ইশান্তদের বিপর্যয়
আর লিখতে ইচ্ছে করে না।
বিদেশে গিয়ে বিশ্রী ভাবে হারার রোগটা ভারতীয়দের আজকের নয়। ভারতের বিরাশি বছরের টেস্ট ইতিহাসে বিদেশে গৌরবের কীর্তির চেয়ে লজ্জার গল্প অনেক বেশি। বিদেশ সফর মানে ছিল বরাবরের যম। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের পরের পর জঘন্য পারফরম্যান্সে আমি তাই আশ্চর্য নই। কিন্তু বিপর্যয়ের ধরনগুলো দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।
ওল্ড ট্রাফোর্ড যা দেখেছে, ওভালও তাই দেখছে!
দেখছে মানে, শুধু ধোনিদের হার বা হারের মুখে পড়া নয়। দেখছে একই ভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া। একটা টেস্ট যেন আর একটার কপি-পেস্ট। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ভারতের প্রথম ইনিংস ব্যাটিং বিপর্যয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে বিপর্যয়ের মধ্যে ফারাক আছে? আর ওভালে স্বাধীনতা দিবসে যা ঘটল, তার সঙ্গে আগের টেস্টের কী তফাত? মনে হল ওল্ড ট্রাফোর্ডেরই রিপিট টেলিকাস্ট চলছে!
তিরিশ রান তুলতে না তুলতে অবধারিত ভাবে চার-পাঁচ উইকেট চলে যাচ্ছে। প্রথম ইনিংসে দেড়শো পেরোতে কালঘাম ছুটছে। পূজারা একই ভাবে ইনকামিং ডেলিভারিতে বোল্ড বা এলবিডব্লিউ। কোহলি অফস্টাম্প লাইনে একই রকম বিভ্রান্ত। ফিল্ডিংয়ের সময় নিয়ম করে স্লিপে ক্যাচ পড়ছে। বোলাররা তিন-চারটে উইকেট তুলেই একটা পার্টনারশিপ উপহার দিচ্ছে ইংল্যান্ডকে। আর শেষে তিন-চার দিনে আরও একটা টেস্ট শেষ হওয়ার প্রবল ইঙ্গিত থাকছে।
স্কুল ক্রিকেটে যা হয় না, ফ্লেচারের টিমে তাই দেখছি। স্কুলে কেউ একই ভাবে পরপর আউট হতে থাকলে গেমস টিচার চেষ্টা করে তার ত্রুটি শুধরোনোর। ক্যাচ গললে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় ফিল্ডিং সেশনের। ডানকান ফ্লেচার কি এ সব করেন? তাঁকে কি এমন পরের পর ক্যাচ স্লিপে পড়ার পরেও কেউ দেখেছে স্লিপ ফিল্ডারদের সঙ্গে কথা বলতে? বা কোহলিকে নিয়ে নেটে আলাদা পড়ে থাকতে? মিডিয়ার সামনে কখনও তিনি বলেছেন, ইন্ডিয়া টিম নিয়ে তাঁর ভাবনাটা কী?
ফ্লেচার নিয়ে কথা হলেই ভারতীয় টিমের অনেকেই গদগদ হয়ে পড়ে। বোঝানোর চেষ্টা হয়, ফ্লেচারের মতো টেকনিক্যাল জ্ঞান কারও নেই। তা এমন বিপর্যয়ের সময় তাঁর বিখ্যাত টেকনিক্যাল জ্ঞান কোথায় গেল? টিমটা ব্যাট করতে পারছে না, বল করতে পারছে না, ফিল্ডিং করতে পারছে না এখন টেকনিক্যাল জ্ঞান না বেরোলে আর কবে বেরোবে?
মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না, ফ্লেচারের কাজটা ঠিক কী? উনি কী ভাবেন, ঈশ্বরও জানেন না। আজ পর্যন্ত প্রেস কনফারেন্স করতে ওঁকে দেখিনি। ফুটবলে মোরিনহো থেকে গুয়ার্দিওলা, সবাইকে নিয়ম করে মিডিয়ার সঙ্গে বসতে হয়। বিশ্বকাপের সময় দেশের মিডিয়ার সঙ্গে ঝামেলা চললেও নিয়মিত প্রেস কনফারেন্স করতে হয়েছে জার্মান কোচ জোয়াকিম লো-কে। কিন্তু ফ্লেচার এতটাই হাইপ্রোফাইল যে তিনি ও সবের ধার ধারেন না। মাঠেও তাঁর অ্যাপ্লিকেশনের ছিটেফোঁটা দেখি না।
কাঠগড়ায় ফের কোচ ফ্লেচার।
আসলে খারাপ ডাক্তারের পাল্লায় পড়লে সুস্থ রোগীও অসুস্থ হয়ে পড়ে, আর সেখানে ধোনিদের তো বিদেশে খারাপ পারফরম্যান্সের রেকর্ডটা বরাবরই ভাল। টিমে এখন একটাই ব্যাটসম্যান ধোনি। শুক্রবার ৯০-৯ হয়ে যাওয়ার পরেও ধোনি ৮২ রানের একটা দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলে গেল। কিন্তু ওর মুশকিল হল, যত ভাল ব্যাট করছে, তত খারাপ ক্যাপ্টেন্সি করছে। প্ল্যান এ, বি, সি কিছু নেই। একটাই প্ল্যান। ক্লিক করলে করল, নইলে না। স্টুয়ার্ট বিনিকে ওভালে খেলানো হচ্ছে, ওর ভূমিকাটা কী? ব্যাটসম্যান? তা হলে আর একটু উপরে গেল না কেন? অলরাউন্ডার? তা হলে কেন মোটে ১২ ওভার বল করল? বিনিকে যদি ব্যবহার না-ই করবে, তা হলে রোহিত শর্মাকে খেলালে না কেন?
দলের পারফরম্যান্সের মতো ধোনির ক্যাপ্টেন্সিতেও যুক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। যেটা একবার শুরু হয়েছে, সেটা চলতেই থাকবে। কুকের ক্যাচ আজ স্লিপে নতুন পড়ল না। এ দিন আবার দু’টো পড়ল। একটা বিজয় ছাড়ল, একটা রাহানে। বোলাররা মাঝে তেড়েফুঁড়ে উঠে ইংল্যান্ডের তিন-চারটে নিল। তার পর অবস্থা দেখুন। রুট ৯২ ব্যাটিং, ইংল্যান্ডের লিড এখনই ২৩৭। তিন উইকেট আছে এখনও। সোজাসুজি বলছি, এই ইয়াঙ্গিস্তান নিয়ে লম্ফঝম্ফ করে লাভ নেই। টিমে প্রচুর বদল দরকার। সবার আগে পাল্টানো দরকার কোচকে। বিদেশে কোচ ফ্লেচারের দশা এত দিন কী ছিল, ইন্টারনেটই বলে দেবে। অ্যাসেজ হারার পর যাঁকে ইংল্যান্ড স্রেফ তাড়িয়ে দিয়েছিল, তাঁকে আমরা জামাইআদর করে রাখছি দিনের পর দিন। বিদেশের বিশ্রী পারফরম্যান্সের পরেও। একই সময়ে একই দিনে যখন মিতালি রাজের ভারত আট বছর পর টেস্টে নেমে জিতে ইংল্যান্ডে ইতিহাস গড়ল, তখন ধোনির ভারত সম্মান ডুবিয়ে দিল দেশের। আরও একটা ইনিংস হারের দুঃস্বপ্ন দেখিয়ে! যা চলছে তাতে বিশ্লেষণ নয়, ধোনিদের পারফরম্যান্সের জন্য স্রেফ একটা শব্দ ব্যবহার হওয়া উচিত।
ছিঃ!
ওভালের স্কোরবোর্ড
ভারত
প্রথম ইনিংস ১৪৮
ইংল্যান্ড
প্রথম ইনিংস
(আগের দিন ৬২-০ এর পর)
কুক ক বিজয় বো অ্যারন ৭৯
রবসন বো অ্যারন ৩৭
ব্যালান্স ক পূজারা বো অশ্বিন ৬৪
বেল ক ধোনি বো ইশান্ত ৭
রুট ব্যাটিং ৯২
আলি বো অশ্বিন ১৪
বাটলার ক অশ্বিন বো ইশান্ত ৪৫
ওকস ক ধোনি বো ভুবনেশ্বর ০
জর্ডন ব্যাটিং ১৯
অতিরিক্ত ২৮
মোট ৩৮৫-৭
পতন: ৬৬, ১৯১, ২০১, ২০৪, ২২৯, ৩০৯, ৩১৮।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ২৪-৩-৮৬-১, ইশান্ত ২৪-৮-৫৮-২,
অ্যারন ২৫-১-১১১-২, বিনি ১২-০-৫৮-০, অশ্বিন ২০-২-৫৫-২।
ছবি: এএফপি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy