বিতর্ক সত্ত্বেও অধিনায়ক কিন্তু ফুরফুরে মেজাজে।
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে শনিবার সকালে ঢোকার মুখেই দেখা হয়ে গেল টিম ইন্ডিয়ার প্রশাসনিক ম্যানেজার ব্রিজেশ পটেলের সঙ্গে। ব্রিজেশ পদমর্যাদাবলে এই টিমের অধ্যক্ষ। এমনকী ধোনিরও মাথার ওপরে। টিম ঘিরে যা কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, তাঁকে এড়িয়ে সম্ভব নয়। সুতরাং তাঁকেই দেখা হওয়ামাত্র জিজ্ঞেস করলাম, কারও পদত্যাগ জমা পড়েছে?
ব্রিজেশ একটা বিরক্তিভরা চাউনি দিলেন। বললেন, “কীসের পদত্যাগ?” সে কী, তিনি জানেন না ইন্ডিয়া সিমেন্টসের সঙ্গে যুক্ত থাকা কর্মীরা ভারতীয় দলের সঙ্গে থাকতে পারবেন না? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো ভারতীয় দল থেকে অন্তত লজিস্টিকস ম্যানেজার সতীশের এখনই পদত্যাগ করার কথা। তিনি ইন্ডিয়া সিমেন্টসের কর্মচারী। মিডিয়া ম্যানেজার আরএন বাবা যতই বলুন তাঁর এই সংস্থার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক নেই, সতীশ তো আর অগ্রাহ্য করতে পারবেন না!
চূড়ান্ত অবাক করে দিয়ে ব্রিজেশ বললেন, “না, এমন কিছু জানি না।” বললাম, সে কী এ তো কোর্টের রায়ে পরিষ্কার বলা আছে। এক্ষুণি ভারত থেকে জেনে আসছি। ব্রিজেশ বললেন, “তা হলে উত্তরটা ভারতেই জিজ্ঞেস করুন।” শনিবার রাত পর্যন্ত গোপন কোনও পদত্যাগপত্র জমা পড়লে অন্য কথা। নইলে সার্বিক ভাবে সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশের কোনও প্রতিফলন নেই ভারতীয় ক্রিকেটে। এত বড় ঘটনার ছত্রিশ ঘণ্টা পরেও ভাবখানা হল, ন যযৌ ন তস্থৌ।
সকাল থেকে গুজব রটে গিয়েছিল, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি সিএসকে অধিনায়কত্ব এবং ইন্ডিয়া সিমেন্টসের ভাইস প্রেসিডেন্ট, দু’টো পদ থেকেই সরে দাঁড়াতে পারেন। সন্ধেবেলা আর একপ্রস্ত উত্তেজনা। ধোনির ম্যানেজার কাম এজেন্টের ওপর সর্বভারতীয় চ্যানেলের স্টিং অপারেশন হয়েছে জানার সঙ্গে সঙ্গে কৌতূহলী উত্তাপ আরও বাড়তে থাকে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অবধি দুপুরে ‘এবিপি আনন্দ’র শো করার ফাঁকে জানতে চাইলেন, ব্যাপারটা কী?
কোহলিকে নিয়ে প্র্যাকটিসে ‘ক্যাপটেন-কুল’। শনিবার ।
রাতেও অরুণ পাণ্ডে দেখা গেল স্টিং-এর শিকার হয়ে খানিকটা বোমকে বসে রয়েছেন। বললেন, “নর্ম্যাল কথা বলতে এল। ছেলেটাকে দু-তিন বছর ধরে চিনি। তার পর দেখছি গোপন ক্যামেরা। কী দেখাবে কে জানে?” পাণ্ডে মনে হল ধোনির বিরুদ্ধে গত ক’দিনের নেগেটিভ প্রচার নিয়ে খুব ঘেঁটে আছেন। বললেনও, “এমএস খুব দুঃখ পেয়েছে। কিন্তু ওর মন এত শক্ত যে, এই সব আক্রমণও ওকে টলাতে পারবে না।” পাণ্ডে আনন্দবাজারকে আরও বললেন, “কীসের নিরাপত্তা শ্রীনি দেন বলে এত অন্যায় কথা হচ্ছে? আমরা এত আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে গেলাম? এমএসের যা রেকর্ড, ডালমিয়া বা পওয়ার বোর্ড প্রধান হলেও ওকে একই রকম সমাদর করতেন।”
শ্রীনি কেলেঙ্কারির মেগা সিরিয়ালের অন্য দিনের মতোই লড়াইটা থেকে গেল ভারতীয় মিডিয়া বনাম বোর্ড কর্তা। এত বড় ঘটনার ছত্রিশ ঘণ্টা বাদেও বোর্ড সচিব কার্যনির্বাহী কমিটির কোনও সভা ডাকতে উদ্যোগী হলেন না। যেটা চরম বিস্ময়কর। সদস্যরা অনেকেই ভেবেছিলেন, অন্তত এ দিন ফোন আসবে। কিন্তু আসেনি। দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যে সভা ডেকে মনোভাব বোঝার গুরুত্বের কথা বললেও কে শোনে কার কথা। নির্বিকার, অনুৎসাহী থেকে গেল বোর্ডের প্রশাসনিক টিম। এক কর্তা ব্যাখ্যা করছিলেন, “এখনই গরম গরম সভা ডাকলে শ্রীনির বিরুদ্ধে যেতে পারে। তাই ব্যাপারটাকে একটু জুড়িয়ে দিয়ে ওয়ার্কিং কমিটি ডাকা হবে।” কিন্তু জুড়িয়ে যাওয়ার সময়সীমা কত দিন, কেউ জানে না। শুধু অনেকেরই এই ঔদ্ধত্য বিস্ময়কর লাগছে। এ তো দেশের সর্বোচ্চ বিচারব্যবস্থাকে এক রকম বুড়ো আঙুল দেখানো। আর এর পরেও মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের কোনও চেষ্টা করেনি বোর্ড। বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেলকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। প্রচারের দায়িত্বে থাকা দেবেন্দ্র প্রভুদেশাইকে মুম্বইয়ে ফোন করা হলে তিনি বললেন, ‘‘বিজ্ঞপ্তি-টিজ্ঞপ্তি দিতে হবে বলে শুনিনি।”
ও দিকে দুবাই থেকে পাঠানো একটা মেল বলছে, সুনীল গাওস্কর আইপিএল নিয়ে তাঁর প্রথম বৈঠক সেরে ফেলেছেন। কাজও যে সন্তোষজনক ভাবে এগোচ্ছে, সেটা মেল-এ বলা আছে। কোর্ট বলেছিল, আইপিএল সিইও সুন্দর রামনকে রাখা হবে কি না, সেটা গাওস্কর ঠিক করবেন। যেহেতু রামন ইন্ডিয়া সিমেন্টসের কর্মচারী। শনিবার অবধি পরিষ্কার ইঙ্গিত, গাওস্কর তাঁকে রেখে দেবেন। কিন্তু বাকিদের তিনি চাপ দিচ্ছেন না কেন? নাকি দেবেন আগামী ক’দিনে?
এরই মধ্যে সুন্দরকে সরাতে না পারলেও শ্রীনির বিরোধীপক্ষ শিবলাল যাদবকে আক্রমণ করবে ঠিক করছে। তাঁরা স্থির করেছেন, শিবলালের বিরুদ্ধে যে ফৌজদারি মামলায় এখনও অভিযোগ পেশ করা রয়েছে, সেই প্রসঙ্গ সুপ্রিম কোর্টে ১৬ এপ্রিল তুলবেন। এক কথায়, গাওস্করের পরে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে শিবলাল তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য নন।
মেগা সিরিয়াল যে আরও চলবে এটাই ভরসা দিচ্ছে। ন যযৌ ন তস্থৌ রোজকারের জন্য নয়!
ছবি: এএফপি
আজ টি-২০ বিশ্বকাপে
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া (সন্ধে ৭-০০)
পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশ (দুপুর ৩-০০)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy