Advertisement
E-Paper

শেষ রাতে কোহলির মারে মুম্বই জমজমাট

বিরাট কোহলিই জমিয়ে দিল ওয়ান ডে সিরিজটা। চেন্নাইয়ে বৃহস্পতিবার ভারত ৩৫ রানে জেতার পরে এ বার মুম্বইয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ঠিক সময়ে কেমন জ্বলে উঠল দেখলেন ছেলেটা? এই জন্যই বলে, ওস্তাদের মার শেষ রাতে।

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৫ ০২:০৫
মারমুখী বিরাট। বৃহস্পতিবারের চেন্নাই।

মারমুখী বিরাট। বৃহস্পতিবারের চেন্নাই।

বিরাট কোহলিই জমিয়ে দিল ওয়ান ডে সিরিজটা।

চেন্নাইয়ে বৃহস্পতিবার ভারত ৩৫ রানে জেতার পরে এ বার মুম্বইয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

ঠিক সময়ে কেমন জ্বলে উঠল দেখলেন ছেলেটা? এই জন্যই বলে, ওস্তাদের মার শেষ রাতে।

এত দিন এই বিরাট কোহলিকেই তো খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমরা। ঠিকমতো ফিনিশ করতে পারছিল না। একটা ইনিংস শুরু করলে তা দুর্দান্ত ভাবে শেষ করাটাই ওর সব চেয়ে বড় গুণ। কিন্তু এত দিন সেটাই পাচ্ছিলাম না ওর ব্যাটিংয়ে। যেটা চিপকের ম্যাচে পাওয়া গেল। হয়তো ঠিকমতো মনঃসংযোগ করতে পারছিল না। কিন্তু এ দিন চিপকে ওর সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল। সেই জন্যই এমন একটা স্মরণীয় ইনিংস খেলে দিল। যেমন অসাধারণ স্ট্রোক প্লে, তেমনই দুর্দান্ত টাইমিং আর দুর্ধর্ষ আগ্রাসন। ১৪০ বলে ১৩৮-এর যে-ইনিংসটা খেলল ও, তেমন ইনিংসের জন্যই তো ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রচুর দাম দিয়ে টিকিট কেটে খেলা দেখতে আসেন।

আধ ডজন বাউন্ডারি মেরেছে যেমন, তেমনই পাঁচটা বিশাল মাপের ছয়ও হাঁকিয়েছে। ওর দিনে যে বিরাট কোহলিই সেরা, তা আরও এক বার বুঝিয়ে ছাড়ল আমাদের টেস্ট ক্যাপ্টেন। রাজকোটের ৭৭-এর ইনিংসেই ওর ফর্মে ফেরার ট্রেলারটা দেখেছিলাম। পুরোটা দেখাল বৃহস্পতিবারের চেন্নাই। এ বার নিশ্চয়ই ফের ওর কাছ থেকে প্রতি ম্যাচে সেঞ্চুরির প্রত্যাশা করা হবে। যেমন সচিন তেন্ডুলকরের কাছ থেকেও সব ম্যাচে চাওয়া হতো। আর সেটা না-পারলেই তোলা হবে ফর্ম হারানোর অভিযোগ।

এত দিন ধরে এই চাপটাই ওর মাথায় চেপে বসেছিল। চার দিকে ওকে নিশ্চয়ই ফর্ম হারানোর অভিযোগ শুনতে হচ্ছিল। তাই অ্যারন ফাঙ্গিসোকে লং অনের উপর দিয়ে বিশাল একটা ছয় হাঁকিয়ে ২৩ নম্বর ওয়ান ডে সেঞ্চুরিটা পূর্ণ করার পরে ও-রকম আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া দেখা গেল ওর মধ্যে। এমন প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা যায়, কতটা চাপে ছিল বিরাট। সেই চাপটা কেটে যেতেই ভিতরের জমে থাকা অভিমানটা ফুটে উঠল ওই ভাবে। মুম্বইয়ে শেষ ম্যাচের আগে বিরাটের এই ফর্মে ফেরাটা ভারতের পক্ষে অবশ্যই একটা প্লাস পয়েন্ট। সুরেশ রায়নার রানে ফেরাটাও তেমনই ভাল খবর।

আর এক জনের কথাও না-বললে নয়।

এবি ডে’ভিলিয়ার্স।

যে একা হাতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রায় অসম্ভব জয়ের দিকে নিয়ে চলেই গিয়েছিল বলা যায়। চিপকের টার্নিং উইকেটে দলের অন্য ব্যাটসম্যানেরা যখন একের পর এক উইকেট ছুড়ে দিয়ে চলে গেল, তখন একা এবি-র বুক চিতিয়ে লড়াই করে যাওয়াটাই ওর জাত চিনিয়ে দিল। বুঝিয়ে দিল, কেন ও ওয়ান ডে-র এক নম্বর ব্যাটসম্যান। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল, এবি ক্রিজে থাকলে ম্যাচটা দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেও যেতে পারে। তখন ভারত আর জয়ের মাঝখানে শুধু ও-ই দাঁড়িয়ে ছিল।

বিরাটের সেঞ্চুরিটা যদি বৃহস্পতিবারের ক্রিকেট দর্শকদের কাছে সুস্বাদু মেন কোর্সের সেরা পদ হয়, এবি-র ১১২-র ইনিংসটা অবশ্যই মন ভাল করা ‘ডেজার্ট’।

দুমিনির না-থাকাটা এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে একটা বড় সমস্যা হয়ে উঠেছিল। মর্নি মরকেলের না-থাকাটা বোলিংয়ের ক্ষেত্রে একই রকম সমস্যা। শুনলাম, ওদের দু’জনেরই চোট। রবিবার শেষ ম্যাচেও যদি চোটের জন্য ওরা খেলতে না-পারে, তা হলে কিন্তু ভারত কিছুটা এগিয়ে থেকেই নামবে। তবে ওয়াংখেড়েতে যেমন উইকেট হয়, তেমন উইকেট হলে এবং মর্কেল-দুমিনিদের চোট সারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা পুরো দল নিয়ে নামলে ভারতকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। জানি না কেমন উইকেট তৈরি হয়েছে ওয়াংখেড়েতে। তবে ঘরের মাঠে সিরিজ জিততে হলে যে টার্নিং উইকেট করাই ভাল, তা তো চিপকের ম্যাচেই প্রমাণ হয়ে গেল।

ভারতীয় দলের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, ধোনির ব্যাটিং অর্ডারে উপর দিকে যাওয়া উচিত। আমারও তাতে কোনও আপত্তি নেই। ধোনি ব্যাটিং অর্ডারে উপর দিকে নামুক। কিন্তু তার আগে ওকে অজিঙ্ক রাহানের ব্যাটিং অর্ডারটা ঠিক করতে হবে। রাহানেকে ঠিক জায়গা করে দেওয়ার জন্য ধোনিকে বারবার নিজের জায়গাটা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কোহলির জায়গা যে তিন নম্বরই, চিপকের ম্যাচের পরে এই বিষয়ে নিশ্চয়ই আর কোনও তর্ক হবে না। আবার এটাও বোঝা গিয়েছে যে, রাহানের জায়গা আর যা-ই হোক, ছয়ে নয়। রাজকোটের ম্যাচেই তো দেখা গেল, ছয়ে নেমে ও কতটা ছন্দহীন হয়ে পড়ে। সুরেশ রায়না এত দিন রানে ছিল না। এ বার সে-ও রানে ফিরল। এ বার প্রশ্ন উঠবেই, ধোনি তা হলে নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে উঠিয়ে কোথায় নিয়ে যাবে?

আমার মনে হয়, এই ব্যাপারটা টিম ম্যানেজমেন্টের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। কোনও পাকাপাকি ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করে না-রাখাই ভাল। পরিস্থিতি ও পরিবেশ বুঝে তবেই ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করা উচিত। তাতে এক-একটা ম্যাচে এক-এক রকমের ব্যাটিং অর্ডার হতেই পারে। যেমন বৃহস্পতিবার চিপকে যে-ব্যাটিং অর্ডারটা ছিল, সেটা এই পরিবেশ ও পরিস্থিতির পক্ষে নিখুঁত ব্যাটিং অর্ডার। এই নিয়ে বোধ হয় বেশি হইচই না-করাই ভাল।

এখন শুধু রবিবারের ফাইনাল ফ্রন্টিয়ারের অপেক্ষা। এবং লড়াইটা আবার ভিকে বনাম এবি।

চেন্নাইয়ের স্কোর

ভারত

রোহিত ক দুপ্লেসি বো মরিস ২১

ধবন ক ডিকক বো রাবাদা ৭

কোহলি ক ডিকক বো রাবাদা ১৩৮

রাহানে ক ডিকক বো স্টেন ৪৫

রায়না ক ডে’ভিলিয়ার্স বো স্টেন ৫৩

ধোনি ক ডে’ভিলিয়ার্স বো স্টেন ১৫

হরভজন বো রাবাদা ০

পটেল ন.আ ৪

ভুবনেশ্বর রান আউট ০

অতিরিক্ত ১৬

মোট ৫০ ওভারে ২৯৯-৮।

পতন: ২৮, ৩৫, ১৩৯, ২৬৬, ২৯১, ২৯১, ২৯৯, ২৯৯।

বোলিং: স্টেন ১০-০-৬১-৩, রাবাদা ১০-০-৫৪-৩,

মরিস ৯-০-৫৫-১, ফাঙ্গিসো ৯-০-৫১-০,

তাহির ৯-০-৫৮-০, বেহারদিন ৩-০-১৭-০

দক্ষিণ আফ্রিকা

ডিকক ক রাহানে বো হরভজন ৪৩

আমলা ক ধবন বো শর্মা ৭

দুপ্লেসি ক ধোনি বো পটেল ১৭

ডে’ভিলিয়ার্স ক ধোনি বো ভুবনেশ্বর ১১২

মিলার এলবিডব্লিউ হরভজন ৬

বেহারদিন এলবিডব্লিউ মিশ্র ২২

মরিস রানআউট ৯

ফাঙ্গিসো ক পটেল বো ভুবনেশ্বর ২০

স্টেন ক রাহানে বো ভুবনেশ্বর ৬

রাবাদা ন.আ ৮

তাহির ন.আ ৪

অতিরিক্ত ১০

মোট ৫০ ওভারে ২৬৪-৯।

পতন: ৩৬, ৬৭, ৭৯, ৮৮, ১৪৪, ১৮৫, ২৩৩, ২৫০, ২৫০।

বোলিং: ভুবনেশ্বর ১০-০-৬৮-৩, শর্মা ১০-০-৪৮-১,

হরভজন ১০-০-৫০-২, পটেল ১০-০-৪০-১, মিশ্র ১০-১-৫৫-১।

ছবি: পিটিআই।

abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy