Advertisement
০৪ মে ২০২৪

শেষ দিনে বঙ্গ-ধাঁধা, শ্যাম রাখি না কুল

কেবিসি-র হট সিটে বোধহয় কখনও বসেননি লক্ষ্মীরতন শুক্ল বা মনোজ তিওয়ারি। ভবিষ্যতে কখনও ডাক এলে তাঁদের হয়তো আর অসুবিধা হবে না। রিহার্সালটা তাঁরা যে সেরে ফেললেন বৃহস্পতিবারই। ইডেনে।

বোলিং সাফল্যের এই ছবি কি আজ দেখা যাবে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

বোলিং সাফল্যের এই ছবি কি আজ দেখা যাবে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

রাজীব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

কেবিসি-র হট সিটে বোধহয় কখনও বসেননি লক্ষ্মীরতন শুক্ল বা মনোজ তিওয়ারি। ভবিষ্যতে কখনও ডাক এলে তাঁদের হয়তো আর অসুবিধা হবে না। রিহার্সালটা তাঁরা যে সেরে ফেললেন বৃহস্পতিবারই। ইডেনে।

‘বিগ বি’-র উল্টো দিকে বসে প্রতিযোগীকে বেছে নিতে হয়, আরও মোটা অঙ্কের পুরস্কার চাই? না যা পেয়েছ, তা নিয়েই ঘরের ছেলে ঘরে? বেশি লোভ করতে গিয়ে সেটাও হাতছাড়া হতে পারে। অনেকে ‘নো রিস্ক, নো গেইন’ প্রবাদে বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যাঁরা মনে করেন, ‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’, তাঁরা আর এগোন না।

লক্ষ্মীরতন শুক্লরা সম্ভবত এই শেষ শ্রেণিভুক্ত। না হলে জম্মু-কাশ্মীরের চেয়ে ২৮৮ রানে এগিয়ে থেকেও শেষ দিন সকালে খেলার শুরুতেই ডিক্লেয়ার না করার সিদ্ধান্ত এখনই নিচ্ছেন কেন? আগে তিন পয়েন্ট সুরক্ষিত করে তার পরই ছয়ের লক্ষ্যে দৌড় শুরু করতে চায় বাংলা। কিন্তু তিন পয়েন্ট ‘লক’ করতে গিয়ে যে ছয়ের হাতছানি ভুলতে হতে পারে। তাতে আপত্তি নেই লক্ষ্মী, মনোজদের।

বিপক্ষে মুম্বই, কর্নাটক বা তামিলনাড়ু নয়, অনভিজ্ঞ জম্মু-কাশ্মীর। তা সত্ত্বেও অর্ধেক দিন ঝড়ের গতিতে ব্যাট করে অর্জন করা ২৮৮-র পুঁজিকে ‘সুরক্ষিত’ মনে করতে পারছে না বাংলা! শুক্রবার ম্যাচের শেষ সকালেই যে চ্যালেঞ্জটা ছুড়ে দেবেন না, এ দিন ড্রেসিংরুমে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর দলের সেরা ব্যাটসম্যান মনোজ তিওয়ারি তা পরিষ্কার বলেই দিলেন, “কাল সকালে আমরা ব্যাট করে আরও ৭০-৮০ রান তুলে, তার পর ডিক্লেয়ার করব।”

বাংলা শিবির থেকে মনোজ মারফত আসা বার্তাটা স্পষ্ট। সারা দিনে ৯০ ওভারে ২৮৮ রানের মধ্যে বোলাররা দশটা উইকেট তুলতে পারবেন, এমন আস্থা নেই টিম ম্যানেজমেন্টের। ব্যাটসম্যানদের কাছে ক্রমশ সহজ হয়ে ওঠা পাটা উইকেটে পরভেজ রসুলরা যদি রানটা তুলে দেন, সেই আতঙ্কও রয়েছে শিবিরে। তাই এই সিদ্ধান্ত।

সোজাসুজি ‘শ্যাম রাখি, না কুল’— এই ধাঁধাই এখন ঘুরছে বাংলা শিবিরে।

আসলে এ দিন সাত সকালে পাঁচ ওভারের মধ্যে ঝটপট দু’উইকেট খোয়ানোর পরও কাশ্মীরিদের অষ্টম উইকেট জুটি যে ভাবে বাংলার বোলারদের কালঘাম ছুটিয়ে দিয়ে স্কোরবোর্ডে নব্বইটা রান জুড়ে দেয়, তাতেই থরহরিকম্প বাংলার বোলিং বিভাগ। শেষ পর্যন্ত বনদীপ সিংহ এবং রামদয়ালের এই জুটি ভাঙতে বল হাতে নিতে হয় মনোজ তিওয়ারিকে। কয়েক দিন আগে যাঁকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলার হুমকি দিয়েছিলেন বঙ্গ ক্রিকেটের সর্বময় কর্তা, সেই মনোজ তিওয়ারিই বনদীপকে (৭৩) এলবিডব্লু-র ফাঁদে ফেলে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলে দেন।

উইকেটে ঘূর্ণির সন্ধানে দলের ফুলটাইম স্পিনাররা যখন ক্লান্ত, তখন পার্ট টাইমার মনোজই ম্যাজিক দেখান তাঁর কব্জির মোচড়ে। নিজেই খেলার পর বললেন, “আমি যেহেতু রিস্ট-স্পিনার, তাই এই উইকেট থেকে কিছুটা স্পিন আদায় করে নিতে পেরেছি।” পাশাপাশি একটা ভাল খবরও দিলেন। বললেন, “উইকেটে বল ঘুরতে শুরু করেছে মনে হচ্ছে। আমি ছাড়াও সৌরাশিস, অমিতরাও আজ হালকা টার্ন পেয়েছে। উইকেটে রাফও তৈরি হয়েছে। আশা করি কাল এই রাফগুলোকে কাজে লাগিয়ে ওদের অলআউট করে দিতে পারব।” ৭০-৮০ রান তুলতে যদি ১০-১৫ ওভার লেগে যায়, তা হলে দিনের বাকি ৭৫-৮০ ওভারে দশ উইকেট! অলীক স্বপ্ন নয় তো? মনোজ বলেন, “কেন নয়? আশা করতেই পারি?”

প্রশ্ন হল, বোলারদের উপর যদি এতই আস্থা, তা হলে ওঁদের গোটা দিনটা দিতে আপত্তি কোথায়? মনোজ বললেন, “সাড়ে তিনশোর তফাত না গড়ে ওদের ব্যাট করতে পাঠানোটা ঝুঁকি হয়ে যাবে। এখন এই ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।”

মনোজ নামার আগে বাংলা ব্যাটিংও ঝুঁকি নিল কোথায়? ৪৪ ওভারে অন্তত তিনশোর ব্যবধান তৈরির লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে অরিন্দম দাস ও অভিমন্যু ঈশ্বরন সাড়ে ৩১ ওভারে ১২৬-এর বেশি তুলতে পারেননি। অথচ সোয়া পাঁচের গড়ে রান তোলা দরকার তখন। ইডেনে সেই সময় যে ঝড় ওঠা দরকার ছিল, অবশেষে সেই ঝড় তুললেন মনোজ। তিনি নামার পর শেষ ৭১ বলে ৮৮ রান তুলল বাংলা। যার মধ্যে মনোজের একার অবদান ৫২ (৩৭ বলে)। আধ ডজন চার-সহ এই ইনিংসই বাংলার ইনিংসের নিউক্লিয়াস। যা পরিস্থিতি, শুক্রবার সকালেও এক প্রস্থ ঝড় তুলতে হবে মনোজ-ঋদ্ধিমানকে। তার পর অত্যন্ত কঠিন এক লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নামতে হবে বাংলা বোলারদের।

সম্ভব?

ইডেনের আপাতত ‘শ্রীনগর-লে হাইওয়ে’ বাইশ গজে শেষ দিনে ‘ঘূর্ণি’ঝড় উঠলে বাঁচতে পারে বাংলা। নইলে আরও এগোবে খাদের অতলে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলা ৩৮৭ ও ২১৬-৩ (অভিমন্যু ৬৩, মনোজ ৫২ ব্যাটিং)

জম্মু-কাশ্মীর ৩১৫ (বনদীপ ৭৩, দিন্দা ৩-১০২, মনোজ ২-১৯, অমিত ২-৬৮, সৌরাশিস ২-৪৫)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bengal ranji trophy rajib ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE