কাঁধে চেপেও শেষরক্ষা হল না।
চিন্নাস্বামীতে যুবরাজ সিংহ-র অবিশ্বাস্য ব্যাটিং দেখার পর মনে হয়, দেশের ক্রিকেটমহলে ওকে নিয়ে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন উঠে পড়বে রবিবার রাতে।
ভিন্টেজ যুবরাজ সিংহ কি ফিরে এল? ও কি পারবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে প্লে অফে নিয়ে যেতে? নাকি এটা স্রেফ একটা ম্যাচের ব্যাপার? পরের ম্যাচ থেকেই আবার যুবরাজকে আউট অব ফর্ম দেখাতে শুরু করবে?
রবিবারের যুবরাজকে দেখে মনে হচ্ছে, ও আবার ফিরে এল। তবে দলের জন্য সম্ভবত একটু দেরিই হয়ে গেল। যুবরাজের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সও (৩৮ বলে ৮৩, ৪-৩৫) এ দিন জেতাতে পারল না বেঙ্গালুরুকে। রাজস্থান রয়্যালসের দুই অস্ট্রেলীয় স্মিথ (২১ বলে ৪৮) এবং ফকনার (১৭ বলে ৪১) শেষ চার ওভারে ৬৪ রান তুলে ম্যাচ জিতিয়ে দিল দলকে। আর ন’ ম্যাচে ছ’টায় হেরে বেঙ্গালুরু প্রায় বিদায়ের মুখে। অন্য দিকে রাজস্থান ৮ ম্যাচে ৫টা জিতে প্রায় প্লে-অফে।
তবে এই হারের পরেও যুবরাজের পারফরম্যান্সকে কুর্নিশ না করে উপায় নেই। বাকি পাঁচটা ম্যাচেও আমি কিন্তু যুবরাজের ব্যাটে রিপিট টেলিকাস্ট দেখার আশা করছি।
কারণ? কারণটা নিখাদ ক্রিকেটীয়। এক জন ব্যাটসম্যানকে মাপতে গেলে কয়েকটা ফ্যাক্টরকে মাথায় রাখতে হয়। যেমন, ফুটওয়ার্ক, টাইমিং, শরীরের ভারসাম্য, মানসিকতা। এবং এর সব ক’টাতেই যুবরাজকে দশে নয় দিতেই হবে।
দেখুন, রাজস্থান রয়্যালসের বোলিং কিন্তু মোটেও খারাপ ছিল না। এটা ঠিক যে, পায়ের গোড়ায় কয়েকটা বল পেয়ে যাওয়ায় ওর সেট হতে সুবিধে হয়েছে। বেঙ্গালুরুর পিচটাও ব্যাটিংয়ের পক্ষে আদর্শ। কিন্তু পরে কেন্ রিচার্ডসন যুবিকে শর্ট করতে ছাড়েনি। শেন ওয়াটসন ওকে অফ স্টাম্পের বাইরে বাইরে বল করে আটকাতে চেয়েছে। কিন্তু কোনও প্ল্যানিংয়েই যুবিকে এ দিন আটকানো সম্ভব হয়নি। যে ব্যাপারগুলো তিন-চার বছর আগের যুবরাজের ক্ষেত্রে দেখতাম। তখন ও ফর্মে থাকলে, বিশ্বের যে কোনও বোলিংকে ছিঁড়ে ফেলতে পারত।
রবিবার বহু দিন পর আবার সেই যুবরাজকে ফিরে আসতে দেখলাম। পায়ের মুভমেন্ট এ দিন এত ভাল দেখাল যে, দেখে কে বলবে এই একই লোক এত দিন আইপিএলে ফর্ম হাতড়াচ্ছিল? ওয়াটসন ওকে অফের বাইরে করে আটকানোর চেষ্টা করছে দেখে অফস্টাম্প গার্ড নিয়ে নিল! লেগস্টাম্প খুলে রেখে অবিশ্বাস্য বডি ব্যালান্সে ওয়াইড লাইনের উপর পড়া ওয়াটসনের বল মাঠের বাইরে ফেলে দিল! এবি ডে’ভিলিয়ার্সের ইম্প্রোভাইজেশন নিয়ে এত কথা হয়। অফস্টাম্পের বাইরের বলকে স্কুপ করে ফাইন লেগ দিয়ে এবি-র ফেলে দেওয়া মুগ্ধ হয়ে দেখি আমরা। কিন্তু যুবরাজ এ দিন যেটা করল, সেটা এবি’-র ইম্প্রোভাইজেশনের ঠিক উল্টোটা। অফস্টাম্প গার্ড নিয়ে অফের বহু দূরের বলকে অফ দিয়েই বাউন্ডারির বাইরে ফেলে দিল। ওয়াটসন যুবিকে দেখে একসময় এত কেঁপে গেল যে, বাইরে করতে গিয়ে পরপর ওয়াইড করতে শুরু করে দিল। ডে’ভিলিয়ার্সের মতো ব্যাটসম্যানকে যুবির ফর্মের সামনে সাধারণ গড়পড়তা ক্রিকেটার দেখাল! পাশাপাশি অসাধারণ টাইমিং তো ছিলই। স্পিনারদের স্টেপ আউট করে গ্যালারিতে ফেলে দেওয়ার মধ্যে দিয়েই যা প্রমাণিত।
সবচেয়ে বড় কথা, যুবির ম্যাচ সিচুয়েশন সামলে দেওয়া। ৪০-৩ থেকে কাউকে স্কোর একা ১৯০-তে নিয়ে যেতে হলে যথেষ্ট মানসিক কাঠিন্যের দরকার। সেখানে আবার কয়েকটা ওভারের মধ্যে কোহলি, গেইল— সবাই আউট। যুবরাজ সেখানে প্রথম ১৮ বলে করল ৪০। তার পর সব মিলিয়ে সাতটা বাউন্ডারি আর সাতটা ওভার বাউন্ডারি মেরে এমন জায়গায় ম্যাচটাকে পৌঁছে দিল যে কাজটা প্রবল কঠিন হয়ে গেল রাজস্থানের। বল করতে এসে আবার চার উইকেট তুলে নিল। যদিও শেষে লাভ হল না, তবু বলব, চোদ্দো কোটির পারফরম্যান্স একেই বলে!
দল বিদায়ের মুখে দাঁড়িয়ে থাকলেও পরের ম্যাচগুলোতে যুবরাজ নিজে আত্মবিশ্বাসের চূড়োয় বসে থাকবে। যুবরাজ ভবিষ্যতে আবার ভারতীয় দলে ঢুকবে কি না জানি না। তার জন্য ধারাবাহিক ভাবে এমন খেলতে হবে ওকে। কিন্তু রবিবার চিন্নাস্বামীর যুবি, কটকের গম্ভীর, সহবাগকে দেখে একটা কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিমে ওরা ব্রাত্য হতে পারে। কিন্তু সহবাগ-যুবিরা এখনও বেঁচে আছে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ১৯০-৫।
রাজস্থান রয়্যালস ১৮.৫ ওভারে ১৯১-৫।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy