Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
প্রিমিয়ার লিগের রং নীল

সাফল্যের পিছনে ‘ম্যাড ম্যান’-এর ইঞ্জিনিয়ার মাথা

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের রং নীল। তিন বছরের মধ্যে ক্লাবের ইতিহাসে দ্বিতীয় বার ইপিএল চ্যাম্পিয়ন হল ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড যে দিন তাদের ইতিহাসে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলে সবচেয়ে নীচে (সপ্তম) শেষ করে পরের মরসুমে কোনও ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টেই খেলার যোগ্যতা না-পাওয়ার লজ্জায় মুখ পোড়াল (গত মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার অধিকার হারিয়েছিল। এ দিন ইউরোপা লিগ-ও), সে দিনই প্রিমিয়ার লিগ খেতাব ম্যাঞ্চেস্টারের বাইরে যেতে দিল না সিটি।

ইংল্যান্ডের সেরা। রবিবার ওয়েস্ট হ্যামকে হারিয়ে ইপিএল চ্যাম্পিয়ন ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। ছবি: এএফপি।

ইংল্যান্ডের সেরা। রবিবার ওয়েস্ট হ্যামকে হারিয়ে ইপিএল চ্যাম্পিয়ন ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। ছবি: এএফপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০৩:২৬
Share: Save:

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের রং নীল। তিন বছরের মধ্যে ক্লাবের ইতিহাসে দ্বিতীয় বার ইপিএল চ্যাম্পিয়ন হল ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড যে দিন তাদের ইতিহাসে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলে সবচেয়ে নীচে (সপ্তম) শেষ করে পরের মরসুমে কোনও ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টেই খেলার যোগ্যতা না-পাওয়ার লজ্জায় মুখ পোড়াল (গত মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার অধিকার হারিয়েছিল। এ দিন ইউরোপা লিগ-ও), সে দিনই প্রিমিয়ার লিগ খেতাব ম্যাঞ্চেস্টারের বাইরে যেতে দিল না সিটি।

রবিবার ইপিএলের শেষ দিনের অঙ্কটা ছিল এ রকম: নিউক্যাসলকে লিভারপুল হারালে আর ওয়েস্ট হ্যামের কাছে ম্যান সিটি হারলে লিগের রং নীলের বদলে লাল হত। ব্রেন্ডন রর্জাসের লিভারপুল পিছিয়ে পড়েও অ্যাগর ও স্টারিজের গোলে ২-১ জিতলেও ততক্ষণে ম্যান সিটি ঘরের মাঠ এতিহাদে ২-০ জিতে গিয়েছে সমীর নাসরি ও অধিনায়ক ভিনসেন্ট কম্পানির গোলে। শেষ দিন চেলসি আর আর্সেনাল জিতে যথাক্রমে তৃতীয় আর চতুর্থ হল। ২০১৩-১৪ ইপিএলের লড়াই এতটাই জবরদস্ত হয়েছে যে, ১৯৯৬-৯৭-এর পর লিগের প্রথম চার দল চূড়ান্ত হল ১০ পয়েন্টেরও কম ব্যবধানে। চ্যাম্পিয়ন ম্যান সিটির (৩৮ ম্যাচে ৮৬ পয়েন্ট) সঙ্গে চতুর্থ আর্সেনালের (৭৯) তফাত মাত্র সাত পয়েন্টের। প্রথম তিন দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সরাসরি খেলবে। আর্সেনাল খেলবে কোয়ালিফাইং। পঞ্চম এভার্টন ও ষষ্ঠ টটেনহ্যাম ইউরোপা লিগে খেলবে। ইউরোপের দ্বিতীয় টিয়ার-এর টুর্নামেন্টেও টিকিট জুটল না গতবারের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন ম্যান ইউয়ের। ১৯৯০-এর পর এই প্রথম। অ্যালেক্স ফার্গুসনের জুতোয় পা গলিয়ে মরসুম শেষ হওয়ার আগেই বরখাস্ত ডেভিড মোয়েসের এটাই হয়ে থাকল ম্যান ইউ-কে ‘উপহার’। এ দিন শেষ ম্যাচেও অন্তর্বর্তীকালীন কোচ রায়ান গিগসের দল জিততে পারেনি। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ১-১ করে ৩৮ ম্যাচে ৬৪ পয়েন্ট।

অনেকটা সে রকমই ম্যানুয়েল পেলিগ্রিনির ম্যান সিটি-কে খেতাব ‘উপহার’ দিলেন চেলসি কোচ হোসে মোরিনহো। শেষ লগ্নেও লিগ খেতাবের দৌড়ে এগিয়ে থাকা সুয়ারেজ-স্টারিজ-জেরারদের ফিরতি ম্যাচে চেলসি না হারালে ম্যান সিটি খেতাবি লড়াইয়ে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ পেত না। মোরিনহোর কাছে হারের ধাক্কা সামলাতে না পেরে পরের ম্যাচে লিভারপুল এগারো মিনিটের মধ্যে ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে তিন গোল খেয়ে খেতাবের দৌড়ে আরও পিছিয়ে পড়েছিল। যে ম্যাচের পর সুয়ারেজ মাঠেই কেঁদে ফেলেছিলেন।

ম্যান সিটির বেলজিয়ান অধিনায়ক কম্পানির হাতে তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয় বার ইপিএল ট্রফি শোভা পাওয়ার পিছনে আসল কারিগর দলের চিলিয়ান কোচ পেলিগ্রিনি। ২০১১-১২-এ খেতাব যদি শেষ ম্যাচে ইনজুরি টাইমে দু’গোল করে রবের্তো মানচিনির ম্যান সিটি মহানাটকীয় ভাবে গোলপার্থক্যে ম্যান ইউকে পিছনে ফেলে জিতে থাকে, তা হলে এ বার পেলিগ্রিনির দলের খেতাব জয়ও কম নাটকীয় নয়। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ের জন্য (শেষ ১৫ দিন) পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থেকেও খেতাব জিতল পেলিগ্রিনির ম্যান সিটি। যে দলের কোচ থাকেন, তাদের প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক খেলিয়ে গোলের বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা আছে শিক্ষায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এই কোচের। পেলিগ্রিনি কোচ থাকার সময় ভিয়ারিয়ালে ফোরলান-রিকেলমে জুটি প্রচুর গোল করতেন। রিয়াল মাদ্রিদকে কোচিংয়ের সময় রোনাল্ডো-ইগুআইন মিলে গোলের হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। এ বার পেলিগ্রিনির ম্যান সিটি চোটের জন্য আগেরোকে মরসুমে পনেরোটা ম্যাচে পায়নি। অনেক ম্যাচ খেলতে পারেননি কম্পানি ও দাভিদ সিলভা-ও। তা সত্ত্বেও ইয়াইয়া তোরে-জেকো-নেগ্রেদোদের স্কোরিং দক্ষতার সৌজন্যে প্রিমিয়ার লিগে একশোর বেশি গোল করেছে পেলিগ্রিনির দল। ইতিহাসে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। চিলির ঘরোয়া লিগে ইউনিভার্সিদাদ-এ খেলা প্রচণ্ড মারকুটে ডিফেন্ডার পেলিগ্রিনি ফর্মের মধ্যগগনে আচমকা খেলা ছেড়ে দিয়েছিলেন, একটি ম্যাচে টিনএজার জামোরানোর ড্রিবলিংয়ে পরাস্ত হয়ে দলকে গোল খাওয়ানোর তীব্র দুঃখ আর অনুশোচনায়। সেই থেকে ফুটবলমহলে পেলিগ্রিনি-র অন্য নাম ‘ম্যাড ম্যান’। আবার কোচ হিসাবে তাঁর ঠান্ডা মাথার জন্য পেলিগ্রিনিকে বলা হয় ‘দ্য ইঞ্জিনিয়ার’।

আরিগো সাক্কি-কে আদর্শ করে কোচিং করানো ‘ম্যাড ম্যান’-এর ম্যাঞ্চেস্টার সিটি এ বার প্রিমিয়ার লিগে গোলের বন্যায় প্রতিপক্ষদেরও পাগল করে দিয়েছে! না কি নীল জার্সির সাফল্য ‘ইঞ্জিনিয়ার’-এর ঠান্ডা মাথার কল্যাণে! ফুটবলমহলের এখন এটাই আলোচ্য বিষয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

man city epl champion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE