Advertisement
E-Paper

শান্তি ও যুদ্ধের অদ্ভুত সহাবস্থানের ডার্বি

ইস্টবেঙ্গল মিডিয়া-রুমে ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’ গানটা বাজিয়ে দিতেই পারতেন উদ্যোক্তারা! ডার্বির আগের দিনের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন শেষে। আপনাদের এই ডার্বিতে মোটিভেশন কী? জানতে চাওয়া হয়েছিল করিম বেঞ্চারিফার কাছে। সবাইকে চমকে দিয়ে মাইকটা টেনে নিলেন আর্মান্দো কোলাসো! “আমি বলে দিচ্ছি।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৯:২২
দ্বৈরথের আগে মৈত্রী। শনিবার শেষ হাসি হাসবেন কোন দু’জন? সাংবাদিক বৈঠকে মেহতাব-কোলাসো ও করিম-শিল্টন। ছবি: উৎপল সরকার।

দ্বৈরথের আগে মৈত্রী। শনিবার শেষ হাসি হাসবেন কোন দু’জন? সাংবাদিক বৈঠকে মেহতাব-কোলাসো ও করিম-শিল্টন। ছবি: উৎপল সরকার।

ইস্টবেঙ্গল মিডিয়া-রুমে ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’ গানটা বাজিয়ে দিতেই পারতেন উদ্যোক্তারা! ডার্বির আগের দিনের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন শেষে।

আপনাদের এই ডার্বিতে মোটিভেশন কী? জানতে চাওয়া হয়েছিল করিম বেঞ্চারিফার কাছে।

সবাইকে চমকে দিয়ে মাইকটা টেনে নিলেন আর্মান্দো কোলাসো! “আমি বলে দিচ্ছি। ওদের এখনও সম্ভাবনা আছে খেতাব জেতার। মোহনবাগান যদি সব ম্যাচ জেতে আর অন্যরা হারে তা হলে তো...” ইস্টবেঙ্গল কোচ কথা শেষ করার আগেই গম্ভীর হয়ে বসে থাকা মোহন কোচের মুখে হাসি। মহাপ্রতিপক্ষ কোচের দিকে তাকিয়ে বললেন, “ও আমার ডিফেন্সিভ স্ক্রিন।”

মিস্টার করিম, আপনি কি একমত? এখনও আই লিগ জেতার সত্যিই সুযোগ আছে? সাংবাদিকদের নাছোড় প্রশ্নে মরক্কান কোচ বাস্তবের জমিতে। “এই ম্যাচে জিতে তিন পয়েন্ট পেলে আমরা লিগ টেবলে আর একটু উপরের দিকে উঠতে পারব। সঙ্গে ডার্বি জেতার গর্ব তো আছেই। তবে ইস্টবেঙ্গল জিতলে ওরা কিন্তু চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে আবার ফিরে আসবে,” করিম এটা বলার সময় তাঁর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন আর্মান্দো। গোয়ায় এক সময়ের তীব্র করিম-বিরোধী মানুষটার গোঁফের নিচে খেলা মুচকি হাসি।

পি কে বনাম অমল দত্তের সেই উত্তপ্ত বাকযুদ্ধের রেশ নেই। নেই সুভাষ বনাম সুব্রতর ঠেস দেওয়া খুনসুটিও। অমল বনাম নইম তর্কযুদ্ধ তাও অতীত।

ঊননব্বই বছরে এসে বাঙালির চিরকালীন আবেগের ডার্বি কি তা হলে নিজস্ব মেজাজ হারাচ্ছে? হারিয়ে ফেলছে রূপ-রস-গন্ধ?

পাড়ার রকে বা চায়ের আড্ডায় এ সব নিয়ে বিতর্ক উঠতেই পারে। সেখানে কেউ বলতেই পারেন, আর্মান্দো-করিমরা ডার্বির মাহাত্ম্যই বোঝেন না। যেটা বাঙালি কোচেরা বোঝেন। অন্য পক্ষ পাল্টা যুক্তি খাড়া করতে পারেন যে, ফুটবল বিশ্বায়নের যুগে বিতর্কের ভয়ে অযথা তর্কে জড়াতে চান না কোনও কোচই। ড্রেসিংরুমে ফিরে একে অন্যকে পিষে ফেলার জন্য শেষ রক্তবিন্দু খরচ করাতেই কোচেদের আগ্রহ বেশি।

তর্কের যে ফলাফলই বেরিয়ে আসুক, ডার্বি কিন্তু পরম্পরা।

এ সি মিলান বনাম ইন্টার মিলান, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বনাম ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, রিয়াল মাদ্রিদ বনাম আটলেটিকো মাদ্রিদসে জন্যই চিরকালীন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। লিগ টেবলের কোথায় কে দাঁড়িয়ে তা এই যুদ্ধে কোনও ফ্যাক্টর হয় না। যেমন হয় না, ইস্ট-মোহন লড়াই।

আই লিগ টেবলে আজ শনিবারের লড়াইটা তাই আট বনাম নয়ের হলেও খামতি নেই উত্তেজনার। আবেগ প্রকাশের পথটা শুধু বদলে গিয়েছে। শুক্রবার সকালে দুই মাঠেই ফুটবলার, কোচের বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্লোগান, জেতার দাবি ছিল। হয়তো সেটা সাত বা আটের দশকের তুলনায় কম। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ফেসবুকে উত্তেজক খেউড়, ব্যাঙ্গাত্মক ছবি বা ছড়া পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই হাজার হাজার ‘লাইক’ পড়ে যাচ্ছে। টুইটারেও নানা মন্তব্য হচ্ছে। বাড়িতে বা অফিসে বসেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ! আর সে জন্যই খেতাব থেকে যত যোজন দূরেই থাকুন, ম্যাচটা জিততে চাইছেন দুই কোচই। তবে দু’রকম লক্ষ্যে।

ডেম্পোর কাছে হেরে পিছিয়ে পড়ার পর আর্মান্দোর কাছে আজ ভেসে ওঠার লড়াই। খেতাবের লড়াইতে টিকে থাকার যুদ্ধ। “আমরাই ফেভারিট। ম্যাচটা জিততে চাই। চিডি-মোগারা গোলের কাছে পৌঁছচ্ছে কিন্তু গোল হচ্ছে না। সেটাই যা সমস্যা,” অকপটে বলে দেন ইস্টবেঙ্গল কোচ।

ট্রফিহীন বাগান কোচের আবার শেষ সুযোগ সদস্য-সমর্থকদের খুশি করার। জিতলে চলতি মরসুমে ডার্বিতে ২-১ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ বাগানের সামনে। “ট্রফি না জিততে পারলেও দুটো ডার্বি-জয় তো সমর্থকদের গৌরবান্বিত করবে,” বলে দেন ভারতে আসার পর প্রথম বার লাল-হলুদ তাঁবুতে পা রাখা করিম।

আর্মান্দো বনাম করিম মানেই চুলচেরা অঙ্কের যুদ্ধ। ট্যাকটিক্সের ঝনঝনানি। নিজের সেরা অস্ত্র প্রয়োগ করে বিপক্ষের ‘মিসাইল’-কে অকেজো করার স্ট্র্যাটেজি। সেটা ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে বের করে এনেছেন দু’জনই। নিজেদের অনুশীলনে। মাঠে শুটিংয়ের কাজে আসা অভিনেতা পরমব্রত-কাঞ্চনরা অবাক হয়ে দেখলেন, কী ভাবে করিম তাঁর তরুণ-ব্রিগেডকে আগুনে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। উইং দিয়ে আক্রমণ, সেটপিসের মারণফাঁদ তৈরি করছেন। অন্য দিকে, দিন পনেরো পর চোট সারিয়ে মাঠে ফেরা উগার চিৎকারে গমগম করে উঠল আর্মান্দোর অনুশীলন। তাঁকে আঠারো জনের দলে রাখলেও প্রথম একাদশে রাখা হচ্ছে না, জানিয়ে দিয়েছেন কোচ। অনুশীলনে গোল-মুখ খোলার উপরই জোর দেওয়া হল বেশি। দুই মাঠেই অনুশীলনে হাজির ক্লাবের শীর্ষ কর্তারা। বাগান কর্তারা আবার তাঁদের ফুটবলারদের বলে দিয়েছেন, “ডার্বির পারফরম্যান্সের উপর পরের বার দলে থাকার ব্যাপারটা নির্ভর করছে।”

দুই কোচ পাশাপাশি বসে পরস্পরকে কথার ‘পিঠ চাপড়ানি’ দিলেও কর্তারা অবশ্য ডার্বির আগে যুদ্ধে ব্যস্ত। ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার রেফারিং নিয়ে সরব হয়েছেন। প্রয়োজনে দিল্লির ফুটবল হাউসের সামনে ধর্নায় বসার হুমকি দিয়েছেন। “শুধু ডেম্পো ম্যাচ নয়, গত পাঁচ বছর ধরেই আমরা খারাপ রেফারিংয়ের শিকার। অভিযোগ জানানোর পর কিছু রেফারিকে অজ্ঞাতবাসে পাঠানো হলেও আসল পরিস্থিতি বদলায়নি। প্রতি বছরই দু’তিন পয়েন্টের জন্য চ্যাম্পিয়ন হচ্ছি না। এর জন্য খারাপ রেফারিং বড় কারণ।” মোহনবাগান অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত আবার তোপ দেগেছেন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। “ইস্টবেঙ্গল মাঠে আমাদের কোচ-অধিনায়ক সাংবাদিক সম্মেলন করতে গিয়ে অসম্মানিত হয়েছেন। তাঁদের চা বা জলও দেওয়া হয়নি।”

কখনও যুদ্ধ, কখনও শান্তিএই অভিনব আবহের ডার্বি জিতবে কে? ইতিহাস বলছে সামান্য হলেও পাল্লা ভারি ইস্টবেঙ্গল কোচের দিকেই। অনুপাতটা সম্ভবত ৬০:৪০ হবে আর্মান্দোর পক্ষে।

আজ টিভিতে
আই লিগে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান।
(টেন অ্যাকশন, বিকেল ৫-০০)

eastbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy