Advertisement
E-Paper

যেন ফাইনাল, শর্ট বল বনাম স্পিনের টক্করে চিন্তা বৃষ্টিও

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। ঢাকার সেমিফাইনাল জিততে না পারলেও তাঁর বেলায় মান্না দে-র গানের প্যারডি অন্তত শোনা যাবে না— রাজাটা তো পড়ে আছে, মুকুটই শুধু নেই! অস্ট্রেলীয় ক্যাপ্টেন? দেশের ক্রিকেট ভক্তদের কাছে ঝটিতি ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পেয়েছেন। ইংল্যান্ড স্কিপার? স্বদেশীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে গভীর দুঃখপ্রকাশ করেছেন।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪১

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। ঢাকার সেমিফাইনাল জিততে না পারলেও তাঁর বেলায় মান্না দে-র গানের প্যারডি অন্তত শোনা যাবে না— রাজাটা তো পড়ে আছে, মুকুটই শুধু নেই!

অস্ট্রেলীয় ক্যাপ্টেন? দেশের ক্রিকেট ভক্তদের কাছে ঝটিতি ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পেয়েছেন।

ইংল্যান্ড স্কিপার? স্বদেশীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে গভীর দুঃখপ্রকাশ করেছেন।

পাকিস্তান অধিনায়ক? বিদায়ী সাংবাদিক সম্মেলনে ক্ষমা চাওয়ার পরেও দেশে ফেরার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আজ নেতৃত্ব ছাড়তে হল।

শ্রীলঙ্কা দলনেতা? অফ ফর্মে বলে নিজেকে বিষ্যুদবারের মিরপুর সেমিফাইনাল থেকে সরিয়ে নিলেন।

সাত বছর আগে তখনকার ভারত অধিনায়ক যখন বোর্ডকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি ও তাঁর দুই সহকর্মী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে আগ্রহী নন, তখন কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি একদিন প্রতিযোগিতার মাহাত্ম্য এই পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। সে দিন সৌরভ-সচিন-রাহুলের দক্ষিণ আফ্রিকা না যাওয়া নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া বাড়তি কোনও অনুসন্ধানের কারণ দেখেনি। সমালোচনাও হয়নি। অথচ আধুনিক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে অধিনায়কদের উত্তপ্ত পরীক্ষাভূমি! যে মঞ্চের আঁচ এতই বেশি যে, সেমিফাইনাল ঘিরে ফাইনাল-সদৃশ সাসপেন্স, উত্তেজনা আর টেনশন!

বৃহস্পতিবার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে উঁকিঝুঁকি মেরে মনে হল, দু’দিকেই পরিস্থিতি থমথম করছে। আর এমনই আবহ যেন কাপ জেতা-হারা কালই হয়ে যাবে। যুদ্ধের মূল মন্ত্রটা খুব পরিষ্কার— শর্ট বল বনাম স্পিন।

বিষ্যুদবার রাত থেকে অবশ্য আরও একটা সম্ভাবনার উৎসমুখ খুলে দিল মিরপুরের আকাশ। শর্ট বল বনাম স্পিন নয়। বৃষ্টি এবং বৃষ্টি। শোনা যাচ্ছে দ্বিতীয় সেমি-র ওয়েদার বুলেটিনও বেশ জটিল। হয় ডাকওয়ার্থ-লুইসের প্রয়োগ হতে পারে। বা কোনও বল না হয়েও ম্যাচ ভেস্তে যেতে পারে। একেবারেই খেলা না হলে টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী ভারত ফাইনালে চলে যাবে। যেহেতু দু’টো দলের মধ্যে তারাই গ্রুপ শীর্ষে ছিল। তখন ফাইনাল হয়ে যাবে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা। রবি শাস্ত্রীর মতো কেউ কেউ যদিও মনে করছেন, পুরো খেলাই হবে। আর গোটা টুর্নামেন্টে এটাই ভারতীয় ফাঁড়ার ম্যাচ হিসেবে উদয় হওয়ার আশঙ্কা।

যে ‘ফাঁড়া’র ম্যাচের প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ অ্যাকাডেমির নেটে এ দিন মর্নি মর্কেলকে নাগাড়ে ঠুকে বল করিয়ে গেলেন অ্যালান ডোনাল্ড। ও দিকে ফাতুল্লায় ভারতীয় অনুশীলনে গত কালের মতোই আউট অব ফর্ম শিখর ধবনকে শর্ট বলের বিরুদ্ধে পুল মারানো হল। সুরেশ রায়নাও ঢুকলেন সেই নেটে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শর্ট বলের ওপর যে পরিমাণ নিষেধাজ্ঞা তাতে উপমহাদেশীয় উইকেটে এর কখনও ভূতের বাড়ি হওয়া সম্ভব নয়।

আর মিরপুর পিচ যে ঢাকার ট্র্যাফিকের মতো! গাড়ি বেশির ভাগ সময় ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার স্পিডে চলে। অথচ মজার ব্যাপার হল, ঢাকা শহরে আবার সামনের সিটে বেল্ট না পরলে, ড্রাইভার ও তার

সঙ্গীর পাঁচশো টাকা জরিমানার ব্যবস্থা আছে। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন দুই তারকা সে দিন এক কিলোমিটার দূরের কফিশপ থেকে হোটেলে ফেরার সময় প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়িতে কাটালেন। আরও দুর্ভোগ অবধারিত কপালে ছিল। যদি না সামনের সিটের আরোহী মুখটা বার করতেন! তিনি— সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাঁর মুখটা দেখামাত্র শশব্যস্ত হয়ে সবাই রাস্তাটা পরিষ্কার করে দিল। এতক্ষণ অবরুদ্ধ থাকা পেছনের সিট বললেন, “যাক।”

তিনি— জন্টি রোডস। অবসর নেওয়ার এগারো বছর বাদে এখনও তাঁর পেট বলে কিছু নেই। কোমর সাতাশের বেশি হবে না। এখনও ঘনিষ্ঠতম বন্ধু হ্যান্সি ক্রোনিয়ের গল্প করেন। ক্রোনিয়ে-পত্নী বার্থা যে নতুন বিয়েতে দুই সন্তানের জননী, সেটা জানান। অকৃত্রিম দক্ষিণ আফ্রিকান ফ্যান। তবে এই উইকেটে জন্টির অনেক ভয়ঙ্কর লাগছে ভারতকে। “ওদের স্পিনাররা অনেক গোছানো,” বললেন জন্টি।

জন্টি হয়তো খেয়াল করেননি ডে’ভিলিয়ার্সদের আর একটা ছুটকো সমস্যা। তাঁরা যে সব ক’টা গ্রুপ লিগ ম্যাচ খেলেছেন মাস্টারদা-র শহরে। ঢাকাইয়ের চেয়ে চাটগাঁইয়া পিচ দ্রুতগামী। নিছক অঙ্কের হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীর সারফেস অ্যাডজাস্টমেন্ট সমস্যাতেই তো ভারতের এগিয়ে থাকার কথা। মনে রাখতে হবে টুর্নামেন্টের সেরা বোলারদের ক্রমপর্যায়ে দশে আট জনই স্পিনার! চট্টগ্রামে স্টেইন এবং এ দিনের মিরপুরে মালিঙ্গার বিক্রম সত্ত্বেও এক এক সময় মনে হচ্ছে, এটা বুঝি পেসার বিবর্জিত টুর্নামেন্ট।

ইতিহাসেও তো পেসার ভরা প্রোটিয়াদের অমঙ্গলের ইঙ্গিত! আইসিসি টুর্নামেন্ট মানেই একটা নিশ্চিন্ত অপেক্ষা। দক্ষিণ আফ্রিকার গায়ে যে কোনও সময় ‘চোকার্স’ স্ট্যাম্প আবার লেগে যাবে। জন্টিদের সময় থেকে চলছে। আজ স্টেইনদের আমলেও দাগটা ওঠেনি।

ভারত কি এটা মনে রেখে ম্যাচটা খেলতে নামছে? রবিচন্দ্রন অশ্বিন— যাঁকে ধোনি পরবর্তী প্রজন্মের সুযোগ্য নেতা হিসেবে এখনই মনে হচ্ছে, দারুণ উত্তর দিলেন। বললেন, “আমাদের ড্রেসিংরুমে এ সব আলোচনা ঢোকে না। কবে আমরা কোথায় অতীতে জিতেছি-টিতেছি। তবে ওরা এটা নিয়ে যত ভাববে তত ভড়কে যাবে। সেটাই চাই যে ইতিহাসটা ওদের ভাবাক।” দু’প্লেসিরা আবার একটা অন্য ছক বাজারে ভাসিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, “আমরা মনে রাখছি সাম্প্রতিক ইতিহাস। এই ইন্ডিয়া টিমটাই আমাদের দেশে মাত্র ক’মাস আগে কী ভাবে হেরে এসেছে।”

দু’প্লেসি খুব ভালই জানেন, তাঁর দেশের উইকেট আর মিরপুরের মধ্যে ঠিক ততটাই মিল যা পিৎজা আর ইলিশ মাছে! কিন্তু ভারতের ওপর চাপ রাখার সামান্যতম সুযোগও ছাড়বেন কেন! বলা হয়নি, আজ ওয়ার্ন আর আসেননি দক্ষিণ আফ্রিকা নেটে। ভারতীয় নেটে ছিলেন যুবরাজ। খেলবেন বলেও মনে হচ্ছে। অজিঙ্ক রাহানে সমর্থকেরা আশায় বুক বাঁধছিলেন, যুবির গোড়ালি না সারলে আর একটা সুযোগ অজিঙ্কের সামনে আসবে। কিন্তু এই ম্যাচ কেউ ছাড়ে নাকি? সামান্যতম অস্বস্তি নিয়েও লোকে নামবে।

বকলমে তো ফাইনালেরই আমেজ। সে ট্রফিটা যতই দু’দিন বাদে দিক!

gautam bhattacharya dhaka icc world t20
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy