Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

গোল টেবিলে ছাত্র আন্দোলনের এ কাল-সে কাল

১৯৬৭-৬৮ সাল নাগাদ ছাত্র-বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়েছিল দুনিয়া। তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স থেকে শুরু করে এ দেশ— দফায় দফায় সাক্ষী থেকেছে উত্তাল আন্দোলনের।

শুক্রবার ছাত্র আন্দোলনের পরিবর্তিত রূপ নিয়ে আলোচনায় নানা কথায় মাতলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।

শুক্রবার ছাত্র আন্দোলনের পরিবর্তিত রূপ নিয়ে আলোচনায় নানা কথায় মাতলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০১:৩০
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়াই কি বদলে দিচ্ছে ছাত্র আন্দোলনের চেহারা?

এক কালে পথে নেমে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনও ছিল ছাত্র রাজনীতির একটা বড় কর্তব্য। এখন সে দায়ের অনেকটা ভার নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। ছাত্রছাত্রীরা কী দাবি তুলেছেন এবং কেন, তা ঘুরতে থাকে ফোনে ফোনে। তাঁদের সব সময়ে দেখা যায় না শহরের পথে-গ্রামের আনাচকানাচে। পড়ুয়াদের আন্দোলন অনেক সময়ে আবদ্ধ থেকে যায় ক্যাম্পাসে। শুক্রবার ছাত্র আন্দোলনের পরিবর্তিত রূপ নিয়ে আলোচনায় এমনই নানা কথায় মাতলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। উঠে এল ছাত্র আন্দোলনের এ কাল–সে কাল।

১৯৬৭-৬৮ সাল নাগাদ ছাত্র-বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়েছিল দুনিয়া। তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স থেকে শুরু করে এ দেশ— দফায় দফায় সাক্ষী থেকেছে উত্তাল আন্দোলনের। তার রেশ বয়ে বেড়িয়েছে সত্তরের দশক। রাজনীতির সে জোয়ারের বয়স পেরোলো ৫০। ইতিমধ্যে বদলেছে পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মেজাজ। তবে ক্যাম্পাস এখনও নানা প্রয়োজনে গর্জে ওঠে। কখনও পুলিশের লাঠির মুখে গান ধরেন পড়ুয়ারা, কখনও নামী শিল্পী গান বাঁধেন আন্দোলনকারীদের কুর্নিশ জানিয়ে। সে সবই ফিরে ফিরে আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

তবে সোশ্যাল মিডিয়ার এই সাহচর্য পুরোটা ভাল ভাবে দেখে না যাদবপুরের ছাত্রসমাজ। পড়ুয়াদের মুখেই তাই উঠে এল উদ্বেগ। কেউ কেউ মনে করালেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষণে ক্ষণে বদলায় প্রসঙ্গ। তার জোয়ারে নিজেদের স্বর হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ষাট-সত্তরের বিপ্লব যেন ভুলে না যায় এ সময়, তার জন্য কাজ করে চলেছেন সংস্কৃতি-গবেষক শুদ্ধব্রত দেব। তিনি বলছেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত তথ্যের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য। তবে এর ভাল দিকও আছে। সোশ্যাল মিডিয়াই তো বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বক্তব্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।’’ তবে তাঁর আশঙ্কা, ইন্টারনেটে কে আগে আন্দোলন সংক্রান্ত তথ্য দিলেন, সেই চিন্তায় বুঝি দলগত থাকার মনোভাবটাও মার খাচ্ছে এখনকার শহুরে পড়ুয়াদের আন্দোলনে।

একই কথা বলছিলেন চিত্রগ্রাহক রনি সেন। যাদবপুরের হোক কলরব থেকে শুরু করে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক আন্দোলন, সবটাই ক্যামেরাবন্দি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি ব্যক্তির প্রাধান্য বেশি হয়ে যাচ্ছে।’’ সকলেই নিজেকে ক্যামেরার সামনে দেখতে চান বুঝি, মত রনির।

তবে যাদবপুরের পড়ুয়ারাও জানেন নিজেদের সময়ের খামতিগুলির বিশ্লেষণ করতে। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষিকা মেরুনা মুর্মুর সঞ্চালনায় দেবর্ষি, দত্তাত্রেয়, দেবপ্রিয়, সুনন্দিনী, সাহানারা তুলে আনলেন সে সব দিক। কেউ বললেন, সে সময়ে একটা বিপ্লব চেতনা বিশ্বে ছাত্রদের জাগিয়ে তুলেছিল। এখন কোনও এক সূত্রে আন্দোলন বেঁধে রাখা যায় না। কারও আবার বক্তব্য, ক্যাম্পাস-রাজনীতির পরিসর এখন অনেক সীমিত। বৃহত্তর রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগ তৈরিতে তা একেবারেই অক্ষম। তবে অনেকেরই মত, শ্রেণি-জাতপাত-লিঙ্গ বৈষম্যের যে সব প্রসঙ্গ ষাট-সত্তরের দশকে উঠে এসেছিল রাজনীতির প্রেক্ষাপটে, তা এখনও গুরুত্বপূর্ণ।

আয়োজকদের তরফে নাজেস আফরোজ জানালেন, এই সব ভাবনা তুলে আনাই ছিল উদ্দেশ্য। সপ্তাহব্যাপী উৎসবের আয়োজন হয়েছে ম্যাক্সমুলার ভবন ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে। ১৯৬৮ সালের যুব বিপ্লবের পঞ্চাশ বছর পরে তার কী প্রভাব রয়েছে, তার কিছুটা তো জানা যাবে এর মাধ্যমে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University Student Movement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE