Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অভিষেকের ‘ক্লাসে’ জোট যুযুধানেরও

ক্লাসঘরে দুষ্টু বলে যে সমস্ত পড়ুয়ার খ্যাতি, স্কুলে পরিদর্শক এলে তারাও ভাজা মাছ উল্টে খেতে না জানার মতো মুখ করে বসে থাকে। সে রকম ভাবেই গোষ্ঠী কোন্দল সাময়িক ধামাচাপা দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভায় হাজিরা দিলেন ইন্দাসের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

ইন্দাসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার।

ইন্দাসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার।

দেবব্রত দাস
ইন্দাস শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:২৭
Share: Save:

ক্লাসঘরে দুষ্টু বলে যে সমস্ত পড়ুয়ার খ্যাতি, স্কুলে পরিদর্শক এলে তারাও ভাজা মাছ উল্টে খেতে না জানার মতো মুখ করে বসে থাকে। সে রকম ভাবেই গোষ্ঠী কোন্দল সাময়িক ধামাচাপা দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভায় হাজিরা দিলেন ইন্দাসের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

সোমবার দুপুর ২টোয় ইন্দাসের সিনেমাতলা এলাকার একটি রাইস মিলে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মীসভা ছিল। ইন্দাসে দলের ব্লক স্তরের নেতাদের মধ্যে বিরোধ মেটাতে কী বার্তা দেন অভিষেক— তা নিয়ে নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু কার্যকালে দেখা গেল অন্য ছবি। বার্তা পাওয়ার আগেই বেমালুম ঐক্য দেখা গেল। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ভুলে ব্লক স্তরের নেতারা ‘একজোট’ হয়ে নেমে পড়লেন এ দিনের কর্মিসভা সফল করতে।

বস্তুত, ইন্দাসের দলের ঘরোয়া রাজনীতিতে স্থানীয় বিধায়ক গুরুপদ মেটের সঙ্গে ব্লক সভাপতি রবিউল হোসেনের বিরোধ সর্বজনবিদিত। কিন্তু এ দিনের সভামঞ্চে রবিউল হোসেন, নিমাই মহন্তের পাশাপাশি দেখা গিয়েছে গুরুপদ মেটে, গৌতম বেরা, বকুল শেখদের। সভাস্থলে হাজির ছিলেন দুই শিবিরের কর্মীরাই। ফলে ঝুলি থেকে আর দাওয়াই বের করতে হল না যুব সভাপতিকে। বিধানসভা নির্বাচনে সবাইকে মিলিত ভাবে কাজ করার উপদেশ দিয়ে ফিরে গেলেন তিনি।

অভিষেকের কর্মিসভায় ভিড় তৃণমূল কর্মীদের।ছবি— শুভ্র মিত্র

এ দিন দুপুর ২ একটা থেকেই সিনেমাতলা এলাকার সভা প্রাঙ্গণ ব্লকের বিভিন্ন প্রান্তের তৃণমূল কর্মীদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে। সভায় মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দুপুর তিনটের পর অভিনেতা সোহমকে সঙ্গে নিয়ে সভাস্থলে এসে পৌঁছন অভিষেক। চারদিক ত্রিপল দিয়ে ঘেরা সভাস্থলে তত ক্ষণে ভিড় উপচে পড়েছে। ভিতরে ঢোকার সুযোগ না পেয়ে, নেতা এবং অভিনেতাকে একবার চোখের দেখা দেখতে বাইরে থেকেই উঁকিঝুঁকি মেরছেন অনেকে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১০ হাজার কর্মী।

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনই যে তৃণমূলের পাখির চোখ, এ দিন সভায় আসা নেতা কর্মীদের সে কথা বারে বারে বুঝিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর আধ ঘণ্টার বক্তব্যের বেশির ভাগটাই জুড়ে ছিল গত সাড়ে চার বছরে রাজ্য সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি। তোপ দেগেছেন সিপিএম এবং কংগ্রেসের জোট সম্ভাবনা নিয়েও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওই জোটে কিছু হবে না। আমাদের সঙ্গে মানুষের মহাজোট রয়েছে।’’ তৃণমূল কংগ্রেস ভোটের রাজনীতি করে না বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘আড়াই কোটি ভোট পেলেই তৃণমূল রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৩০টি পেয়ে যাবে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৭ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষকে দু’টাকা কেজি দরে চাল, গম বা আটা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।’’

এ দিনের সভায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিটি বুথে লড়াই করার যে বার্তা দিয়েছেন অভিষেক, তার পিছনে অন্য ইঙ্গিত দেখছন দলের নিচুতলার কর্মীরা। অনেকে মনে করছেন, এ দিন প্রকাশ্যে না এলেও দলের নিচুতলার নেতাদের মধ্যে যে বিরোধ রয়েছে, সেই প্রসঙ্গ ধরেই যুব তৃণমূল সভাপতি এই বার্তা। তবে বিধানসভা ভোটের আগে স্থানীয় নেতাদের এক সঙ্গে দেখে মুখে হাসি ফুটেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। কোনও রকম রাখঢাক না করেই জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য তথা জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “পরিবারের মধ্যে বিরোধ থাকে। দলেও ভিন্ন মত থাকতেই পারে। কিন্তু বিরোধ নেই। ইন্দাসে দল যে ঐক্যবদ্ধ এ দিন সে কথাই প্রমাণিত হল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE