Advertisement
১১ মে ২০২৪

টাকার রং বদলের খেলায় গারদে তিন

নোট বাতিলের ধাক্কায় আমজনতা খাবি খাচ্ছে। তবে অগ্রহায়ণেই পৌষ মাস দেখছে এক শ্রেণির সুযোগসন্ধানী। কালো টাকাকে সাদা করে দেওয়ার ফিকিরে পকেট ভরছে তারা।

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সঞ্জয় জৈন, অমিতেশ সিংহ, মনোজ মণ্ডল  বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সঞ্জয় জৈন, অমিতেশ সিংহ, মনোজ মণ্ডল বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:৩০
Share: Save:

নোট বাতিলের ধাক্কায় আমজনতা খাবি খাচ্ছে। তবে অগ্রহায়ণেই পৌষ মাস দেখছে এক শ্রেণির সুযোগসন্ধানী। কালো টাকাকে সাদা করে দেওয়ার ফিকিরে পকেট ভরছে তারা।

বসে নেই আয়কর দফতর এবং সিবিআই-ও। তক্কে তক্কে থেকে টাকার রং বদলানোর সেই কারিগরদের গারদে ভরছে তারা। বৃহস্পতিবার খাস কলকাতাতেই এমন একটি ঘটনায় এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, এক ব্যাঙ্ককর্তা-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।

পনেরো জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাঁচ কোটি ৮০ লক্ষ কালো টাকা নিয়ে তা সাদা করার আশ্বাস দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ওই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের বিরুদ্ধে। সঞ্জয় জৈন নামে সেই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে এ দিন গ্রেফতার করেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। গ্রেফতার হয়েছে সঞ্জয়ের সঙ্গী বড়বাজার এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ডেপুটি ম্যানেজারও। নগদ টাকা ব্যাগে ভরে ওই ব্যাঙ্কের বড়বাজার শাখায় পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে মনোজ মণ্ডল নামে অন্য এক ব্যক্তিও ধরা পড়েছেন।

কী ভাবে হতো টাকার রং বদল?

সিবিআইয়ের অভিযোগ, ওই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বেশ কয়েকটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের বড়বাজার শাখায়। সেই সব ভুয়ো অ্যাকাউন্টকেই কালো টাকা সাদা করার কাজে লাগাতেন সঞ্জয়। ওই ব্যাঙ্কের ডেপুটি ম্যানেজার অমিতেশ সিংহ এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। তদন্তকারীদের আরও অভিযোগ, বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোট এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে সেগুলি সঞ্জয়ের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সাদা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন ব্যাঙ্ককর্তা অমিতেশ।

সিবিআইয়ের দাবি, জেরার মুখে বিষয়টি তাদের জানিয়েছেন সঞ্জয়। ধৃতদের এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

সিবিআই সূত্রের খবর, দু’দিন ধরে আয়কর দফতর সঞ্জয় ও অমিতেশের উপরে নজরদারি চালাচ্ছিল। সঞ্জয় আগেই বড়বাজারের ওই ব্যাঙ্কে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছেন বলে আয়কর দফতরের কাছে খবর ছিল। সিবিআইয়ের অভিযোগ, পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিলের পরে সঞ্জয় বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের কালো টাকা সাদা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কেউ ১০ লক্ষ টাকার পুরনো নোট দিলে তিনি তার দু’শতাংশ কমিশন হিসেবে নেবেন। বাকি টাকা পাঠিয়ে দেবেন সেই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে। তিনি এ ভাবে ১৫ জন ব্যবয়াসীর কাছ থেকে মোট পাঁচ কোটি ২০ লক্ষ টাকার পুরনো নোট তুলে তাঁর তিনটি অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন বলে সিবিআইয়ের দাবি। তারা জানাচ্ছে, ভুয়ো অ্যাকাউন্ট বানানোর সময়ে নাগপুরের দু’টি প্যান কার্ড ব্যবহার করেছিলেন সঞ্জয়। ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছিলেন অমিতেশ। সেই সব ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলার ছাড়পত্রে অমিতেশেরই সই আছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা।

সিবিআই সূত্রের খবর, বড়বাজারের ওই ব্যাঙ্কে সঞ্জয়ের তিনটি ভুয়ো অ্যাকাউন্টে সাত কোটি টাকা জমা পড়ে। তার মধ্যে এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়েছেন অমিতেশ। সঞ্জয় ও অমিতেশ যাঁদের কাছ থেকে ওই কালো টাকা নিয়েছিলেন, দুই শতাংশ কমিশন কেটে বাকি টাকা নেট ব্যাঙ্কিং মারফত সেই সব ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দেখা গিয়েছে, সেই টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে তুলেও নিয়েছেন।

যাঁরা সঞ্জয় ও অমিতেশের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করেছিলেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলেও সিবিআই সূত্রে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

black money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE