাঁটা লাগালেন পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চের দিকে। ওই রকম সময়েও বার্মিংহামের বার্কলে কার্ড এরিনায় মোবাইল কল রিসিভ করে সাইনার নতুন ব্যক্তিগত কোচ বিমল কুমার আনন্দবাজারকে বললেন “খুবই দুঃখজনক হার। প্রথম গেম জেতার পরে ভাবতেই পারিনি সাইনা শেষমেশ অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন না হয়ে রানার আপের ট্রফি নিতে যাবে পুরস্কার মঞ্চে। কিন্তু কখনওসখনও মানুষ ভাবে এক আর হয়ে যায় ঠিক তার উল্টো!”

আরতি সাহা থেকে পিটি ঊষা। মিতালি রাজ থেকে অঞ্জু ববি জর্জ। মেরি কম থেকে সানিয়া মির্জা। বিশ্ব ক্রীড়া মানচিত্রে অনেক ইভেন্টেই অনেক ভারতীয় কন্যা দেশের মুখ বাকি পৃথিবীর সামনে উজ্জ্বল করেছেন নানা দশকে, নানা যুগে। সাইনা নেহওয়াল-ই তো বছর তিনেক আগে লন্ডন অলিম্পিক থেকে ভারতকে ব্যাডমিন্টনে প্রথম পদক (ব্রোঞ্জ) এনে দিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন। আর আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবসে সেই পয়া কোর্টেই হায়দরাবাদি মেয়ের সামনে ছিল মহাইতিহাস গড়ার সুবর্ণ সুযোগ—ব্যাডমিন্টনের উইম্বলডন হিসেবে চিরদিনের স্বীকৃত অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব প্রথম ভারতীয় মেয়ে হিসেবে জেতা! যে খেতাব মাত্র দু’জন ভারতীয় পুরুষের কপালে জুটেছেপ্রকাশ পাড়ুকোন এবং সাইনার প্রাক্তন কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দ। এ দিন সাইনাকে কোর্টের পাশ থেকে উৎসাহ দিতে বিমলকুমার, মধুমিতা বিস্ত গোস্বামীর সঙ্গে ছিলেন গোপীচন্দ-ও। স্পেনের ক্যারোলিন মারিনের কাছে ফাইনালে সাইনার ২১-১৬, ১৪-২১, ৭-২১ হার স্বচক্ষে দেখার কিছুক্ষণের মধ্যেই যিনি মোবাইলে রীতিমতো বিমর্ষ গলায় শুধু বলতে পারলেন, “আনফরচুনেট ডিফিট। এর বেশি বলতে পারছি না।” আর প্রকাশ তো ফোনই ধরলেন না।

চব্বিশের সাইনার চেয়ে দু’বছরের ছোট ক্যারোলিন এই মুহূর্তে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেন, হতে পারেন ইউরোপিয়ান খেতাবজয়ীও কিন্তু দু’জনের হেড-টু-হেডে রবিবারের আগে পর্যন্ত ০-৩ পিছিয়ে ছিলেন। এ বছরই সৈয়দ মোদী ফাইনালে সাইনা প্রথম গেম হেরেও ক্যারোলিনকে পরের দু’গেম হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। কিন্তু এ দিন প্রথম গেমের (জিতলেও) শেষের দিক থেকে হঠাৎ-ই ছন্দ হারিয়ে পরের দু’টো গেমে ম্যাচ থেকেই হারিয়ে গেলেন যেন! নির্ণায়ক তৃতীয় গেম তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হারলেন অসংখ্য আনফোর্সড এরর করে। স্ম্যাশ, কাউন্টার স্ম্যাশ, ড্রপ শট, প্লেসিং, ওভারহেড লব— কোনও কিছুই তখন ঠিক হল না সাইনার। হয়তো প্রথম গেমে ২০-৮ এগিয়ে গেম পয়েন্টে দাঁড়িয়ে টানা আটটা পয়েন্ট নষ্ট করার ধাক্কায় মানসিক বুনোটটা ভেতরে ভেতরে আলগা হয়ে পড়েছিল সাইনার। যার নিটফল পরে দু’টো গেমে একবারও লিড না পাওয়া।

অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন
মারিন। ছবি: এএফপি।

অল ইংল্যান্ডে রানার্স।
রবিবার বার্মিংহামে। ছবি: রয়টার্স।

কোচ বিমলও প্রায় সেটাই বলছিলেন, “আসলে প্রথম গেমে সাইনার গেম পয়েন্ট থেকে ক্যারোলিন যে ভাবে লড়ে টানা অনেকগুলো পয়েন্ট ছিনিয়ে নিল সেখানেই আমাদের মেয়ে অনেকটা খেই হারিয়ে ফেলে। যেটা পরের গেমেও সাইনার নার্ভকে নাড়া দিয়েছিল। তার পরে ও আর কোনও সময় ম্যাচে ফিরতেই পারেনি।”

অথচ এ বারই মোক্ষম সুযোগ ছিল সাইনার বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের সবচেয়ে মহার্ঘ খেতাব পাওয়ার। তাঁর কেরিয়ারের তিন চিনা জুজুর মধ্যে দু’জনই আগেভাগে হেরে গিয়েছিলেন। অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন লি জুয়েরুই, যাঁকে ১০ বারে মাত্র দু’বার হারিয়েছেন। ওয়াং শিজিয়ান, যাঁকে ছ’বার হারালেও পাঁচবার হেরেওছেনতাঁদের খেলতে হয়নি এ বার। সেমিফাইনালে যে চিনা প্রতিদ্বন্দ্বী সুন ইউ-কে হারান, বছর কুড়ির সেই তরুণী সিনিয়র সার্কিটে মাত্র তিন বছর এসেছেন। সাইনার সঙ্গে এই প্রথম খেললেন। হয়তো সে জন্য একটাও গেম না হারিয়ে ফাইনালে ওঠার চেয়েও সাইনার পক্ষে বেশি কৃতিত্বের কোয়ার্টার ফাইনালে এশিয়াড সোনাজয়ী ওয়াং ইহানকে হারানো। যাঁকে দশম সাক্ষাতে মাত্র দ্বিতীয়বার হারালেন সাইনা। কিন্তু চূড়ান্ত যুদ্ধে শেষরক্ষা হল না।

আটবারের বাঙালি জাতীয় চ্যাম্পিয়ন প্রাক্তন তারকা মধুমিতা মোবাইলে জানালেন, এ দিন বিমলের পাশে বসে সর্বক্ষণ সাইনাকে সাহস জোগানোর পাশাপাশি নাকি সমানে বিড়বিড় করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে গিয়েছেন। “আমি আর বিমল সারাক্ষণ ওকে বলে গেলাম, ভয় পাস না। তুই পারবিই। কিন্তু প্রথম গেম জিতলেও গেম পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ওই যে অনেকগুলো পয়েন্ট হারাল তার পর থেকেই কেমন যেন জড়সড় হয়ে গেল। আমরা যতই ওকে আশ্বস্ত করি না কেন, সেই সাইকোলজিক্যাল প্রেসারটা নিতে ব্যর্থ হয়েছে ও। এটা গোটা দেশের জন্যই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হয়ে থাকল।”

all england badminton championship saina nehwal carolina marin badminton swapan sarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy