Advertisement
০২ মে ২০২৪
পরের বার ফিকরুকে নেবেন না হাবাস

শৃঙ্খলা আর লক্ষ্যে স্থির থাকলে ভাগ্যটা এমনিই চলে আসে

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও বদলাননি এতটুকু। রবিবার সকাল সাড়ে আটটায় চেক আউট মুম্বই। সন্ধ্যায় উড়ে যাবেন মাদ্রিদ। কলকাতা যাওয়ার জন্য টিমের কেউ-ই লবিতে নামেননি তখনও। তিনি নেমে এসেছেন কিন্তু এক ঘণ্টারও আগে। দোভাষী মিগুয়েলকে নিয়ে বসে পড়লেন ব্রেকফাস্ট টেবিলে। সেখানে প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না সাক্ষাত্‌কার দিতে। বারবার বলছিলেন, “কাল রাতেই সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি এখন টেনশনমুক্ত। আবার কীসের ইন্টারভিউ?” অনেক অনুরোধের পর রাজি হলেন চ্যাম্পিয়ন আটলেটিকো দে কলকাতা কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস।

শহরে আটলেটিকো কোচ। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

শহরে আটলেটিকো কোচ। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

রতন চক্রবর্তী
মুম্বই শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৭
Share: Save:

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও বদলাননি এতটুকু। রবিবার সকাল সাড়ে আটটায় চেক আউট মুম্বই। সন্ধ্যায় উড়ে যাবেন মাদ্রিদ। কলকাতা যাওয়ার জন্য টিমের কেউ-ই লবিতে নামেননি তখনও। তিনি নেমে এসেছেন কিন্তু এক ঘণ্টারও আগে। দোভাষী মিগুয়েলকে নিয়ে বসে পড়লেন ব্রেকফাস্ট টেবিলে। সেখানে প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না সাক্ষাত্‌কার দিতে। বারবার বলছিলেন, “কাল রাতেই সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি এখন টেনশনমুক্ত। আবার কীসের ইন্টারভিউ?” অনেক অনুরোধের পর রাজি হলেন চ্যাম্পিয়ন আটলেটিকো দে কলকাতা কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। একান্ত সাক্ষাত্‌কার দিলেন আনন্দবাজারকে।

প্রশ্ন: কাল ম্যাচের পর রাত তিনটে পর্যন্ত পার্টি হল। সবাইকে দেখলাম। আপনাকে দেখলাম না তো?
হাবাস: (হেসে) ও সব পার্টি-টার্টি আমার ভাল লাগে না। কোনও দিন যাইও না। আর আমি তো মাঠে নেমে খেলে কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করিনি। যে ছেলেরা কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করেছে তারা আনন্দ করছে, এতেই আমি খুশি।

প্র: তা হলে ও ভাবে দ্রুত টিম বাস থেকে নেমে ঘরে গিয়ে কী করলেন?
হাবাস: কী আবার করব? দু’টো-একটা ফোন এল মাদ্রিদ থেকে। অসুস্থ মা-র খোঁজ নিলাম। তার পর ঘুমোতে গেলাম। গত দু’দিন তো ঘুমোতেই পারিনি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমি এখন টেনশন মুক্ত। (মাথা দেখিয়ে) সব ভার এখান থেকে নেমে গিয়েছে। কী ভাল যে লাগছে! ঘুমটা ভালই হল। এখন ভাবছি যদি চ্যাম্পিয়ন না হতাম, তা হলে যে কী হত! এমন ভাবে আমার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল। হাতে স্ট্রাইকার নেই। অথচ ম্যাচ জিততে হবে। যাক, ও সব সমালোচনাকে আমি গুরুত্ব দিই না। আবার বলছি, টিমের আমি বস। আমি যা মনে করব তাই করব। তাতে কে কী বলল, কী করল আমার তাতে যায়-আসে না।

প্র: হাতে স্ট্রাইকার নেই। তা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে ফিকরুকে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন?
হাবাস: ফিকরুকে আমিই এনেছিলাম। কিন্তু ও যা করছিল! আমার দলে কোনও ফুটবলারই টিমের চেয়ে বড় নয়। ওর চোট ছিল, পরীক্ষা করাতে বললাম। শুনল না। নানা ঝামেলা শুরু করল। খেলার জন্য পাগল হয়ে গেল। আমি চোট পাওয়া কোনও ফুটবলারকে খেলাই না। দেখলেন না, কাল আমার মার্কি প্লেয়ার গার্সিয়াকেই নামালাম না। হোফ্রেকে রিজার্ভে রাখলাম। দু’জনকেই নামানোর ঝুঁকি নিইনি। ফিকরু কথা শোনেনি। ওকে রাখব কেন? আর কোচেদের ঝঁুকি নিতেই হয়।

প্র: তার মানে কোনও বিশৃঙ্খল ফুটবলারের হাবাসের টিমে জায়গা নেই?
হাবাস: শৃঙ্খলাই সব। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে স্ট্র্যাটেজিটা যেমন সঠিক হতে হবে, তেমনই ঘড়ির কাঁটা ধরে সব করতে হবে। লাঞ্চ, ডিনার থেকে অনুশীলনসব। আমি কোচ হিসাবে সবাইকে বললাম অনুশীলনের জন্য মাঠে ন’টায় আসতে। আর আমি বস বলে সবার শেষে এলাম সেই টিম সাফল্য পাবে না। কোচকে আসতে হবে পৌনে ন’টায়। ফিকরু ইনডিসিপ্লিন্‌ড। ও কেন, ওর মতো কোনও ফুটবলারেরই আমার টিমে পরের বার জায়গা হবে না (তখনও জানতেন না ফিকরু কলকাতাতেই আছেন, শহরে ফিরে কাপ-উত্‌সবে আবার দু’জনে দেখা হবে)।

প্র: তা হলে আপনার পরের বারের টিমে ফিকরু নেই?
হাবাস: না নেই। ওকে নেব না। তবে এখনও টিম নিয়ে কোনও কথা হয়নি। কাল রাতে ম্যাচের পর টিম মালিকদের সঙ্গে সামান্য কথা হয়েছে। বলেছি, পরে টিম নিয়ে কথা বলব। তবে ফিকরুর মতো দু’জন ভাল স্ট্রাইকার দরকার আমার। এ বারের মতো ভুগতে চাই না। প্রতিবার তো আর একই স্ট্র্যাটেজিতে সাফল্য পাওয়া যাবে না। মিডফিল্ডে বল হোল্ড করে করে কাউন্টার আক্রমণ স্ট্র্যাটেজি প্রতিবার ক্লিক করবে না।

প্র: ১৬ ম্যাচের ন’টা ড্র করে চ্যাম্পিয়ন। এ রকম কোচিং জীবনে কখনও হয়েছে আপনার? অনেকেই বলছেন, আপনার কপাল সঙ্গ দিয়েছে বলেই এই সাফল্য?
হাবাস: (রেগে) এ জন্যই কথা বলতে চাই না মিডিয়ার সঙ্গে। আরে বাবা, ড্র-টাও তো কোচের অঙ্কের মধ্যে পড়ে। সেটা তো বলছেন না। আর কপাল? ওতে বিশ্বাস করি না। শৃঙ্খলা, চেষ্টা আর লক্ষ্যে স্থির থাকলে লাকের দরকার হয় না। লাক নিজেই চলে আসে। আমি শুধু বলছি, দেখতে হবে টুর্নামেন্টের শেষে কে কোথায় দাঁড়িয়ে। তা সে ড্র করেই হোক বা হেরে। শেষ পর্যন্ত কিন্তু কলকাতাই চ্যাম্পিয়ন।

প্র: টিমের অনেকেই বলেন, আপনার শৃঙ্খলা ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি। আপনার সামনে নাকি টিমের কর্তারাও হাসতে ভয় পান!
হাবাস: কে বলেছে? কোনও ফুটবলার বলেছে? তিন মাসের টুর্নামেন্ট। প্রস্তুতির সময় দেড় মাস। এত কম সময়ের মধ্যে সাফল্য পেতে হবে। নানা দেশের ফুটবলার। এক-এক জন এক-এক রকম। কড়া হাতে টিম না ধরলে কিন্তু আপনি ডুবে যাবেন। নিজের ভাবনাটা চাপাতে হবে সবার উপর। ড্রেসিংরুমে আমিই বস। সেটা বোঝাতে হবে সকলকে। রাগী না হলে আপনার স্ট্র্যাটেজি মাঠে কাজে লাগবে না। আর রিজার্ভ বেঞ্চে আমি যদি আগুনে মেজাজে না থাকি টিম তাতবে না। দেখলেন না, এত চিত্‌কার করেছি যে অসুস্থও হয়ে পড়েছি। ফুটবলারদের বোঝাতে হবে আমিও টিমের শরিক। শুধু পার্থক্যের মধ্যে তোমরা মাঠে আছ, আমি বাইরে।

প্র: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হল? দলে এত গণ্ডগোল। তা সত্ত্বেও টিম মালিকদের কেউ কিন্তু আপনার কাজে হস্তক্ষেপ করেননি। এটাকে কী ভাবে দেখছেন?
হাবাস: গাঙ্গুলির সঙ্গে অনেক বার কথা হয়েছে। কালও হল। শুভেচ্ছা জানাল। ও তো স্পোর্টসম্যান। টিমের সঙ্গে কোচের মানসিকতাটা বোঝে। তবে কলকাতার টিম ম্যানেজমেন্ট খুব ভাল। সবাই খুব সাহায্য করেছেন। কর্তারা ভাল না হলে টিম চ্যাম্পিয়ন হয় না। ওঁরাও তো টিমের অঙ্গ।

প্র: প্রথম বছর নেমেই আইএসএল চ্যাম্পিয়ন কলকাতা। সবাই আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
হাবাস: ক্রিসমাসের পাঁচ দিন আগেই ওদের বড়দিনের গিফ্‌ট দিয়েছি। এটাই আমার তৃপ্তি। আমরা পরের পর ড্র করার পরেও সমর্থকেরা যে ভাবে মাঠে এসে গলা আমাদের জন্য ফাটিয়েছেন তাতে আমরা আরও উদ্বুদ্ধ হয়েছি। ক্রিসমাস আর নববর্ষের সময় কলকাতার মানুষ ট্রফি নিয়ে আনন্দ করুন। মাদ্রিদে ক্রিসমাসের ছুটি কাটাতে কাটাতে সব খবর রাখব।

প্র: আপনার পরের কোচিং প্রোগ্রাম কী?
হাবাস: এখন শুধু ট্র্যাভেলিং নিয়ে ভাবছি। মাদ্রিদ পৌঁছতে পৌঁছতে মঙ্গলবার হয়ে যাবে। তার পর এক মাস বিশ্রাম। এর পর আটলেটিকো কী কাজ দেয় দেখি। ছ’মাসের জন্য কাজ চেয়েছি। আবার তো ভারতে আসতে হবে পরের জুলাইয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

isl ratan chakraborty mumbai interview habas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE