Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বৈঠকে ৪৫ মিনিটের রুদ্রমূর্তি শ্রীনির, বার্ষিক সভার সময় ঠিক জ্যোতিষ মেনে

তেজ বা আধিপত্যে এত অশান্তিতেও ধুলো জমল না। ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে বিরোধী মুখকে পাল্টা দিলেন। ঝাড়া পঁয়তাল্লিশ মিনিটের আক্রমণাত্মক বক্তৃতায় বুঝিয়ে দিলেন বোর্ড সুপ্রিমো আজও কে। সাধারণ সদস্যের চেয়ারে বৈঠক শুরু করেও পরে তাঁর জন্য আলাদা চেয়ারের ব্যবস্থা হল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৮
Share: Save:

তেজ বা আধিপত্যে এত অশান্তিতেও ধুলো জমল না।

ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে বিরোধী মুখকে পাল্টা দিলেন। ঝাড়া পঁয়তাল্লিশ মিনিটের আক্রমণাত্মক বক্তৃতায় বুঝিয়ে দিলেন বোর্ড সুপ্রিমো আজও কে।

সাধারণ সদস্যের চেয়ারে বৈঠক শুরু করেও পরে তাঁর জন্য আলাদা চেয়ারের ব্যবস্থা হল। তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন বলে প্রথমে সাধারণ চেয়ার, কিন্তু পরে সোজাসুজি বোর্ডের অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট শিবলাল যাদবের পাশে।

বার্ষিক সভার সময়, দিনক্ষণ আগে ঠিক করলেন কুলপণ্ডিতের সঙ্গে। পরে বললেন বোর্ড কর্তাদের।

চেন্নাইয়ের পার্ক শেরাটনে শুক্রবারের নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে দেখে কোনও কোনও বোর্ড কর্তার মনে হল— সম্রাট যা ছিলেন, তাই আছেন। আগে বোর্ড যে ভাবে তাঁর অঙ্গুলিহেলনে চলত, এখনও চলছে। সুপ্রিম কোর্ট শুধু বোর্ড সম্রাটের সিংহাসনটাই কেড়ে নিতে পেরেছে। সম্রাটের প্রতি সদস্যদের আনুগত্য নয়।

উদাহরণ— দু’মাস বোর্ডের বার্ষিক সভা নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে পিছিয়ে গেল, কিন্তু বির্দভের প্রকাশ দীক্ষিত বাদে কোনও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর শোনা গেল না। উল্টে ‘পুরস্কার’ হিসেবে তাঁকে শ্রীনির রাগারাগির মুখে পড়তে হল।

উদাহরণ— ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকের শুরুতে শ্রীনিকে মোটামুটি মিনি-সংবর্ধনা দিয়ে ফেললেন বোর্ড কর্তারা! আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য। যেখানে পার্লামেন্টের কায়দায় টেবল চাপড়ে কর্তারা বোঝালেন অপসারিত বোর্ড প্রেসিডেন্টের প্রতি তাঁদের আনুগত্য।

উদাহরণ— দেশের সর্বোচ্চ আদালত শ্রীনির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করলেও বোর্ডের বার্ষিক রিপোর্টের প্রথম পৃষ্ঠাই হল স্রেফ শ্রীনিকে দিয়ে। তাঁর ছবি, তাঁর বন্দনা সমেত!

বোর্ডে শ্রীনির সারা দিন

• আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য সম্মান জানানো হল নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে।

• বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভার দিন নির্ধারণ, যেখানে ঠিক হবে পরের তিন বছরের
পদাধিকারী কারা হবেন। সভা হবে ২০ নভেম্বর। সকাল ৯-৩০।

• বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেলকে দায়িত্ব দেওয়া হল ‘বিশ্রাম’ পাওয়া দুই সাপোর্ট স্টাফ
জো ডস এবং ট্রেভর পেনির ভাগ্য নির্ধারণের।

চেন্নাইয়ে দিনভর শ্রীনির পেশিশক্তি প্রদর্শনের খবরাখবর পেয়ে এ দিন সন্ধের দিকে বেশ শুকনো শোনাচ্ছিল আদিত্য বর্মার গলা। ফোনে বলছিলেন, “ইচ্ছেমতো বৈঠকে চলে যাচ্ছে। বার্ষিক সভা পিছিয়ে দিচ্ছে। আদালত যদি এর পরেও কিছু না করে, তা হলে আমি আর কী করতে পারি? তা হলে মেনে নেব, শ্রীনিবাসন সুপ্রিম কোর্টের চেয়েও বেশি ক্ষমতা রাখে।” যা শুনে চেন্নাইয়ে উপস্থিত কোনও কোনও কর্তার মনে হল, বিহার সংস্থার সচিবের মুষড়ে পড়া স্বাভাবিক। আদিত্য বোর্ড নির্বাচন পিছনো আটকাতে মামলা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টে। যার শুনানি ১০ অক্টোবর। কিন্তু তার আগেই শ্রীনি এ দিন ২০ নভেম্বর বার্ষিক সভা হবে ঘোষণা করে দেওয়ায় নাকি আদালতের পক্ষে আর সহজ হবে না নতুন দিন নির্ধারণের।

শোনা গেল, এ দিন সকাল আটটা থেকে বোর্ড কর্তাদের নিয়ে ব্রেকফাস্ট টেবলে বসে পড়েছিলেন শ্রীনি। কাউকে কাউকে ওখানেই বলে দেন, আগামী ২০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ন’টায় বার্ষিক সভা হবে। সাধারণত যা সকাল এগারোটা থেকে হয়। কিন্তু তাঁর নাকি জ্যোতিষী বলেছেন যে, ওই দিনটা এবং ওই সময়টা, দু’টোই শুভ, অতএব এ বার সাড়ে ন’টা। সিএবি প্রতিনিধিদের কাছে আবার জানতে চাইলেন, জগমোহন ডালমিয়া কেমন আছেন। ব্যক্তিগত কারণে চেন্নাইয়ের বৈঠকে এ দিন যেতে পারেননি ডালমিয়া। তাঁর বদলে সিএবি যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বৈঠকে প্রতিনধিত্ব করেন। সংস্থার কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-ও গিয়েছিলেন ফিনান্স কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে। শ্রীনি সিএবি কর্তাদের বলে দেন, কলকাতায় ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ান ডে-র সময় পটৌডি মেমোরিয়াল লেকচারে তিনি আসবেন। ভিভিএস লক্ষ্মণ যেখানে আসছেন বক্তৃতা দিতে। মাঝে একফাঁকে বেরিয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসা-সংক্রান্ত বৈঠক, তার পর হোটেলে ফিরে আবার বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক। কারণ, ততক্ষণে ফিনান্স কমিটির বৈঠক শেষ হয়েছে। রাজ্য সংস্থাগুলোও জেনে গিয়েছে, তাদের বার্ষিক অনুদান এ বার আঠারো কোটি। যা আগে ছিল প্রায় তিরিশ-বত্রিশ কোটি। শ্রীনি সদস্যদের নাকি বলে দেন, এ বার হল না। মিডিয়া আর স্পনসরশিপ রাইটস থেকে সে ভাবে টাকা আসেনি। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, পরের বার থেকে অনুদান আবার বাড়বে।

এত পর্যন্ত ‘শ্রীনি-ওয়ান’-কে শুধু দেখা যাচ্ছিল। যিনি বোর্ড পরিবারের ‘অভিভাবক’।

ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে আবার ‘শ্রীনি-টু’-ও আবির্ভূত হলেন। যিনি শাসক, শুধু শাসন বোঝেন।

বার্ষিক সভার দিন ঘোষণা করার পরই গণ্ডগোল বাঁধে। বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল ঘোষণা করেন যে, সভা পিছোতে হচ্ছে। তামিলনাড়ুর রেজিস্ট্রার অব সোসাইটির কাছে সভা দু’মাস পিছনোর আবেদন করা হবে। যেহেতু বোর্ড তামিলাড়ুর সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের নথিভুক্ত। যা শুনে বিদর্ভ প্রতিনিধি প্রকাশ দীক্ষিত নাকি সঙ্গে আনা শশাঙ্ক মনোহরের চিঠি পড়তে শুরু করে দেন। বলতে থাকেন, এ ভাবে বার্ষিক সভা পিছিয়ে দেওয়াটা আইনবিরুদ্ধ। পঞ্জাবের প্রতিনিধি এম পি পাণ্ডব অন্য একটা বিষয় তুলে আনেন। তাঁর বক্তব্য নাকি ছিল— বোর্ড রোটেশন মেনে ম্যাচ কেন্দ্রগুলোকে দিচ্ছে না। সেটা এ বার বন্ধ হওয়া উচিত।

যা শুনে রুদ্রমূর্তি ধরেন শ্রীনি। পাল্টা নাকি বলে দেন যে, আগে যাঁরা প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাঁদের আমলে কাদা ছোড়াছুড়িটা প্রকাশ্যে হত। এখন তো তবু বৈঠকে হচ্ছে। আর ক্রিকেটের উন্নতির কাজকর্মও আগের থেকে এখন হয় অনেক বেশি। অর্থাত্‌, আগের চেয়ে এখন আরও বেশি ভাল চলছে বোর্ড। শ্রীনি নাকি বিরোধীদের স্পষ্ট শুনিয়ে দেন, ডালমিয়ার পর বোর্ড যদি কেউ সবচেয়ে ভাল চালিয়ে থাকে, তো তাঁর নাম নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন! আর তাঁর বিরুদ্ধে আনা অন্যায় অভিযোগ নিয়ে যখন প্রকাশ্যে অপমানজনক মন্তব্য করতে অসুবিধে হয় না, তখন ম্যাচ, রোটেশন ইত্যাদি নিয়ে নাকি কথা না বলাই ভাল!

টানা পঁয়তাল্লিশ মিনিট শ্রীনির ওই রুদ্রমূর্তি দেখে বিদর্ভ প্রতিনিধি আর কথা বলতে পারেননি বলে শোনা গেল। আর পাণ্ডব নাকি শ্রীনিকে বলেন, এক জনের কথা ভেবে একটা রাজ্য সংস্থাকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। বিশেষ করে সেই লোকের সঙ্গে যখন রাজ্য সংস্থা আর নেই। শ্রীনি কী করবেন, স্পষ্ট করে বলেননি। শুধু ‘আগের প্রেসিডেন্ট’ বলতে কাদের বোঝাতে চেয়েছেন, সেটা স্পষ্ট বৈঠকে উপস্থিত কর্তাদের কাছে।

নাম দু’টো খুব সহজ। শশাঙ্ক মনোহর এবং শরদ পওয়ার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

srinivasan bcci
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE