Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Organ Donation

জীবন্মৃত মেয়েকে ‘বাঁচিয়ে রাখতে’ সঙ্কল্প অঙ্গদানের

চিকিৎসকেরা বলছেন, মস্তিষ্কের পুরোপুরি মৃত্যু না-হলে দানের জন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেওয়া যাবে না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:১০
Share: Save:

‘যেতে নাহি দিব’ বলেও মেয়েকে যে আটকে রাখা যাবে না, বুঝে গিয়েছেন আমজাদ আলি। অথচ সব বাবার মতোই মেয়ের দীর্ঘতর জীবন চান তিনি। তাই এক থেকে বহু হয়ে মেয়ে জন্নাতুন ফিরদৌসি যাতে অন্যদের মধ্যে বেঁচে থাকেন, সেই জন্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে মেয়ের অঙ্গদানের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন আমজাদ।

কিন্তু জন্নাতুন তো এখনও জীবিত। চিকিৎসকেরা বলছেন, মস্তিষ্কের পুরোপুরি মৃত্যু না-হলে দানের জন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেওয়া যাবে না। জন্নাতুন ভর্তি আছেন বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিতে। ওই প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন হাসপাতাল এসএসকেএমের সুপার রঘুনাথ মিশ্র জানান, ২১ বছরের জন্নাতুনের মস্তিষ্কের অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুযায়ী, এই অবস্থা থেকে তাঁর স্বাভাবিক জীবনে ফেরা প্রায় অসম্ভব।

“জন্নাতুনের বাবার অঙ্গদানের সঙ্কল্প ও আর্জির কথা আমরা স্বাস্থ্য ভবন মারফত জানতে পেরেছি। কিন্তু মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ মৃত্যু না-হলে কারও অঙ্গ দান করা যায় না। জন্নাতুনের মস্তিষ্কের কিছু অংশ এখনও কাজ করে চলেছে,” বলেন রঘুনাথবাবু। একই বক্তব্য মেডিসিনের চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, “মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ মৃত্যুর আগে অঙ্গদানের কল্পনাও ভয়ঙ্কর। স্বপ্নেরও অতীত।” আইনজীবী দীপনারায়ণ মিত্র বলেন, “আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী জীবিত ব্যক্তির অঙ্গ দান করা সম্ভব নয়। স্বেচ্ছামৃত্যুরও অধিকার দেয় না আমাদের দেশের আইন।”

২০১৫ সালে জন্নাতুনের বয়স তখন ১৬। পড়ত আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট ব্লকে একটি মাদ্রাসায়। রাজ্য সরকারের শিশুসাথী প্রকল্পে চিকিৎসকেরা তখন স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিশুদের শারীরিক পরীক্ষা করছিলেন। তখনই জানা যায়, জন্নাতুনের হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা আছে। শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসা চালানোর জন্য তাকে শিলিগুড়ির চ্যাং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের পরে দেখা যায়, মেয়েটির বেশির ভাগ শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হাঁটতে পারছে না, কথাও বলতে পারছে না। আমজাদ জানান, তখন থেকেই এই অবস্থা মেয়ের। সে আর ঠিক হয়নি।

আমজাদকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে দার্জিলিং জেলার লিগ্যাল এড ফোরাম। ওই সংগঠনের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, “আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। স্থানীয় আদালত থেকে কলকাতা হাইকোর্ট— সর্বত্র গিয়েছি। দ্বারস্থ হয়েছি সুপ্রিম কোর্টেরও। আদালতের নির্দেশে রাজ্য সরকারও বহু বার বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি করিয়ে জন্নাতুনের চিকিৎসা করিয়েছে। মেয়েটিকে এক বার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয় আদালতের নির্দেশে। পরে সেই টিম জানায়, জন্নাতুনকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।”

আমজাদের প্রশ্ন, এই অবস্থায় মেয়েকে তিনি রাখবেন কোথায়? তিনি পেশায় দর্জি। ছোট বাড়ি। আছেন স্ত্রী এবং আরও দুই ছেলেমেয়ে। সেখানে জন্নাতুনকে রেখে দেখভাল করা মুশকিল। আমজাদের আবেদন মেনে শেষ পর্যন্ত জলপাইগুড়ির বীরপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সেখানেই রাখা হয় জন্নাতুনকে। কিন্তু সেখানে তার শারীরিক অবস্থার খুব দ্রুত অবনতি হতে থাকে। সেখানকার স্বাস্থ্যকর্তাদের উদ্যোগে লকডাউনের মধ্যেই জন্নাতুনকে কলকাতায় এনে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিতে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। আমজাদ নিজে রয়েছেন মেয়ের সঙ্গে।

“মেয়েকে তো ফিরে পাব না। ও যাতে অন্যদের মধ্যে বেঁচে থাকতে পরে, সেই জন্যই অঙ্গদানের পথ নিয়েছি,” বললেন আমজাদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Organ Donation Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE