স্বাস্থ্য ভবন।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে কমে যাচ্ছে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা। দ্রুত কমছে প্লেটলেট। তবু স্বেচ্ছাবসরের জন্য এক চিকিৎসককে হয়রান করার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে। বোর্ডের ওই ডাক্তারের বক্তব্য নিয়ে যে তাঁর আপত্তি আছে, তা জানিয়ে দিয়েছেন মেডিক্যাল বোর্ডেরই অন্য এক চিকিৎসক। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের ক্যানসার-আক্রান্ত চিকিৎসক কল্যাণ চৌধুরীর পাশে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসক সংগঠনগুলি।
রাজারহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কল্যাণবাবুর চিকিৎসা চলছে। ১২টি কেমোথেরাপি হয়ে গিয়েছে। কল্যাণবাবুর অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার লিভারে ছড়িয়েছে। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘আমি কার্যত শয্যাশায়ী। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার অন্তিম পর্যায়ে। আমার চিকিৎসক জানিয়েছেন, বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ।’’
জানুয়ারিতে স্বেচ্ছাবসরের জন্য স্বাস্থ্য ভবনে আবেদন করেন ওই চিকিৎসক। তাঁর পক্ষে সত্যিই যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তার প্রমাণ দিতে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে গত ১৬ জুলাই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চার সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে হাজির হন তিনি। কল্যাণবাবুর অভিযোগ, তাঁর যাবতীয় রিপোর্ট নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ এবং এনএবিএল (ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিব্রেশন ল্যাবরেটরিজ) স্বীকৃত পরীক্ষাগার থেকে তৈরি করানো হয়েছিল। এক সপ্তাহ আগেই সব পরীক্ষা করিয়েছেন তিনি। কিন্তু মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য তথা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অঙ্কোলজি বিভাগের প্রফেসর চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্য সেই সব রিপোর্ট দেখতেই চাননি। উল্টে যে-সব পরীক্ষা করানোর দরকার নেই, সেগুলোও করাতে বলেন তিনি। এন্ডোক্রিনোলজি, নিউরোমেডিসিন, গ্যাসট্রোএন্টেরোলজি, কার্ডিয়োলজি বিভাগের মতামত এবং ক্যানসারের স্লাইড জমা দিতে বলা হয়।
কল্যাণবাবু জানান, মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য তথা অঙ্কোলজি সার্জিক্যালের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সৌরভ ঘোষ ওখানেই শিবাশিসবাবুর নোট সম্পর্কে তাঁর আপত্তির কথা জানান। তিনি জানিয়ে দেন, অত কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। সৌরভবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
অসুস্থ চিকিৎসকের বক্তব্য, মালদহ মেডিক্যালে যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস বি-সহ সব ধরনের রোগী রয়েছেন। সেখানে কাজে যোগ দিলে ওই সব রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন তিনি। জট কাটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তাদের ই-মেল করেছে অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস (এএইচএসডি) এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম (ডব্লিউবিডিএফ)। এএইচএসডি-র সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘আগে সরকারি টালবাহানার জেরে স্বেচ্ছাবসর পাননি চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় ও চিকিৎসক কাঞ্চন মণ্ডল। তাঁদের মৃত্যুতে ক্ষোভ ছড়ায় চিকিৎসকদের মধ্যে। এ বারের ঘটনা তার চেয়েও ন্যক্কারজনক।’’ ডব্লিউবিডিএফের সভাপতি অর্জুন দাশগুপ্তের বক্তব্য, যিনি এতটা অসুস্থ, তাঁর স্বেচ্ছাবসরের বিষয়টি আরও সহানুভূতির সঙ্গে দেখা উচিত।
শিবাশিসবাবু জানান, সর্বভারতীয় স্তরের নিয়ম মেনে ক্যানসারের স্লাইড জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার কোন স্তরে ছিল এবং কেমোর পরে অবস্থা কেমন, সেই সংক্রান্ত নথি চাওয়া হয়েছে নিয়ম মেনেই। কল্যাণবাবু এগুলো নিয়ে আসেননি। ‘‘কল্যাণবাবু যেখানে চিকিৎসা করাচ্ছেন, সেখানকার রিপোর্টেই তো কেমোর পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। মেডিক্যাল বোর্ডের সব সদস্য আমার নোটের নীচে সই করেছেন। কেউ কোনও আপত্তি জানাননি। উনি দাবি করছেন, সৌরভবাবু আপত্তি জানিয়েছেন। কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি,’’ বলেন শিবাশিসবাবু।
কোনও মন্তব্য করতে চাননি স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy