অভিষেকের অসুস্থতা নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না। তৃণমূল যেন ‘স্পিকটি নট’। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তিনি কলকাতায় নেই। চিকিৎসার জন্য ‘বাইরে’। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতির সাময়িক অনুপস্থিতি সম্পর্কে শুধু এটুকুই জানানো হচ্ছে। কী চিকিৎসা, তার জন্য কোথায় গিয়েছেন, কবে ফিরবেন— সে বিষয়ে সরকারি ভাবে বিশেষ কিছু জানাচ্ছে না দল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বৃত্তও প্রকাশ্যে অন্তত মুখ খুলতে রাজি নয়। আর তার জেরেই ছড়াচ্ছে নানা ভিত্তিহীন গুজব। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, বাঁ চোখ নিয়ে বেশ সমস্যায় রয়েছেন অভিষেক। অস্ত্রোপচারের জন্য হায়দরাবাদ গিয়েছেন।
অসুস্থতা দুর্ঘটনাজনিত। খবর তৃণমূল সূত্রের। প্রকাশ্যে কেউ সে বিষয়ে কিচ্ছু বলতে রাজি নন। তবে ‘যুবরাজ’-এর চোখের অবস্থা নিয়ে বাংলার শাসক দলের অন্দরে যে উদ্বেগ, তাতে কান পাতলে জানা যাচ্ছে, ২০১৬-র অক্টোবরে মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা ফেরার সময়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে অভিষেক যে দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন, তার ধাক্কা এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। বাঁ চোখে এখনও কিছু সমস্যা হচ্ছে। তার চিকিৎসাতেই অভিষেককে ‘বাইরে’ যেতে হয়েছে।
২০১৬-র ওই দুর্ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো মারাত্মক জখম হয়েছিলেন। তাঁর শরীরের নানা অংশে চোট ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি আঘাত লেগেছিল মুখে। বাঁ চোখের নীচের অংশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচার করে সেখানে প্লেট বসাতে হয়েছিল। গালে অস্ত্রোপচারের দাগ মুছতেও বিশেষ সার্জারি হয়েছিল বলে খবর।
২০১৬ সালে দুর্ঘটনার পর এ ভাবেই দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল অভিষেকের গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
অসুস্থতা কাটিয়ে রাজনীতির ময়দানে ফিরতে সে বার বেশ কিছুটা সময় লেগে গিয়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ তিনি হতে পারেননি। বাঁ চোখের নীচে ফের অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে বলে সে সময়েই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন
ভাইয়ের নিশানায় কি ভাইপো? জল্পনা তীব্র, মন্তব্য মিলল না অভিষেক শিবির থেকে
কেন ফের অস্ত্রোপচারের কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা? তৃণমূল সূত্রের খবর, একাধিক অস্ত্রোপচার সত্ত্বেও অভিষেকের বাঁ চোখে বেশ সমস্যা রয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসরা তাই বলেছিলেন, চোখের নীচে যে প্লেট বসানো হয়েছে, তা বার করে পরে আবার অন্য প্লেট বসানো হবে, যা শরীরের সঙ্গে মিশে যাবে, আর বার করার প্রয়োজন পড়বে না। বাঁ চোখের সমস্যা তাতে কমবে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। এ বার অভিষেক সেই প্লেট পরিবর্তনের জন্যই ‘বাইরে’ গেলেন বলে খবর।
কিন্তু এই ‘বাইরে’ বলতে কোথায়? স্পষ্ট উত্তর কারও কাছে মেলে না। তৃণমূলের কোনও নেতা, বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রী মুখ খুলতে চাইছেন না। অধিকাংশই বলছেন, বিশদে জানা নেই। অনেকে আবার বলছেন, ‘‘অভিষেক বাইরে নাকি? জানি না তো!’’
জোড়াসাঁকোর তৃণমূল বিধায়ক স্মিতা বক্সির পুত্র তথা যুব নেতা সৌম্য বক্সির পরিচিতি অভিষেকের বেশ কাছের লোক হিসেবে। কলকাতায় অভিষেকের যে কোনও কর্মসূচিতে সৌম্যকে সব সময় তাঁর ঠিক পাশেই দেখা যায়। নেতার অসুস্থতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কী বললেন সৌম্য? জবাব এড়িয়ে বললেন, ‘‘আমি ঠিক জানি না। এটা তাঁর নিতান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। আমি জানতে চাইবই বা কেন?’’
আরও পড়ুন
‘বিরোধীশূন্য’, দেখলেন দিলীপ
অভিষেকের চিকিৎসা নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠদের এবং তৃণমূল নেতৃত্বের এই ‘স্পিকটি নট’ আচরণেই নানা রকমের জল্পনা প্রশ্রয় পাচ্ছে। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সিঙ্গাপুর যেতে পারেন বলে জল্পনা চলছিল। পরে জানা যায়, দেশের বাইরে নয়, চিকিৎসার জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো যাচ্ছেন দক্ষিণ ভারতে। চেন্নাই, বেঙ্গালুরু— ইত্যাদি নানা দক্ষিণী শহরের নাম শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এখন অভিষেকের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, চিকিৎসার জন্য তিনি গিয়েছেন হায়দরাবাদে।
রবিবারই অভিষেক রওনা হয়েছেন বলে খবর। কিন্তু কবে ফিরবেন, তা স্পষ্ট নয়। অভিষেকের ব্যক্তিগত সহায়ক রবিবার জানিয়েছিলেন, এক সপ্তাহেই কলকাতায় ফিরবেন তাঁরা। কিন্তু তৃণমূলের অন্য একটি সূত্র বলছে, এক সপ্তাহের মধ্যে ফেরার সম্ভাবনা নেই। ২১ জুন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কোর কমিটির যে বৈঠক ডাকা হয়েছে, সেখানে অভিষেক থাকতে পারছেন না। জুনের শেষ দিকে তিনি কলকাতায় ফিরতে পারেন।
অভিষেকের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, জুনের শেষ দিকে নয়, কোর কমিটির বৈঠকের আগেই অভিষেক ফিরবেন। তবে কলকাতায় ফিরলেও এখন বেশ কিছু দিন বাইরে বেরনোর অবস্থায় থাকবেন না তিনি। সেই কারণেই কোর কমিটিতে তাঁকে হয়তো দেখা যাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy