Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ধর্ষিতার পরিবারকে প্রণবের কাছে নিয়ে যাবে সিটু

মধ্যমগ্রামের কিশোরীর পরিবারকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিল সিটু। মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি মিলেছে বলে শনিবার মৃতার পরিবার জানিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৪ ১৯:১৮
Share: Save:

মধ্যমগ্রামের কিশোরীর পরিবারকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিল সিটু। মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি মিলেছে বলে শনিবার মৃতার পরিবার জানিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে যাবেন সিটু-র রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী। রাষ্ট্রপতির কাছে ওই কিশোরীর গণধর্ষণ ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানাবেন তাঁরা।

এর আগে কামদুনি কাণ্ডে ধর্ষিতা ও নিহত কলেজছাত্রীর পরিবারকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। একই ভাবে খোরজুনায় ধর্ষিতার পরিবারকেও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছিলেন অধীরবাবু। মধ্যমগ্রাম কাণ্ডের জল অবশ্য ইতিমধ্যেই দিল্লি অবধি গড়িয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মা এ দিন জানিয়েছেন, কাল, সোমবারের পর যে কোনও দিন কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল কলকাতায় গিয়ে ওই কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন। যে ঘরে কিশোরীটি অগ্নিদগ্ধ হয়, সেখানেও তাঁরা যাবেন। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে তাঁরা কথা বলবেন পুলিশের সঙ্গেও। মমতাদেবী বলেন, “এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার আমাদের কোনও রিপোর্ট পাঠায়নি।”

কিন্তু এই ঘটনায় যখন বারবার রাজনীতিকরণের অভিযোগ উঠছে, তখনও কেন সিটু এ ভাবে জড়াচ্ছে? রাজ্য সভাপতি শ্যামলবাবুর বক্তব্য, “মৃতার বাবা সিটু অনুমোদিত ট্যাক্সিচালক ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত। তাই তাঁকে সব রকম সাহায্য করা উচিত।” অধীর চৌধুরী নিজে তো রাষ্ট্রপতির কাছে যাননি, তা হলে তিনি কেন যাচ্ছেন? শ্যামলবাবুর স্পষ্ট জবাব, “ওই নির্যাতিতার বাবা ন্যায়বিচারের জন্য আমার কাছে সাহায্য চান। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য। রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ জানাতে যাতে তাঁর কোনও অসুবিধে না হয়, সে জন্যই আমি সঙ্গে যাচ্ছি।”

প্রায় দু’মাস আগে মেয়েটি যখন প্রথম ধর্ষণের শিকার হয়, তখন কেন সিটু কিছু করেনি? শ্যামলবাবু বলেন, “মানুষকে রক্ষা করা এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। দেড় মাস আগে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা সত্ত্বেও সরকার তার কাজ করেনি। এর পরিণতিতেই শেষ পর্যন্ত মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। এখন তার বাবাকে বাংলা ছাড়ার জন্য ভয় দেখানো হচ্ছে।”

তাঁরা সিবিআই তদন্ত কেন চাইছেন, এই প্রশ্নের উত্তরে মৃতার বাবা বলেন, “৩১ ডিসেম্বর আমার মেয়ের মৃত্যুর পর রাতভর পুলিশ আমাদের ভয় দেখায়, রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে বলে। এক বার গণধর্ষণের অভিযোগ জানানোর পর সেই অপরাধে ফের আমার মেয়েকে পাশবিক অত্যাচারের শিকার হতে হল। পুলিশ নিরাপত্তা দিতে পারেনি। তার পর আমার মেয়েকে পুড়িয়ে মারা হল। পুলিশ কিছুই করেনি। তদন্তও ঠিক মতো হচ্ছে না। তাই আমরা সিবিআই তদন্ত চাই।”

তৃণমূলের মহাসচিব ও রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “আসলে সিপিএমের কোনও কাজ নেই। এর আগে কামদুনির ঘটনায় সিপিএম ইন্ধন জুগিয়েছিল। তাদের দোসর কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিল।” মধ্যমগ্রাম কাণ্ড নিয়ে টানটান পরিস্থিতিতে শাসক দলও অবশ্য হাত গুটিয়ে বসে থাকছে না। ওই কিশোরীকে যেখানে গণধর্ষণ করা হয়, মধ্যমগ্রামের সেই পাতুলিয়ায় আজ, রবিবার খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে দুষ্কৃতীদের শাস্তির দাবিতে মিছিল করবে তৃণমূল।

এ দিকে, এআইসিসি নেতা শাকিল আহমেদ খান এ দিন শ্যামনগর রবীন্দ্র ভবনে কংগ্রেসের কর্মিসভায় বলেন, “দিল্লির ধর্ষণ-কাণ্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিক্ষোভ-আন্দোলন করেছিলেন। মধ্যমগ্রামের ঘটনায় তিনি চুপ কেন? এই সরকার অত্যাচারী সরকার, খুনি সরকার। মধ্যমগ্রামের ঘটনায় সরকার এখনও কোনও বিবৃতি দেয়নি। পুলিশ একটি দলের হয়ে কাজ করছে।” এ দিনই উলুবেড়িয়ায় এক সভায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ মধ্যমগ্রাম কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। দুপুরে বিহার থেকে আসা বিজেপির চার সদস্যের মহিলা প্রতিনিধি দল ও রাজ্য বিজেপির কয়েক জন সদস্য কলকাতায় সিটু অফিসের কাছে একটি বাড়িতে মৃতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। ওই মহিলা প্রতিনিধি দলটি মধ্যমগ্রাম ও এয়ারপোর্ট থানায় যায়। বারাসতের এসডিপিও সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা।

রাজনৈতিক তরজা যখন অব্যাহত, তখন এ দিন সকালে তাঁর পরিবারের তরফে বিধাননগর কমিশনারেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলা হয়, এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর গেটে মতিলাল কলোনির ভাড়াবাড়ি থেকে পোশাক ও অন্যান্য জিনিসপত্র আনার জন্য তাঁদের পুলিশি নিরাপত্তা প্রয়োজন। সেই মতো এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ ওই ভাড়াবাড়িতে যায় মৃতার পরিবার। আগেই এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ সেখানে হাজির হয়। যে ঘরে কিশোরীর অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাটি ঘটে, সেই ঘর থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু নথি ও প্রয়োজনীয় পোশাক নিয়ে তাঁরা ঘর থেকে বেরিয়ে যান। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কিশোরীর বাবা বলেন, “আমাদের প্রাণের ভয় আছে এখানে। আর এখানে ফিরব না। তবে বাড়ি এখনই ছাড়ছি না। নতুন বাড়ি পেলেই চলে যাব।”

মৃতার পরিবার মতিলাল কলোনি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্ট থানায় গিয়ে ২৩ ডিসেম্বর, অর্থাৎ ওই কিশোরীর অগ্নিদগ্ধ হওয়ার দিনে দায়ের করা এফআইআর-এর প্রতিলিপি নেন। থানায় ঢুকে মৃতার বাবা তদন্তকারী অফিসার শহিদুল্লা সানা ও এয়ারপোর্ট থানার ওসি দিলীপ হাজরাকে দেখিয়ে অভিযোগ করেন, মেয়ে মারা যাওয়ার পর রাতে এই দু’জনই তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন। ওসি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE