Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ব্রাত্য দুইয়ের বিক্রমেই বাংলার প্রথম ব্যাঘ্রগর্জন

ওঁদের দু’জনকে কোথাও আর দেখা গেল না। বিকেল পাঁচটার ক্লাবহাউস। পাঁচ থেকে ছয়, ছয় থেকে ক্রমে সাত। লক্ষ্মীরতন শুক্ল ইডেন ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। বাংলা কোচ অশোক মলহোত্রও। বঙ্গ মিডিয়া ঠায় দাঁড়িয়ে। কিন্তু ওঁরা দু’জন কোথায়? মনোজ তিওয়ারি, অশোক দিন্দা বেরোচ্ছেন না কেন? ওঁরা আসলে বেরিয়ে গিয়েছেন। বেরিয়ে গিয়েছেন ড্রেসিংরুমের পাশের গেট দিয়ে, অনেক আগে। মনোজ-দিন্দা আজ কিছু বলেননি। বলার কিছু ছিলও না। বিশ্বকাপের প্রাথমিক তিরিশে দু’জনেই ছিলেন। পারফর্ম করেছেন। তার পরেও চূড়ান্ত পনেরোয় একজনেরও হয়নি।

দিন্দার সঙ্গে সেই সংঘর্ষ। মঙ্গলবার ইডেনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

দিন্দার সঙ্গে সেই সংঘর্ষ। মঙ্গলবার ইডেনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৫
Share: Save:

ওঁদের দু’জনকে কোথাও আর দেখা গেল না।

বিকেল পাঁচটার ক্লাবহাউস। পাঁচ থেকে ছয়, ছয় থেকে ক্রমে সাত। লক্ষ্মীরতন শুক্ল ইডেন ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। বাংলা কোচ অশোক মলহোত্রও। বঙ্গ মিডিয়া ঠায় দাঁড়িয়ে। কিন্তু ওঁরা দু’জন কোথায়? মনোজ তিওয়ারি, অশোক দিন্দা বেরোচ্ছেন না কেন?

ওঁরা আসলে বেরিয়ে গিয়েছেন।

বেরিয়ে গিয়েছেন ড্রেসিংরুমের পাশের গেট দিয়ে, অনেক আগে। মনোজ-দিন্দা আজ কিছু বলেননি। বলার কিছু ছিলও না। বিশ্বকাপের প্রাথমিক তিরিশে দু’জনেই ছিলেন। পারফর্ম করেছেন। তার পরেও চূড়ান্ত পনেরোয় একজনেরও হয়নি।

অদৃষ্টের অদ্ভুত বিচারে বাদ পড়ার দিনেই আবার তাঁরা নায়ক।

বোলিংয়ে অশোক দিন্দা। ব্যাটিংয়ে মনোজ তিওয়ারি। এক জন ২৭-৭-৭৬-৪। আর এক জন ৫৪ ব্যাটিং। দু’টো রঞ্জি ম্যাচের পর আজ যে ইডেনে প্রথম বার বাংলার ব্যাঘ্রগর্জন শোনা গেল, তার কারণ এঁরা দুই। এই দুই যোদ্ধার জন্যই বাংলা তিন পয়েন্ট হারানোর আতঙ্ক উড়িয়ে এখন সেটা তোলার দিকে এগোচ্ছে। অবিশ্বাস্য হলেও ছ’পয়েন্ট নেওয়ার কথা ভাবছে!

বাংলা বনাম তামিলনাড়ু ম্যাচ দেখতে কোনও জাতীয় নির্বাচক মাঠে আসেননি। মুম্বইয়ে বিশ্বকাপের দল নির্বাচনী সভা ছিল, তাই। কিন্তু কর্নাটক ম্যাচে বিক্রম রাঠৌর ইডেন প্রেসিডেন্টস বক্সে ছিলেন, রঞ্জি চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে দিন্দার সাতটা দেখেছেন। এ দিন আবার দিনের প্রথম ওভারেই বেঙ্গল এক্সপ্রেসের ম্যাচের চার নম্বর উইকেটটা এল। তামিলনাড়ু ধাতস্থ হওয়ার আগেই দেখল, স্কোরবোর্ডে কিছু না তুলেই তারা ‘সিক্স ডাউন’। পরে একটা একক প্রচেষ্টায় রান আউট। মনোজ তবু একটা অভিমন্যু ঈশ্বরণ (৪১ ব্যাটিং) পেয়েছেন সঙ্গী হিসেবে। দিন্দাকে একা তামিলনাড়ু টপ অর্ডার থেকে লোয়ার মিডলের মুখ্যদের ওড়াতে হয়েছে। নবাগত পেসার প্রীতম চক্রবর্তী শেষ দিকে প্রতিভার স্ফুলিঙ্গে ঝলসালেন ঠিকই, কিন্তু আড়াইশোর কমে তামিলনাড়ুকে রাখা যেত না অশোক দিন্দার ‘অগ্নিবাণ’গুলো না থাকলে। সোজা কথায়, বাংলার পুরনো গুরুর বর্তমান টিম দিন্দার স্কিল বা আগ্রাসন কিছুই সামলে উঠতে পারেনি।

কিন্তু তাতে লাভ কী হল?

শোনা গেল, দুপুর আড়াইটে নাগাদ ড্রেসিংরুমের টিভিতে একের পর এক চ্যানেল সার্ফ করে যাচ্ছিলেন দিন্দা। বিশ্বকাপের খবরটা খুঁজছিলেন। তখন বাংলা ১০০-২, মনোজ ব্যাট করতে চলে গিয়েছেন। তাঁর কিছু দেখা বা খোঁজার উপায় ছিল না। চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে দিন্দার চোখে পড়ে, বিশ্বকাপের টিমে তিনি নেই। মনোজও না। এমনকী অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজে মোহিত শর্মা-ধবল কুলকার্নিরা আছেন, কিন্তু অশোক দিন্দা তিনি নেই। স্বভাব-ছটফটে দিন্দা দেখে নাকি বিমূঢ় হয়ে যান। সতীর্থদের কারও কারও কাছে জানতে চান, মোহিত কী এমন করেছেন যা তিনি করেননি? বরং শোনা গেল মনোজকে অপেক্ষাকৃত শীতল দেখিয়েছে। বাইশ গজে ন’টা বাউন্ডারি মেরেছেন, যার মধ্যে কোনওটা বাঁ হাতি স্পিনারকে সুইপে, কোনওটা লক্ষ্মীপতি বালাজিকে পরপর কভার আর থার্ডম্যান দিয়ে। শেষ পর্যন্ত ৬১ বলে ৫৪ নটআউট থেকে ফিরে টিমমেটদের জিজ্ঞেস করেছেন, কী হল ফিফটিন? তিনি নেই জেনে নির্বিকার ভাবে শুধু নাকি বলেন, “আচ্ছা, ঠিক আছে।”

সন্ধের দিকে কোনও কোনও বঙ্গ ক্রিকেটার ফুঁসছিলেন সিএবিকে নীরব থাকতে দেখে। প্রশ্ন তুলছিলেন, স্টুয়ার্ট বিনিকে নির্বাচনের যুক্তি নিয়ে। লক্ষ্মীও বলে দেন যে, দিন্দা-মনোজ-ঋদ্ধির মধ্যে কারও অন্তত থাকা উচিত ছিল। বাস্তব হল, কাউকে রাখা হয়নি। বয়স বিচারে সম্ভবত দিন্দা-মনোজের এটাই শেষ বিশ্বকাপ-স্বপ্ন ছিল, যা মঙ্গলবারের পর মৃত। সান্ত্বনা একটাই। মনোজ-দিন্দা আজ অন্তত জাতীয় নির্বাচকদের একটা নীরব বার্তা দিয়ে রাখলেন।

তোমরা আমাদের ব্রাত্য রাখতে পারো। কিন্তু ধ্বংস করতে পারবে না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
তামিলনাড়ু ২৪৬-৯ (দিন্দা ৪-৭৬, প্রীতম ২-৪০)।
বাংলা ১৮৩-২ ( মনোজ ৫৪ ব্যাটিং, অরিন্দম ৪৮)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bengal cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE