Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রথম প্রহরে বিশ্বকাপ মাধ্যাকর্ষণ ডুবিয়ে দিল প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর

অবচেতনের মতো পিছনে চলে গেল স্টেডিয়ামের কাজ শেষ না করার ব্যর্থতা হিসেবে ঝুলতে থাকা পলিথিনের চাদর। এত দিনকার সব ধর্মঘট। বৃহস্পতিবার সকালেরও বিক্ষোভ মিছিল আর স্টেডিয়ামের বাইরে টিয়ার গ্যাস। বিশ্বকাপের থিম সং সম্পর্কে ব্রাজিলিয়ানদের তীব্র অনাসক্তি। এরিনা সাও পাওলোর একটা হলুদ সমুদ্র যেন বিশ্বকাপ মাধ্যাকর্ষণে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বরণ করে নিল এত দিনকার বর্জন করতে চাওয়া যাবতীয় দ্রব্যাদিকে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তিন শিল্পী ক্লদিয়া লেইথ, জেনিফার লোপেজ ও পিটবুল। ছবি: এএফপি

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তিন শিল্পী ক্লদিয়া লেইথ, জেনিফার লোপেজ ও পিটবুল। ছবি: এএফপি

গৌতম ভট্টাচার্য
সাও পাওলো শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০৩:২৮
Share: Save:

অবচেতনের মতো পিছনে চলে গেল স্টেডিয়ামের কাজ শেষ না করার ব্যর্থতা হিসেবে ঝুলতে থাকা পলিথিনের চাদর।

এত দিনকার সব ধর্মঘট।

বৃহস্পতিবার সকালেরও বিক্ষোভ মিছিল আর স্টেডিয়ামের বাইরে টিয়ার গ্যাস।

বিশ্বকাপের থিম সং সম্পর্কে ব্রাজিলিয়ানদের তীব্র অনাসক্তি।

এরিনা সাও পাওলোর একটা হলুদ সমুদ্র যেন বিশ্বকাপ মাধ্যাকর্ষণে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বরণ করে নিল এত দিনকার বর্জন করতে চাওয়া যাবতীয় দ্রব্যাদিকে।

কুড়িতম বিশ্বকাপের শুরু হয়ে গেল প্রথম প্রহরে বাষট্টি হাজার জনতার অনাবিল ছাড়পত্র মঞ্জুরের মাধ্যমে। শুনলাম লিওনার্দো ডি কেপ্রিও তেরো জন বন্ধুর সঙ্গে কোনও একটা সুপার ভিভিআইপি বক্সে বসে আছেন। এলএ থেকে উড়ে এসেছেন আর ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মালিকের বিলাসবহুল ইয়টে করে ব্রাজিল ঘুরে ঘুরে ম্যাচ দেখবেন। আরও একগুচ্ছ হলিউড তারকারাও শুনলাম ছড়িয়ে ছিলেন স্টেডিয়ামের দুই প্রান্তে।

আসলে ব্রাজিলীয় জনতাই ছিল উদ্বোধনের আসল তারা। ফিফা প্রেসিডেন্ট থেকে দেশের সর্বশক্তিমান মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান। সবাই টেনশনে ছিলেন জনতা কী রায় দেয়? তা তারা দু’কুল ছাপিয়ে হৃদয়ের রং লাগিয়ে দিল চুরাশি বছর প্রাচীন বিশ্বকাপ ফুটবলকে। এরিনা কোরিন্থিয়ান্স স্টেডিয়ামের গড়নটা একটু অদ্ভুত। আয়তক্ষেত্র না। বর্গক্ষেত্র তো নয়ই। দু’দিকটা পাহাড় বেয়ে ওঠার মতো লম্বাকৃতি উঠে গেছে। তার ওপরে কোনও ছাদ নেই। অন্য দিকটা ছাদসহ আরও চওড়া। আর দু’টো স্ট্যান্ডের মধ্যিখানটা অনেকটা করে জায়গা ছেড়ে দেওয়া। এক এক সময় মনে হবে বুঝি হ্যাঙ্গিং গ্যালারি।

অবশ্য হ্যাঙ্গিং হোক কি সর্বত্র জোড় দেওয়া— আবেগের কী আসে যায়। দোলের আবিরের রং যদি লাল হয়, ব্রাজিলীয় ফুটবল-সমর্থকের আবিরের রং হলুদ। হলুদ-হলুদ-হলুদেরই যেন মেলা বসেছিল স্টেডিয়াম জুড়ে। মাঝে একটু একটু কোথাও নীল। কোথাও সবুজ। তাতে হলুদের ঔজ্জ্বল্য আরও যেন ফুটে বের হচ্ছে।


উচ্ছ্বাসের মুখ। উদ্বোধনে সাও পাওলোর স্টেডিয়াম মাতালেন
জেনিফার লোপেজ। বৃহস্পতিবার। ছবি: এপি।

এমনিতে বিশ্বকাপ ফুটবল ওপেনিং ব্যাপারটা কোনও দিনই অলিম্পিক বা ক্রিকেট বিশ্বকাপের মতো জমকালো নয়। যেখানে দু’টো মাত্র দেশ বত্রিশ দেশের প্রক্সি দেয়। যেখানে অন্তত তারকাদেরও নিজের নিজের পতাকা নিয়ে মার্চপাস্টের ব্যবস্থা নেই। সেখানে জৌলুস আর কত উচ্চাঙ্গে উঠতে পারে। আজই মেসি-রোনাল্ডো হাজির থাকলে মাত্রাটাই অন্য রকম বিশ্বজনীন চেহারা নিত।

ঠিক পঁচিশ মিনিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রেখেছিল ব্রাজিল। ১২০ গজ ইনটু ৯০ গোটা মাঠের পঁচানব্বই ভাগ অংশ জুড়ে চাদর বিছানো। তার উপর ছ’শো ষাট জন শিল্পী উদ্বোধনীতে অংশ নিল। সকালে সাও পাওলো মেট্রো স্ট্রাইক প্রত্যাহার হয়ে গেলেও রিও বিমানবন্দরের কর্মীরা একদিনের ধর্মঘট ডেকেছে। এখানেও মাঠের বাইরে বিক্ষোভ।

ওয়ার্ল্ড মিডিয়ার সর্বগ্রাসী কৌতুহল ছিল এ বার গ্যালারি কী রায় দেয়? হাতের কাছে অব্যর্থ টেস্ট কেস এ বারের বিশ্বকাপের থিম সং— উই আর ওয়ান। গানটা প্রকাশের পর থেকে গোটা ব্রাজিল এটা নিয়ে ছি-ছিক্কার করেছে। বলেছে, এটা ব্রাজিলীয় মননকে ধরতেই পারেনি। এ দিন কিন্তু জেনিফার লোপেজ গম্বুজাকৃতি এলইডি বলের ভেতর থেকে মঞ্চে ওঠামাত্র হাততালিতে রাঙিয়ে দিল হলুদ আবির। জে লো নিজেও নিশ্চয়ই টেনশনে ছিলেন। এত সমালোচনা হয়েছে গানটার। ব্যক্তিগত জীবনেও সদ্য গত শুক্রবার কোরিওগ্রাফার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভেঙেছে। তুমুল হাততালি তাঁকে এবং পিটবুলকে হয়তো কিছুটা হতচকিতই করে থাকবে। ব্রাজিলীয় সাংবাদিকরা কেউ কেউ বলছিলেন, সেকেন্ড স্ট্যানজা ওলে, ওলে অবধি ঠিক আছে। যে-ই তিন নম্বরটা গাইতে শুরু করবে ‘হোয়েন দ্য গোয়িং গেটস টাফ, দ্য টাফ গেট গোয়িং’ ওখান থেকে দেখবেন ব্যারাকিং শুরু হবে। একটুও হয়নি। বরং উই আর ওয়ান শেষ করার পর একটা ব্রাজিলীয় ফ্ল্যাগের পেছন পেছন তিন সঙ্গীতশিল্পী মাঠটা অর্ধেক ঘুরলেন। জনতার তাঁদের প্রতি সমাদর দেখে মনে হল ওরা কেউ নেইমার। কেউ ফ্রেড। কেউ থিয়াগো সিলভা। উদ্বোধনী ম্যাচ হাফটাইম পর্যন্ত ১-১, তবু ব্যারাকিংয়ের জন্য কুখ্যাত ব্রাজিলীয় গ্যালারি এ দিন টিমের পাশেই থাকল। বিদ্রূপ করল না।

ব্রাজিল অন্তত প্রথম দিন দেখাল তারা অতিথিপরায়ণ তো নিশ্চয়ই। তারও আগে ফুটবলপরায়ণ। বাকি প্রতিযোগিতা কি এই মেজাজেই তাদের দেখবে? নাকি অপেক্ষা করে থাকবে নানান অসন্তোষের ডালি? কেউ জানে না। কোনও এগজিট পোলও এই পূর্বাভাস থেকে বিরত।

তবে কোথাও যেন মনে হচ্ছে বিশ্বকাপ মাধ্যাকর্ষণ কাজ করতে শুরু করেছে। হলুদ রঙের প্রাণী কি চুম্বকে বেশি আকৃষ্ট হয়?

বিশ্বকাপকে স্বাগত ব্রাজিলের

বৃহস্পতিবার কোরিন্থিয়ান্স এরিনায়। ছবি: এএফপি, রয়টার্স

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fifaworldcup fifa world cup 2014 opening ceremony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE