মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফিতে জম্মু-কাশ্মীরের ঐতিহাসিক জয়ে উচ্ছ্বসিত বিষেণ সিংহ বেদী। প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার মনে করেন, উত্তর ভারতের এই দলে প্রচুর প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। যাদের মধ্যে থেকে পরভেজ রসুলকে তাঁর বিশেষ পছন্দ। এতটাই যে, বেদী মনে করেন ২০১৫ বিশ্বকাপের টিমে থাকা উচিত কাশ্মীরের অফস্পিনারের।
“পরভেজ রসুল কী অসাধারণ প্লেয়ার! এক জন অফস্পিনার, যে আবার ব্যাটটাও করতে পারে। এই মুহূর্তে দেশে যে ক’জন অফস্পিনার আছে, তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সেরা রসুল। দুর্দান্ত ক্রিকেটার। আমার মনে হয়, বিশ্বকাপ টিমে রসুলের অবশ্যই থাকা উচিত,” বলেছেন কিংবদন্তি বাঁ-হাতি স্পিনার বেদী। জম্মু-কাশ্মীরের ক্রিকেটারদের সঙ্গে বেদীর আলাদা একটা সম্পর্ক আছে। কারণ, ২০১১ থেকে ২০১৩ দু’বছর টিমটার কোচ ছিলেন তিনি। এবং তিনি মনে করেন, মুম্বইয়ের মতো টিমকে হারানোটা মোটেও ‘ফ্লুক’ নয়। “কাশ্মীরের টিমে যত ভাল-ভাল প্লেয়ার আছে, তত প্লেয়ার দিল্লি টিমেও নেই। আমি মজা করছি না। মনে রাখবেন, মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জেতাটা মোটেও ফ্লুক নয়। কারণ টিমটার মধ্যে এই প্রতিভাটা ছিলই। ওদের পেস আক্রমণ, স্পিনার, ব্যাটসম্যান— সবাই দারুণ।”
প্রাক্তন টিম নিয়ে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বেদীর মনে কাশ্মীর দল নিয়ে যথেষ্ট দুঃখও আছে। তিনি মনে করেন, তাঁর পুরনো টিমের প্লেয়ারদের জন্য যথেষ্ট পরিকাঠামো নেই সে রাজ্যে। বেদী বলছেন, “ঈশ্বরের কৃপা যে, কাশ্মীর টিমটা এত প্রতিভাবান ছেলে দিয়ে ভর্তি। পারফর্ম করার আগুন আছে ওদের মধ্যে। কিন্তু পরিকাঠামো নেই। ওদের রাজ্যে হাতেগোণা কয়েকটা টি-টোয়েন্টি ক্লাব আছে। কথায় আছে না, জঙ্গলে ময়ুর নাচলে কারই বা চোখে পড়ে! ওদের অবস্থা একদম সে রকম। আমি তো ওদের মধ্যে শুধু একটা স্ফূলিঙ্গ তৈরি করেছি। ভাল খেলার আগুনটা ওদের মধ্যে আগে থেকেই ছিল।”
জম্মু-কাশ্মীর ক্রিকেটারদের সঙ্গে ভারতীয় বোর্ড যে খুব একটা ভাল ব্যবহার করে না, সেই অভিযোগও এ দিন তুলে দিলেন বেদী। শ্রীনিবাসনের বোর্ড হালফিলে যে সব সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে বেদী বলেছেন, “জাতীয় বোর্ডের সঙ্গে বাকি রাজ্যের বোর্ডেও যা সব হচ্ছে, তা তো বরফখণ্ডের শৃঙ্গমাত্র। এ রকম নির্মম আচরণ দিয়ে কিছু হবে না। সব কিছু পরের দিনের জন্য ছেড়ে রেখে রেখেই তো কত প্রশাসনিক সংস্থা নষ্ট হয়ে গেল। জম্ম-কাশ্মীরের অবস্থাটাও এক রকম। আমি জানি, ক্রিকেটাররা দু’বছর ধরে কোনও টাকা পায়নি। আর ওদের কথা কী বলব, আমি নিজেও তো এক বছরের টাকা পাইনি। তাই তিন বছরের চুক্তি থাকলেও দু’বছর পরেই চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু প্লেয়ারদের সঙ্গে আমার এখনও যোগাযোগ আছে। ওদের যদি আমাকে দরকার হয়, আমি সব সময় ওদের সাহায্য করতে তৈরি।”
উত্তর ভারতের রাজ্য থেকে রসুল কিছুটা প্রচার পেলেও অনেকে আছেন যাঁরা দেশের ক্রিকেটমহলে অচেনা। এ রকমই কিছু প্লেয়ারের কথা বললেন বেদী। “বোলিং অলরাউন্ডার রাম দয়াল দারুণ প্লেয়ার। অনেকটা কপিল দেবের মতো। শুভম খাজুরিয়া, ইয়ান দেব সিংহ দু’জনেই ভাল ওপেনার। হরদীপ সিংহ খুব ভাল ব্যাটসম্যান। কিন্তু এত প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের উপর নজর না দিয়ে প্রশাসকরা শুধু নিজেদের অফিসে বসে বসে চা পান করে যাচ্ছেন!” বিস্ফোরণ তাঁর।
প্রাক্তন ছাত্রদের বেদীর পরামর্শ, প্রাথমিক সাফল্যে গা না ভাসানো। আত্মতুষ্টি থেকে দূরে থাকা। “ওদের বলেছি যে তোমরা টুর্নামেন্টগুলো শুধু খেলতেই নামছ না। জিততে নামছ। রঞ্জিতে ওদের প্রথম বছর কয়েকটা ম্যাচ জিতেছিল। তার পর প্রচুর উন্নতি করেছে। কিন্তু এই সাফল্যটা ধরে রাখা সহজ হবে না। বিজয় হাজারেতেও এ বার তো ওরা দিল্লি আর সার্ভিসেসকে হারিয়ে পরের ম্যাচগুলো হেরে গেল। নিজেদের রাজ্যে ভাল টুর্নামেন্ট না হওয়ার অভাব ওদের ক্ষতি করছে।”
তবে বেদীর আশা, রাজ্যের তরুণ ক্রিকেটাররাই এই অবস্থা বদলে দিতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy