এ সেই ড্রেসিংরুম, সেই সবুজ প্রাকৃতিক গালিচা। সেই গ্যালারি, যেখানে ১৩ বছর আগে ঠিক এই দিনে তাঁর টেস্ট হ্যাটট্রিক উদ্যাপন হয়েছিল শব্দের বিস্ফোরণে। ইডেনের চার দিকে তাকিয়ে কি সেই দিনটার কথা ভাবছিলেন ‘টার্বানেটর’?
পরপর তিন বলে রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও শেন ওয়ার্নকে আউট করার পর যে শহর কাঁপানো আওয়াজ উঠেছিল ইডেন থেকে, তা হরভজন সিংহর পক্ষে কখনও ভোলা সম্ভব নয়। ঐতিহাসিক দিনটাতে সেই ইডেনে পা রেখে বললেন, “ইডেন আমার মায়ের মতো। কোনও কিছুর জন্য বায়না করলে ফিরিয়ে দেয় না।”
মঙ্গলবার ছিল সেই তারিখ, ১১ মার্চ। তারিখটা কি মনে ছিল ভাজ্জির? বোধহয় না। তবে মাঠে নামার আগে যে ভাবে চেনা ইডেনের চার দিকে তাকিয়ে নিলেন তিনি, দেখে সত্যিই মনে হল, যেন অনেক দিন পর বাড়ি ফিরে ‘মা’-কে দেখতে পেলেন। বললেন, “মা যেমন কিছু চাইলে না দিয়ে ফিরিয়ে দেয় না, ইডেনও কখনও খালি হাতে ফেরায়নি আমাকে। এই শহরে এলে কালী মাতার আশীর্বাদ আমার মাথায় থাকে। এ বারও নিশ্চয়ই থাকবে।”
হ্যাটট্রিক ছাড়াও ইডেন তাঁকে সাতটা টেস্টে ৪৬টি উইকেট দিয়েছে। আইপিএল খেতাবও দিয়েছে। এ বার বিজয় হাজারে ট্রফিটা নিয়েও ঘরে ফিরবেন বলে পঞ্জাব অধিনায়ক হরভজনের আশা। বুধবার রেলের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াই। তার আগে বললেন, “এতগুলো ভাল ক্রিকেটার আছে দলে। তাই আমাদেরই জেতা উচিত। আশা করি আমার এই আব্দারটাও ইডেন ফিরিয়ে দেবে না।”
এ বার অন্যজনের কথা।
মঙ্গলবার দুপুরে মুম্বই থেকে শহরে আসার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু বিকেলে বাংলা-তামিলনাড়ু ম্যাচের জন্য ইডেনে তাঁদের নেট প্র্যাকটিস সকালে হবে শুনে ভোরের বিমানেই রওনা দেন যুবরাজ সিংহ। শহরে পা রেখেই সোজা ইডেনে। হরভজন তখন বোলিং সেরে ব্যাটিংয়ের জন্য প্যাড-আপ করে নিয়েছেন। পোশাক বদলে প্যাড-গ্লাভস পরে যখন নেটে এলেন যুবি, তখন ভাজ্জির ব্যাটিং শেষ। মাঠ ছেড়ে বেরিয়েও এলেন পঞ্জাব অধিনায়ক। একজন আসন্ন টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন। অন্য জন ভারতীয় দলে ফেরার লড়াই করেছেন। দুই তারকার মধ্যে কি তা হলে কোনও ইগোর লড়াই শুরু হয়েছে? গুঞ্জন উঠল ইডেনে উপস্থিত সাংবাদিক, কর্মকর্তাদের মধ্যে।
তা যে নেহাতই গুঞ্জন, তা বোঝা গেল ঘণ্টা খানেক পরেই, টিম বাসে দুই তারকা মুখোমুখি হতে। টিমেরই এক কর্তার কথায়, সেই চেনা খুনসুটি, ইয়ার্কি-ফাজলামি দেখা যায় দু’জনের মধ্যে। বরাবরই এ সবের মধ্যে থাকতে ভালবাসেন যুবরাজ। সতীর্থদের সঙ্গে মেতে উঠলেন টিম বাসের মধ্যে। ইডেন ছেড়ে যাওয়ার আগে হরভজনও যুবি সম্পর্কে বলে গেলেন, “যুবির মতো ক্রিকেটার থাকলে দলের শক্তিই বাড়ে। পঞ্জাবের পক্ষেও এটা ভালই হয়েছে। এমনিতেই দলে কয়েকজন ভাল, তরুণ ব্যাটসম্যান রয়েছে। ওদের সঙ্গে যুবরাজের অভিজ্ঞতা ও স্কিল মিলিয়ে দারুণ একটা টিম তৈরি হয়েছে।”
খুব ভোরে বিমান ধরার ক্লান্তির ছাপ চোখেমুখে লেগেই ছিল। মিনিট পনেরোর বেশি ব্যাট করলেন না যুবি। মুখেও কুলুপ। সহবাগদের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৯৬-এ যেমন ব্যাটকে কথা বলিয়েছিলেন, বুধবার রেসের বিরুদ্ধে ইডেনেও হয়তো তাঁর ব্যাটই কথা বলবে।
হরভজনের লড়াই অবশ্য বেশি কঠিন। বিজয় হাজারে ট্রফি দেখতে শহরে হাজির সন্দীপ পাটিল ছাড়া চার নির্বাচকই। সেই শুনে হরভজন বললেন, “এটা আমার কাছে তেমন বড় ব্যাপার নয়। কে কী দেখবে, তা নিয়ে ভাবি না। এখানে এসেছি পারফর্ম করতে। নিজের জন্য একটা মান নির্ধারণ করেছি। সেই অনুযায়ীই খেলার চেষ্টা করব।”
দুই তারকাই যাঁর প্রিয়, সেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের শহরে তাঁরা। দেখা করবেন না? হরভজন বললেন, “মাঠে এলে দেখা হবে। আর দাদা যদি বাড়িতে খাওয়ার নেমন্তন্ন করে, তা হলে অবশ্যই যাব।” সৌরভের নেতৃত্বের স্টাইল যে কিছুটা হলেও অবলম্বনের চেষ্টা করছেন, তা স্বীকার করে নিয়ে ক্যাপ্টেন হরভজন বললেন, “দাদা ওয়াজ আ গ্রেট ক্যাপ্টেন। ওর নেতৃত্ব ভারতীয় ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছিল। যে ভাবে দেশের ক্রিকেটে তুমুল বিতর্কের সময় আমাদের আগলে রেখেছিল, তা প্রশংসা করার মতো। ওর মতো ক্যাপ্টেন হওয়া সোজা নয়। তবে চেষ্টা তো করতেই পারি।” সৌরভের প্রত্যাবর্তনের লড়াইও যে তাঁর কাছে অনুসরণীয়, তাও অস্বীকার করলেন না। বললেন, “দাদার যেমন একটাই মন্ত্র ছিল, আরও যত পারো পরিশ্রম করো ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকো, আমারও তাই। এ ছাড়া কোনও পথ নেই যে।”
প্রস্তুতি। ইডেনে হরভজন, যুবরাজ। মঙ্গলবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy