Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সর্বকালের সেরার তালিকায় থাকছে না রোনাল্ডো

বিশ্বকাপ থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিদায়ে আমি অবাক নই। ক্লাব ফুটবলের এক নম্বর ফুটবলারকে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই দেখা যাবে না বলে হাহুতাশেরও কারণ আছে বলে মনে করি না। এই পরিণতি রোনাল্ডোর প্রাপ্য ছিল। হলও। কারণ পর্তুগাল টিমটা রিয়াল মাদ্রিদ নয়। যতই ফিফা ওকে ব্যালন ডি অর দিক, রোনাল্ডোকে আমি কখনই কমপ্লিট ফুটবলার ধরি না। এটা নিয়ে তিনটে বিশ্বকাপ খেলে ফেলল।

বিদায় সিআর৭। বৃহস্পতিবার উৎপল সরকারের তোলা ছবি।

বিদায় সিআর৭। বৃহস্পতিবার উৎপল সরকারের তোলা ছবি।

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৪ ০৩:০৫
Share: Save:

বিশ্বকাপ থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিদায়ে আমি অবাক নই।

ক্লাব ফুটবলের এক নম্বর ফুটবলারকে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই দেখা যাবে না বলে হাহুতাশেরও কারণ আছে বলে মনে করি না। এই পরিণতি রোনাল্ডোর প্রাপ্য ছিল। হলও।

কারণ পর্তুগাল টিমটা রিয়াল মাদ্রিদ নয়। যতই ফিফা ওকে ব্যালন ডি অর দিক, রোনাল্ডোকে আমি কখনই কমপ্লিট ফুটবলার ধরি না। এটা নিয়ে তিনটে বিশ্বকাপ খেলে ফেলল। তিনটেতেই ব্যর্থ। ওর যা বয়স বা ফিটনেস, হয়তো আরও একটা বিশ্বকাপ খেলবে। ওর মাপের আর কোনও ফুটবলার এখন পর্তুগালে নেই। তা সত্ত্বেও কিন্তু বিশ্বের সর্বকালের সেরার তালিকায় পেলে, মারাদোনা, দি’স্টেফানো, জোহান ক্রুয়েফ, মেসিকে রাখলেও, ওকে সচেতন ভাবেই রাখতে রাজি নই।

ড্রিবলিংকে বলা হয়, ‘আলটিমেট ইন ফুটবল’— সেটাই তো তেমন নেই রোনাল্ডোর। ঘানার বিরুদ্ধে ম্যাচটাতেও দেখলাম, একের সঙ্গে এক লড়াইয়ে একবারও বল নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারছে না। রোনাল্ডোর রোগটা ঘানার কোচ আপিয়া

ধরেছেন মনে হল। ওর সামনে দু’জনকে দাঁড় করিয়ে রাখল সারাক্ষণ। আর ওটা করেই রোনাল্ডোকে নিজের খেলাটা খেলতে দিলেন না। অনেকগুলো গোল মিস করল। পোস্টেও মারল একটা। এতেও আমি অবাক নই। কারণ স্ট্রাইকারররা তো গোল নষ্ট করবেই। তার মানে রোনাল্ডো গোলের সামনে পৌঁছচ্ছিল। মেসি চাপে পড়ে গেলে নিজে বল তৈরি করে নিয়ে গোল করে ম্যাচ জেতায়, পেলে-মারাদোনারাও তাই করত। নেইমারও এখন করে। কিন্তু রোনাল্ডো সামনে জায়গা পেলে তবেই দৌড়ে বিপক্ষকে টপকে গোল করার চেষ্টা করে।

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, রোনাল্ডোর চোট। খেলবে কী করে? টিভিতে দেখে কিন্তু আমার মনে হল, চোট তেমন কিছু হয়তো নয়। ফিটনেসও যথেষ্ট ভাল। কিন্তু পর্তুগাল টিমটা এত সাধারণ যে, ওকে বল বাড়ানোর লোক নেই। রোনাল্ডো অনেক ফুটবলারের মাঝখান থেকে বল নিয়ে যেতে পারে না। সতীর্থদের সাহায্য দরকার হয়। বলটা নানি বা উইলিয়াম বা এডারকে দিয়েই ফাঁকা জায়গায় চলে যাচ্ছিল বৃহস্পতিবার রাতেও। মেসি কিন্তু এটা করে না। বিপক্ষ ডিফেন্ডাররা ঘিরে ধরলে ড্রিবল করে বেরিয়ে যায়। নেইমারও সেটা করছে এই বিশ্বকাপে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে বিশ্বকাপে মেসি-নেইমার ওরা আছে, কিন্তু রোনাল্ডো নেই। আমার মনে হয় রোনাল্ডোর দুর্ভাগ্য ও ব্রাজিল বা আর্জেন্তিনায় জন্মায়নি। জন্মালে হয়তো বিশ্বকাপেও রিয়ালের ফর্মে দেখা যেত ওকে।

অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন জাগবে, যে ফুটবলার রিয়াল মাদ্রিদে গত মরসুমেই ৪২ ম্যাচে ৫১ গোল করেছে, তার আগের দুটো মরসুমে গোলের গড় একশো শতাংশের বেশি সেই ফুটবলারই বিশ্বকাপে এসে এ ভাবে মাথা নিচু করে বিদায় নিল কেন? এর কারণ, রিয়ালে ওর পাশে থাকে গ্যারেথ বেল, বেঞ্জিমা, দি মারিয়া, সের্জিও র্যামোস, জাবি আলোন্সোর মতো ফুটবলাররা। রোনাল্ডো তো গোলের বল পাবেই। ওর গোল করার ক্ষমতা নিয়ে বা হেডিং দক্ষতা নিয়ে তো আমার মনে কোনও সংশয় নেই। সেখানে ও রাজা। টিপিক্যাল স্ট্রাইকার বা গোল গেটার বলতে যা বোঝায়— রোনাল্ডো তাই। পাওলো বেন্তোর এই পর্তুগাল টিমটার যা পারফরম্যান্স দেখলাম তাতে রিয়ালের যে কোনও ফুটবলার আনায়াসেই এই দলে সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। বারবার দেখছিলাম রিয়ালের স্টাইলে বল বাড়িয়ে ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বল চাইছে রোনাল্ডো, কিন্তু দু’তিনবার ছাড়া সাহায্য পেল কই? রিয়ালে কিন্তু আশি-নব্বই ভাগ বল পায়। তিনটে ম্যাচ খেলল এ বারের বিশ্বকাপে। একটা গোলের ভাল বল বাড়ানো আর এ দিন ঘানার বিরুদ্ধে একটা গোল— এর বাইরে কিছুই করতে পারেনি রোনাল্ডো। ওর যে ট্রেডমার্ক ফ্রিকিক, তাতেও তো চূড়ান্ত ব্যর্থ। তিন বিশ্বকাপে দু’গোল। সে জন্যই সম্ভবত এ দিন গোলটার পর ওকে উচ্ছ্বসিত হতেও দেখলাম না। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলে কোনও গোলেরই যে আর দাম থাকে না।

বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর। বৃহস্পতিবার। ছবি: উৎপল সরকার।

ব্যালন ডি অর থেকে ব্রাজিল বিশ্বকাপ। ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ জুন। প্রায় সাড়ে চার মাসে মনে হয় একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। প্রমাণ হয়ে গেল ক্লাবে চূড়ান্ত সাফল্য পেলেও, বিশ্বকাপে দেশের জার্সিতে তার কোনও গুরুত্ব নেই।

পতুর্গালকে শেষ ষোলোয় যেতে হলে পাঁচ-ছয় গোলে হারাতে হত ঘানাকে। জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচের ফলের উপর গোলের ওঠা-নামা নির্ভর করছিল। তিন ম্যাচের শেষ ম্যাচে জিতে তাই কোনও লাভ হল না পর্তুগালের। হার-ড্র-জয়— তিনটে স্বাদ নিয়েই রোনাল্ডোকে ফিরে যেতে হল দেশে।

ঘানাকে নিয়ে যতটা প্রত্যাশা ছিল। সেটা ওরা মেটাতে পারল না। উল্টে শুরুতেই নিজেরা গোলে বল পাঠিয়ে সুবিধা করে দিল বিপক্ষকে। টিমটাও কোচ-ফুটবলার ঝগড়ায় ম্যাচের আগে হেরে বসেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fifaworldcup ronaldo chuni goswami
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE