প্রতীকী ছবি।
কোনও বছর দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট তো কোনও বছর নদিয়ার শান্তিপুরে বিষমদে প্রাণহানি ঘটছে। তাই বিষমদ প্রতিরোধে এ বার আবগারি থানা গড়ছে রাজ্য সরকার।
এত দিন সার্কেল স্তর থেকে বিষমদ বা আবগারি দফতরের বেআইনি কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করা হত। ২০১৮ সালে শান্তিপুরে বিষমদে ব্যাপক প্রাণহানির পরে রাজ্যে নতুন ১১৭টি ‘এক্সাইজ স্টেশন’ বা আবগারি থানা গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার জন্য প্রায় তিন হাজার কর্মী-অফিসার নিয়োগ করা হবে। ২৪ ডিসেম্বর রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব পাশ হয়েছে। সাধারণ ভাবে তিন-চারটি পুলিশ থানা নিয়ে গড়া হবে এক-একটি আবগারি সার্কেল। নতুন আবগারি থানাগুলি ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে। এক জন ইনস্পেক্টরের নেতৃত্বে থানাগুলি সামলানো হবে। পুলিশ ইনস্পেক্টরেরা নিজেদের থানা এলাকায় দিনরাত যে-ভাবে তল্লাশি ও নজরদারি চালায়, সে ভাবেই কাজ করবে আবগারি থানা।
কেন গড়তে হচ্ছে আবগারি থানা?
নবান্নের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য, মগরাহাটে বিষমদ কাণ্ডের পরে আবগারি দফতরের প্রশাসনিক জেলা ভেঙে দেওযা হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৈরি হয়েছে ডায়মন্ড হারবার, বারুইপুরের মতো নতুন আবগারি প্রশাসনিক জেলা। একই ভাবে সিঙ্গুর-আরামবাগে, হাওড়ায় নতুন আবগারি জেলা গড়া হয়েছে। প্রশাসনিক কাঠামো ভাঙা হলেও পরিকাঠামো, কর্মী কম থাকায় নিয়মিত নজরদারি, তল্লাশি চালানো যাচ্ছিল না। তাই যে-সব তল্লাটে বিষমদের কারবার চলে, আপাতত সেখানেই ১১৭টি নতুন আবগারি থানা খোলা হচ্ছে। পরে এই ধরনের থানার সংখ্যা আরও বাড়বে।
আবগারি দফতরের এক কর্তা জানান, মদ বেচে রাজ্যের এখন বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা আয় হচ্ছে। চোলাই মদ বিক্রি বন্ধ করতে পারলে সেই আয় আরও তিন হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে। আবগারি থানা তৈরির নেপথ্যে আছে মদ থেকে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনাও।
মন্ত্রিসভায় গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আবগারি সাব-ইনস্পেক্টর থেকে প্রোমোশন দিয়ে
আবগারি থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনস্পেক্টর নিয়োগ করা হবে। ঠিক হয়েছে, অতি দ্রুত ২৩৪ জন এসআই, ৫৮৫ জন এএসআই এবং ১৭৫৪ জন আবগারি কনস্টেবল নিয়োগ করা হবে। দ্রুত নিয়োগের জন্য পৃথক আবগারি রিক্রুটমেন্ট বোর্ড গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে আবগারি দফতর। তবে তাতে অর্থ দফতরের ছাড়পত্র মেলেনি। তাই প্রথম দফায় নিয়োগ হবে পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমেই।
বিষমদের নমুনা পরীক্ষার জন্য রাজ্যে আরও দু’টি আ়ঞ্চলিক রাসায়নিক পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি আসানসোলে, অন্যটি শিলিগুড়িতে। আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলির মাথায় থাকবেন এক জন ডেপুটি কেমিক্যাল এগ্জ়ামিনার। সঙ্গে থাকবেন জনা পনেরো রাসায়নিক বিশ্লেষক। এক আবগারি কর্তা জানান, বিষমদের প্রচুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেগুলো পরীক্ষা করার জন্য একমাত্র কেন্দ্রটি রয়েছে কলকাতায়। ফলে রিপোর্ট পেতে দেরি হয়। সেই জন্য অনেক সময়েই বিষমদ চক্রের পাণ্ডাদের বিরুদ্ধে আদালতে জুতসই সওয়াল করা যায় না। অভিযুক্তেরা ছাড়া পেয়ে যান। দু’টি আঞ্চলিক ল্যাবরেটরি গড়লে মোট তিনটি কেন্দ্রে বিষমদের নমুনা তাড়াতাড়ি পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy