ব্যালটে ফেরার দাবি। —নিজস্ব চিত্র।
আগেও নানা ভাবে ব্যালট পেপারে ফেরার পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বা বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রের বদলে ব্যালট পেপার ফেরানোর দাবিতে রবিবার, ২১ জুলাই দলের শহিদ স্মরণের মঞ্চে আবার সরব হলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, রবিবারেই ইভিএমের স্বচ্ছতা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে এই নিয়ে কোনও রকম গুজবে বিভ্রান্ত না-হওয়ার বার্তাও দিয়েছে তারা।
আগামী বছর কলকাতা-সহ রাজ্যের ৯১টি পুরসভায় ভোট। সেই সঙ্গে বকেয়া রয়েছে অন্য ১৭টি পুরসভার নির্বাচন। সেই সব পুরভোট ব্যালট পেপারে হবে বলে এ দিন জানান মমতা। নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে একদা যুক্ত থাকা অনেকের মতে, ইভিএম নিয়ে অভিযোগ থাকলেও তার পক্ষে অকাট্য প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পেশ করতে পারেননি কেউ। ‘‘কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। ইভিএমের ঘটনাও তেমনই,’’ বলেছেন এক নির্বাচনকর্তা।
এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে ব্যাপক কারচুপি হতে পারে বলে ভোটের অনেক আগে থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছিল বিভিন্ন শিবির। ব্যালট পেপার ফিরিয়ে আনার দাবিও উঠছিল এখানে-সেখানে। তাতে সুর মিলিয়েছিল তৃণমূলও। ভোটের ফল ঘোষণার পরে সেই আশঙ্কা পরিব্যাপ্ত অভিযোগের আকার নেয়। ইভিএমের সঙ্গে ব্যালটের ফলের পার্থক্য নিয়ে এ দিন মমতার পাশাপাশি সরব হন শুভেন্দু অধিকারী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিনই সংবাদপত্রে ‘জানুন কেন ইভিএম কখনওই একটি ভুল ভোট রেকর্ড করে না’ শীর্ষক বিজ্ঞাপনে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রের পক্ষে ১০টি যুক্তি দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বলা হয়েছে, ‘যথেচ্ছ ভাবে ২০৬৮৭টি ভিভিপ্যাট গণনা এবং ইভিএমের সঙ্গে মেলানো হয়েছে। কেবল মাত্র আটটি ভিভিপ্যাটে মোট ভোটে গরমিল পাওয়া গিয়েছে। প্রায় ১.২৫ কোটি ভোট গণনায় শুধু ৫১টি ভোট মেলেনি (মোট ভোটের ০.০০০৪%)— যেটি মানুষের ত্রুটির কারণে হয়েছে, মেশিনের ত্রুটির জন্য নয়।’ এ-সব জানিয়ে কমিশনের তরফে মন্তব্য করা হয়েছে, ‘আপনার প্রদেয় ভোট এবং আপনার নিজের ভোট যাচাই। নিজের উপরে বিশ্বাস রাখুন। কোনও রকম গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না।’
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই ইভিএম বর্জন করে পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোট ব্যালট পেপারে করানোর কথা বলে আসছেন তৃণমূল নেত্রী। এ দিন একুশের মঞ্চে ফের সে-কথা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোট ব্যালটে করে আমরা পথ দেখাব।’’ কর্নাটক ও রাজস্থানে গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের বড়সড় পার্থক্য দেখা গিয়েছে। ওই দুই রাজ্যেই ব্যালট পেপারে গৃহীত ভোটে ভাল ফল করেছে কংগ্রেস।
এ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ব্যালটে হলেও পুরসভার ক্ষেত্রে ইভিএম ব্যবহৃত হয়। আগামী বছর রাজ্যের পুরসভার নির্বাচন ব্যালট পেপারে হবে কি না, সেই বিষয়ে মন্তব্য করার মতো এখনও সময় আসেনি বলে অভিমত রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের। ব্যালটে ভোট করার আবেদন কমিশনে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে জানায়নি তৃণমূল।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার ইভিএম। সেগুলো কিছু জেলায় রাখা আছে।
সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তিগত কারণেই ব্যালটের জায়গা নিয়েছে ইভিএম। আবার তা বদল করা কতটা যুক্তিযুক্ত? কমিশনেরই এটা ভাবা উচিত বলে মনে করেন একদা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকা অনেকে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, রাজ্যে পুরসভা ভোট ব্যালট পেপারে হলে পরিকাঠামোর বদলের প্রয়োজন হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy