Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হেরেও জিতলেন কোহলি জিতেও হারলেন ক্লার্ক

কে জানত, মহারোমাঞ্চকর টেস্ট ম্যাচ শেষ হয়েও চমক দেওয়া বাকি রেখেছে! সাংবাদিক সম্মেলনে জানা কথা গভীরতম বিষণ্ণতার মধ্যে আবিষ্কার করা যাবে ভারত অধিনায়ককে। অ্যাডিলেড ওভালের শেষ দিনে ঐতিহাসিক সেঞ্চুরির পরেও ম্যাচ হারের আফসোস তিনি শিগগির কাটাবেন কী করে? পোড়খাওয়া লোকেদেরই সামলানো সমস্যা হয়েছে। সুনীল গাওস্কর ওভালের শেষ দিনে এ রকমই ২২১ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন।

গৌতম ভট্টাচার্য
অ্যাডিলেড শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৬
Share: Save:

কে জানত, মহারোমাঞ্চকর টেস্ট ম্যাচ শেষ হয়েও চমক দেওয়া বাকি রেখেছে!

সাংবাদিক সম্মেলনে জানা কথা গভীরতম বিষণ্ণতার মধ্যে আবিষ্কার করা যাবে ভারত অধিনায়ককে। অ্যাডিলেড ওভালের শেষ দিনে ঐতিহাসিক সেঞ্চুরির পরেও ম্যাচ হারের আফসোস তিনি শিগগির কাটাবেন কী করে? পোড়খাওয়া লোকেদেরই সামলানো সমস্যা হয়েছে। সুনীল গাওস্কর ওভালের শেষ দিনে এ রকমই ২২১ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন। তার পরেও টিমের মাত্র ৯ রানে জিততে না পারা তাঁকে ড্রেসিংরুমে দীর্ঘক্ষণ বাক্রুদ্ধ করে রেখেছিল। সচিন তেন্ডুলকর! যাঁর চার নম্বর জায়গাটা এখন ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারে কোহলি নিয়েছেন এবং অফ ফর্মের সময় যাঁর সস্নেহ ঋণ তিনি এ দিন স্বীকার করলেন, তাঁরও তো তীরে এসে তরী ডোবার কাহিনি রয়েছে। চেন্নাইয়ে আক্রম-ওয়াকারের বিরুদ্ধে তিনি অসামান্য ১৩৬ করার পরেও ভারত ১২ রানে হেরে যায়। তেন্ডুলকর ড্রেসিংরুমে এমন কেঁদেছিলেন যে, নিজের পুরস্কার নিতে অবধি আসেননি।

কোহলি এমনিতেই আবেগপ্রবণ। খেলার পর তাঁকে কী চেহারায় দেখব?

তা শেষ দিনে ভারতের ৩৬৪ রান তাড়া করার অবিশ্বাস্য উদ্যোগের মতোই অপ্রত্যাশিত অধিনায়কের প্রতিক্রিয়া। চা বিরতির পরের দু’ঘণ্টায় আট উইকেট চলে গিয়ে ৪৮ রানে ম্যাচ হারাতে তিনি একেবারেই বিমর্ষ নন। বরং খুশি, যে পর্যায়ের পজিটিভ মনোভাবে খেলতে চেয়েছিলেন সেটা করতে পেরেছেন বলে। ভারত অধিনায়কের অসাধারণ উত্তেজক অ্যাডিলেড টেস্ট হারার ব্যাপারে কোনও রকম অনুশোচনা নেই। এমনকী উল্টো দিকে ঋদ্ধি বা শামির মতো যাঁরা চালাতে গিয়ে উইকেট দিয়েছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। “আমিই তো বলেছি ওদের মারতে। ঠুকে ড্রয়ের জন্য খেললে দেড়শো রানে ম্যাচ হারতাম,” সাফ বলে দিলেন। এত কাছে এসে যাওয়া ম্যাচ এ ভাবে হেরে সিরিজে পিছিয়ে পড়ার পরেও মনে হয় না সেই সিকে নাইডুর আমল থেকে কোনও ভারত অধিনায়ক এত অবিচলিত থাকতে পেরেছে বলে।

এত কঠিন ম্যাচ জিতেও কোনও অধিনায়ককে কখনও এত বিমর্ষ দেখায়নি। মাইকেল ক্লার্ককে যেমন দেখাল। “ফিলের জন্য টেস্ট আমাকে খেলতেই হত। কিন্তু আর তো বাকি সিরিজ আমি চোটের জন্য খেলতে পারব না,” বলে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক যোগ করলেন, “আর হয়তো কখনও আমি ক্রিকেট খেলতে পারব না। আমার শরীরের যা অবস্থা।” মিডিয়ারুমে তখন পিন পড়লে শোনা যায় এমন বিষণ্ণতার নিস্তব্ধতা। মুহূর্তে গুলিয়ে গেল ম্যাচটা কি তা হলে ভুল দেখলাম? ক্লার্ক হারলেন, কোহলি জিতলেন?

অ্যাডিলেড মাঠের প্রাচীন অরণ্যপ্রবাদ শনিবারেও বহাল থাকল যে, এখানে শেষ দিনে অদ্ভুত অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা হয়! দক্ষিণ আফ্রিকা বছরখানেক আগে শেষ দিনের খেলা শুরু করে ৭৭-৪ স্কোর নিয়ে। ম্যাচটা ঘিরে একমাত্র কৌতূহল তখন বাকি ছিল— লাঞ্চের আগে শেষ হবে? না কি পরে? ক্রিকেটরেকর্ড দেখায়, ম্যাচটা ড্র হয়ে শেষ হয়েছিল। এখানেও তো ড্র হতে পারত। বা ভারত জিততে পারত।

মুরলী বিজয়-বিরাট কোহলি রেকর্ড পার্টনারশিপের পর ওয়ার্নারদের হারটাই সবচেয়ে সম্ভাব্য প্লট মনে হচ্ছিল। মুরলী ৯৯-এ আউট হওয়ার আগে ভারতের দরকার মাত্র ১২৮। হাতে ১৬৮ বল আর আট উইকেট। দৃশ্যতই ছত্রভঙ্গ দেখাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ানদের। ক্লার্ক আহত হ্যামস্ট্রিং নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। তাঁর বদলি ব্র্যাড হাডিন ভেবেই পাচ্ছেন না কী করবেন? অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ভরসা নাথন লিয়ঁকে ক্রমাগত সুইপ মেরে যাচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা। সেগুলো বেশির ভাগই অফস্টাম্পের বাইরে থেকে। দেখে মনে হচ্ছে নতুন যুগের দ্রাবিড়-লক্ষ্মণরা বুঝি খেলছেন, যাঁদের স্ট্রোকের কূলকিনারা করতে পারছে না অস্ট্রেলিয়া।

গ্যালারি তখন উত্তেজিত। ভারতীয় সমর্থকেরা ওভালকে মিনি-ভারত বানিয়ে ফেলছেন। ঘনঘন দুলছে তেরঙ্গা। ফ্যানরা প্ল্যাকার্ড তুলছে টিভি ক্যামেরার সামনে, কিং কোহলি। মিডিয়া এনক্লোজারে তুমুল সাড়া পড়ে গিয়েছে প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় নক্ষত্রদের মধ্যে। এ তো ভারতের সেই ত্রিনিদাদে ৪০৬ রান তাড়া করে জেতার সমতুল্য হতে যাচ্ছে। কখনও মনে হচ্ছে জিতলে তার চেয়েও কৃতিত্ব বেশি হবে কারণ এক দিনে ৩৬৪ রান সেখানেও করেনি গাওস্কর-বিশ্বনাথের ভারত। হাতে প্রচুর সময় ছিল। পিচের অবস্থাও সেখানে অ্যাডিলেডের মতো এত ন্যক্কারজনক পর্যায়ে নামেনি যে, ক্ষতে বল ফেললেই অফস্পিনার লাট্টুর মতো বল স্পিন করাচ্ছে।

রাহুল দ্রাবিড়কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তো আইপিএলে এই নতুন ছেলেদের সঙ্গে এত মেশেন-টেশেন। সত্যিই কি ভারত রানটা তাড়া করছে বলে আপনার মনে হচ্ছে? না পজিটিভ খেলছে যাতে ড্রয়ের কথা ভেবে কুঁকড়ে থেকে উইকেট না দিয়ে বসে? রাহুল দেখা গেল নিজেও দ্বিধাগ্রস্ত। “আমার মনে হয় না শেষ পর্যন্ত রানটা তাড়া করবে বলে। এটা আফটার অল টেস্ট ম্যাচ। তবে এদের মানসিকতা সত্যিই আলাদা। আমাদের সময়ে ওয়ান ডে-তে ২৬৪ উইনিং স্কোর ছিল। আর এরা একাই ২৬৪ করছে,” বললেন তিনি। চ্যানেল নাইনে তখন ইয়ান হিলি প্রায় আর্তনাদ করছেন, “ওরে যে করে হোক, বিরাটকে বেশি স্ট্রাইক নিতে দিস না। ও একাই নিয়ে চলে যাবে।”

ভারত অধিনায়কের সেঞ্চুরি পূর্ণ হতেই ব্রিসবেনে বসা গ্রেগ চ্যাপেলকে ধরলাম। ভারত নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা হলে ইদানীং জবাবই দিতে চান না গ্রেগ। সচিনের বই বার হওয়ার পর তো আরও গভীর স্পর্শকাতরতায় ভুগছেন। বিরাটের ইনিংস দেখে কিন্তু আজ তিনিও এমন উচ্ছ্বসিত যে, রক্তকরবীর রাজা হয়ে থাকতে চান না। বললেন, “অধিনায়ক হয়েই জোড়া সেঞ্চুরি করার যে বিশ্বরেকর্ড আমার একার গত ঊনচল্লিশ বছর ধরে ছিল, সেটায় ভাগ বসানোটা কৃতিত্ব তো নিশ্চয়ই। কিন্তু আমি মুগ্ধ হচ্ছি ওর পজিটিভ মনোভাবে। এ তো গোটা ড্রেসিংরুম ও একাই চাগিয়ে দেবে।”

সিডনি থেকে ততক্ষণে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কর্তা প্রেসবক্সে ফোন করেছেন— দেখলে তো নাথন লিয়ঁ কেমন ঝোলাচ্ছে? ও জীবনে পারবে না ফিফ্থ ডে উইকেটে বল করতে? যা শুনে শেন ওয়ার্ন থামিয়ে দিয়ে বলছেন, “লিয়ঁ কী করবে। ওর কী দোষ। বিরাট যা ব্যাট করছে বোলার থামাবে কী করে।”

শুনেটুনে তখন মনে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের ম্যাচ ভাগ্য অস্ত যেতে দেখার সঙ্গে কি বিরাট কোহলিকে সেই উষ্ণীষটা পরিয়ে দিচ্ছে যা এত বছর এই চার নম্বরেই খেলা বেঁটে লোকটার জন্য তারা বরাদ্দ রাখত?

শেষ ভারতীয় উইকেট পড়েছে বেলা সাড়ে এগারোটায়। এখন বিকেল চারটে সাত। ইয়ান চ্যাপেল একটু আগে বলছিলেন, ভারতীয় ড্রেসিংরুমের মাছি হতে পারলে ভাল হত এই মুহূর্তে। কারণ ওরা সত্যিই রানটা তাড়া করছে কি না, নিজের কানে শুনতে পেতাম। সেটা অবশ্য চা বিরতির কথা। এখন তিনিও ধরে নিচ্ছেন ভারত ঝাঁপাচ্ছে আর বোধহয় লক্ষ্য ছুঁয়েও ফেলবে। বলে গেলেন, “প্রথম বল থেকে বিরাটের ফুটওয়ার্কটা লক্ষ্য করেছেন— কেমন জড়তাহীন। পা তখনই এ ভাবে পড়বে যদি কারও মাথাটা রান করার জন্য পজিটিভ সঙ্কেত নিয়ে নামে। পায়ের সিগন্যালগুলো মাথা থেকেই আসে।”

নাটকে একটা আশ্চর্য মোড় এনে ঠিক তখনই মুরলী আউট হয়ে গেলেন। একই ওভারে রাহানে। ইনিংসের শুরুতে ধবনের কাঁধে লেগে বল যাওয়াকে কট বিহাইন্ড দিয়েছিলেন আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড। রাহানের ডিফেন্স করাটাও পরিষ্কার প্যাডে লেগে উঠল। জোরালো আবেদনে বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন এ দিকের আম্পায়ার মারায়েস এরাসমাস। হাত তুলে দিলেন। এঁরা এক-এক জন আন্তর্জাতিক প্যানেলের আম্পায়ার কিন্তু টার্নিং ট্র্যাকে শেষ দিনের ব্যাট-প্যাড আওয়াজটা আজও আলাদা করতে অসমর্থ। মাত্র কুড়ি হাজার লোকের চিত্‌কারেই যখন দু’টো আওয়াজ গুলিয়ে যায়, ভারতের বড় বড় স্টেডিয়াম হলে আরও ভুল হবে স্বতঃসিদ্ধ। ভারতীয় বোর্ড অবশ্য তার চেয়েও ভুল করে যাচ্ছে ডিআরএস না মেনে। চলতি সিরিজে ডিআরএস থাকলে অ্যাডিলেড টেস্টের ফলটাই বদলে যায়। আজ ধবন আর রাহানে। প্রথম ইনিংসে ঋদ্ধি আউট হন না। ও দিকে ওয়ার্নার দ্বিতীয় ইনিংসে অনেক আগেই আউট হয়ে যান।

ব্র্যাডম্যানের শহর যেমন নিজের সম্পর্কে ঐতিহাসিক অনিশ্চয়তার অরণ্যপ্রবাদ ফের প্রমাণ করে গেল। তেমনই ভারতীয় মিডল অর্ডারের একাংশ আর টেলএন্ডাররা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে প্রমাণ দিল তারাও অ্যাডিলেড মাঠের মতোই। ভারত অসাধারণ জয় থেকে থমকে যাক, হারার মতোও তো আদৌ খেলেনি। বাংলার দুই প্রতিনিধি খুব জরুরি ভূমিকা নিতে পারতেন, অথচ দু’জনেই বাজে উইকেট দিলেন। শামি গেলেন দুমদাম লিফট করতে গিয়ে। তা-ও তো তিনি বোলার। ঋদ্ধির ভাগ্য তাঁকে এত দিন বসিয়ে রাখার পর নায়ক বনে যাওয়ার কবিত্বের বিচার দিচ্ছিল। কিন্তু স্টেপআউট করে একটা জঘন্য শট খেলতে গিয়ে ভাগ্যকে নিজেই উড়িয়ে দিলেন। লিয়ঁ-র ওই ওভারে ১৪ রান উঠেই গেছিল। উল্টো দিকে কোহলি। ঝুঁকি না নিয়েও ম্যাচটা বেরিয়ে যেত। বাকি ক্রিকেটজীবনে অ্যাডিলেডের আফসোস হয়তো ঋদ্ধিকে তাড়া করে বেড়াবে।

চার দিকে উইকেট পড়ার প্লাবনে এ বার বিরাট-রাজও খসে গেলেন। প্রচণ্ড পুল মারতে গেছিলেন। ডিপ মিড উইকেটে ঝাঁপিয়ে পড়ে মিচেল মার্শ ক্যাচটা তুললেন।

মর্মস্পর্শী ছবি তখন উইকেটের ওপর। বিরাট যন্ত্রণায় ঝুঁকে পড়েছেন। দু’মিনিট মতো ও ভাবেই রইলেন। সঙ্গে নবাগত কর্ণ শর্মা। তিনি কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। নিজেই জীবনের প্রথম ম্যাচ খেলছেন। অধিনায়ককে সান্ত্বনা দেন কী করে? ওই ভাবে বসে থেকে ভারত অধিনায়ক এ বার অবসন্নের মতো হাঁটা শুরু করলেন প্যাভিলিয়নে। গোটা মাঠ স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিচ্ছে। চতুর্থ ইনিংসে ১৭৫ বলে এমন ১৪১ ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে খেলা হয়েছে কি না মনে করতে পারলাম না। আর ব্যাট না তুলে ফিরে যাওয়াটাও কী ট্র্যাজিক!

খেলার পর বিরাট বলে গেলেন, ছেলেরা যে ভাবে ক্রিকেট খেলেছে তাতে তিনি অসম্ভব তৃপ্ত। হার তো কী। মনোভাবটাই আসল। যার জন্য তিনি গর্বিত। ম্যাচ রিপোর্টের শেষ লাইনে পৌঁছে অ্যাডিলেড মাঠের মধ্যিখানে এই রাত ন’টাতেও একদল পুরুষকে হাডল করে প্রচণ্ড চিত্‌কার করতে শুনছি। এর পর গানটা শুনে বোঝা গেল এটা অস্ট্রেলিয়ান টিম। দূর থেকেও বোঝা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি নাচছেন ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে সেরা ঘোষিত হওয়া নাথন লিয়ঁ। আনন্দে এত জোর এঁরা চিত্‌কার করছেন আর গাইছেন যে কাজ করা সম্ভব নয়। বড়জোর কেউ ভিডিওয় আনন্দ-উত্‌সবটা তুলতে পারে।

মাইকেল ক্লার্ক সিরিজ থেকে বাইরে, তার পরেও অস্ট্রেলীয়দের জয়োচ্ছ্বাসটা দেখে মনে হল কোহলির দেখা উচিত ছিল। তা হলে হয়তো তাঁর মনে হত চিত্তাকর্ষক ভঙ্গিটঙ্গি ঠিক আছে। মহাকাব্যিক ইনিংসের পর শেষ পাতের ট্র্যাজেডিও খুব সত্যি কথা।

কিন্তু দিনের শেষে সরল সত্য একটাই। সিরিজে ভারতের সবচেয়ে পছন্দের সারফেসে হেরে তারা ০-১ পিছিয়ে থাকল!

গ্রেগ চ্যাপেল: বিরাটকে কী বলি? অভিনন্দন তো নিশ্চয়ই। এত বছর ধরে আমার ধরে রাখা একটা কীর্তিতে ও আজ শরিক হল। যে ভঙ্গিতে দ্বিতীয় ইনিংসের সেঞ্চুরিটা করতে দেখলাম, সেটা অসামান্য। টিভিতে খেলা দেখতে বসেও দেখতে পাচ্ছি ওর ভাল খেলতে চাওয়ার সংকল্প কী ঋজু। মন ভরে যাওয়ার মতো! ও ক্যাপ্টেন থাকুক বা না, এই অ্যাটিটিউড টিমকে জাগিয়ে রাখবে। ওয়েল ডান বিরাট!

ডিন জোন্স: আমার পূর্বাভাস ছিল ড্র হবে। অবিশ্বাস্য যে ভাবে খেলাটা চা-বিরতির পর একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেল।

টম মুডি: কী বলছিলাম বিরাট-মুরলী যখন ক্রিজে থেকে টি ব্রেকে ফিরছিল? অস্ট্রেলিয়ার জেতার চান্স শতকরা চল্লিশ ভাগ। ড্র তিরিশ। ভারতের জেতার চান্স তিরিশ। জানতাম একটা উইকেট পড়লেই চাপের ঢাকনাটা হাঁ করে খুলে যাবে। ঠিক তাই হল দেখুন!

শেন ওয়ার্ন: অনবদ্য খেলেছে বিরাট। নাথন লিয়ঁ শেষ দিনে কেরামতি দেখাতে বারবার ব্যর্থ হয়ে কত কথা বেচারি শুনেছে। আজ ওর দিন ছিল। তবে একই সঙ্গে আমি বলব ভারতের নিজেদের দিকেও আঙুল তোলা উচিত। ডিআরএস ওরা সিরিজে মেনে নিলে দুটো আউট আজ ওরা নটআউট পায়।

মাইকেল ক্লার্ক: সচিনের ব্যাটিং টিভিতে দেখে ভাবতাম, উফ দেখতে কী দারুণ লাগে! তার পর মাঠে দাঁড়িয়ে যখন ওই ব্যাটিংটাই দেখতাম, মনে হত কী অসহ্য রে বাবা! এ কখন আউট হবে? আজ বিরাটকে দেখে তা-ই মনে হচ্ছিল। তুমি বাবা টিভিতেই ভাল। মাঠে তুমি যতক্ষণ থাকবে, জ্বালাবে। তবে বাকি টেস্ট সিরিজ তো আমি বিরাটকে টিভিতেই দেখব। কারণ সিরিজে আমার খেলার আর কোনও চান্স নেই।

কোহলি ও কাহিনি

• দ্বিতীয় ক্রিকেটার যিনি অধিনায়ক হিসাবে অভিষেক টেস্টের দু’ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন। প্রথম জন গ্রেগ চ্যাপেল।

• ৫৩ বছর বাদে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে একই টেস্টের দু’ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন কোনও বিদেশি ব্যাটসম্যান। শেষ করেছিলেন রোহন কানহাই।

• অধিনায়ক হিসাবে অভিষেক টেস্টে ভারতের হয়ে সর্বাধিক রান (২৫৬)। ভাঙলেন বিজয় হাজারের ১৬৪ রানের রেকর্ড।

• অধিনায়ক হিসাবে ২৫৬ রান অভিষেকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ শোয়েব মালিকের (২৭০)।

• সবর্কনিষ্ঠ ক্যাপ্টেন (২৬ বছর ৩৮ দিন) হিসাবে একই টেস্টে দু’ইনিংসে সেঞ্চুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gautam bhattacharya Virat Kohli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE