মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে পাঠানো হয় অর্থমন্ত্রীকে।
অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে?
অর্থমন্ত্রী নন। অর্থ দফতরের সচিব নন। দিল্লিতে নিযুক্ত রাজ্যের রেসিডেন্ট কমিশনারও নন। তা হলে? সেখানে গেলেন রেসিডেন্ট কমিশনারেরও অধস্তন এক অফিসার! যিনি আদতে আবার একজন আইপিএস অফিসার!
গত সপ্তাহের শেষে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আর্থিক সংস্কারের কাজে বাধা দেওয়ার জন্য তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন। জেটলির সেই বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল তৃণমূল। তার পরে আজ জেটলির সঙ্গে সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর বৈঠকে গরহাজির রইলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
জেটলির অভিযোগ ছিল, সারদা কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গিয়ে নজর ঘোরানোর জন্য এখন সংস্কারের কাজে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল। এর পরে জেটলির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সাংসদরা। পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি নিয়েও জেটলির সঙ্গে অমিতের মতবিরোধ তৈরি হয়।
কেন্দ্র-রাজ্য এই বিরোধের আবহে আজ বাজেট প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য রাজ্যগুলির অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেটলি। কিন্তু তাতে যোগ দেননি অমিত। এই পর্যায়ের বৈঠকে মন্ত্রী না গেলে সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবকে পাঠানো হয়। কিন্তু অর্থসচিব এইচ কে দ্বিবেদী যাননি। যাননি দিল্লিতে নিযুক্ত রাজ্যের রেসিডেন্ট কমিশনার আর ডি মিনা, তাঁর দফতরের অন্যতম আইএএস অতনু পুরকায়স্থও। তা হলে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করলেন কে? ওই বৈঠকে পাঠানো হয় এক আইপিএস অফিসারকে! তিনি রেসিডেন্ট কমিশনার অফিসের ওএসডি (অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি) রাজেশ কুমার। যে হেতু অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক, তাই এই আলোচনায় কথা বলতে দেওয়া হয়নি ওই আইপিএস অফিসারকে। তিনি রাজ্যের দাবি সম্বলিত একটি নোট পেশ করেন। সঙ্গে জেটলিকে লেখা অমিত মিত্রর চিঠি। যাতে ‘অনিবার্য পরিস্থিতি’-র জন্য বৈঠকে যোগ দিতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন অমিতবাবু।
কী সেই অনিবার্য পরিস্থিতি? নবান্নের অর্থ দফতরের এক মুখপাত্রের বক্তব্য, ৭ জানুয়ারি থেকে কলকাতায় বিশ্ব বাংলা আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলন বসছে। শিল্পমন্ত্রী হিসেবে অমিত মিত্র সেই সম্মেলনের প্রধান আয়োজক। তার প্রস্তুতিতে তিনি এতটাই ব্যস্ত যে দিল্লি যাওয়ার সময় পাননি। তা হলে অর্থসচিব গেলেন না কেন? জানা গিয়েছে, তাঁর শরীর খারাপ। দিল্লির রেসিডেন্ট কমিশনার? তিনি ছুটিতে ছিলেন। অগত্যা ওই আইপিএস অফিসারকে পাঠানো হয়!
তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, অমিতবাবু চিঠিতে যে ‘অনিবার্য পরিস্থিতি’র কথা বলেছেন, তা হল আদতে সংঘাতের আবহ। সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই সৃঞ্জয় বসু ও মদন মিত্রকে গ্রেফতারের পরেই বিজেপি তথা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মমতা। রাজ্যসভায় বিমায় বিদেশি লগ্নি ও কয়লা খনি বণ্টন সংক্রান্ত বিলের বিরোধিতায় বড় ভূমিকা নিয়েছে তৃণমূল। যার জেরে ওই দু’টি বিল পাশ করাতে না পেরে দু’টি ক্ষেত্রেই কেন্দ্রকে অর্ডিন্যান্স আনতে হয়েছে। আটকে গিয়েছে আরও একাধিক বিল। এর পরেই তৃণমূলকে নিশানা করেন জেটলি। পাল্টা হিসেবে জেটলির বিরুদ্ধে গলায় পোস্টার ঝুলিয়ে সংসদে গাঁধীমূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের সাংসদরা।
রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি জিএসটি চালু করা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধও অব্যাহত। কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর বাবদ রাজ্য ৩৬২১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। কিন্তু রাজ্যের দাবি মেনে এই টাকা এক কিস্তিতে দিয়ে দিতে নারাজ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। অমিতের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিয়ে বাছাই করা কিছু রাজ্যের অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে গড়া কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে জিএসটি-র রূপরেখা চূড়ান্ত করেছেন জেটলি। যা শুনে জেটলির পাল্টা দাবি, ওই কমিটিতে কে থাকবেন, তা তিনি ঠিক করেননি। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরাই ঠিক করেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, “কেউ যদি বিমান ধরার তাড়ায় বৈঠকে শেষ পর্যন্ত না থাকেন, পরে দাবি করেন, আমাকে রাখা হয়নি, তা হলে আমার কিছু করার নেই!”
মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সাত মাস কেটে গেলেও মমতা একবারও দিল্লি এসে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেননি। শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি ভবনে এক নৈশভোজে মোদী, মমতার দেখা হয়। দু’জনে কুশল বিনিময়ও করেন। কিন্তু তাতে যে সমস্যা মিটছে না, আজকের বৈঠকে অমিতের না যাওয়া এবং নিচুতলার একজন অফিসারকে পাঠানো তারই উদাহরণ বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতারা। যদিও দলেরই অনেকের বক্তব্য, মমতা সংঘাতের পথে না গিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা করলে রাজ্যেরই লাভ।
আজকের বৈঠকে তিনটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং ১৩টি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হাজির ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মতো এত অধস্তন অফিসারকে অন্য কোনও রাজ্য পাঠায়নি বলেই অর্থ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য। আজও জেটলি অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ অবশ্য কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়েই সরব। তৃণমূলের বক্তব্য, আগে এই ধরনের বৈঠকে বহু বার রাজ্যের ঋণের বোঝার কথা বলে সুদ মকুবের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। ঋণ মকুব, জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ বাদ দিলে রাজ্যের সব থেকে বড় দাবি, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বকেয়া ২৫০০ কোটি টাকা। আজ রাজ্যের তরফে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ১৪৭৫ কোটি টাকা, মাওবাদী অধ্যুষিত জেলা পিছু ৫০ কোটি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের জন্য অনুন্নত এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে সাহায্য,মুড়িগঙ্গার উপর লট এইট থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত সেতু তৈরির জন্য ৭৮০ কোটি টাকা এবং ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের মঞ্জুর করা অর্থ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy