Advertisement
১০ মে ২০২৪
Sovan Chatterjee

এসএমএসে বৈঠকে ডাক অভিষেকের সহকারীর, জবাব দিলেন না শোভন

তৃণমূলের কর্মসূচিতে ডাক পেলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র।

মেসেজের জবাব দেননি শোভন। —ফাইল চিত্র।

মেসেজের জবাব দেননি শোভন। —ফাইল চিত্র।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:৩৬
Share: Save:

দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিয়েছিলেন আনুষ্ঠানিক ভাবেই। পরে পুরনো দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব কমলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে শোভন চট্টোপাধ্যায় ফেরেননি। কিন্তু তার মধ্যেই তৃণমূলের কর্মসূচিতে ডাক পেলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির রিভিউ বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য শোভনকে এসএমএস পাঠালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সহকারী। তবে শোভন সে এসএমএসের কোনও জবাব দেননি বলে জানা গিয়েছে।

৩ জানুয়ারি বৈঠক ডেকেছে তৃণমূল। পুর নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির সাফল্য, প্রভাব এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পর্যালোচনা হওয়ার কথা। মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনও থাকছে। সেই বৈঠকে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ডাকা হয়েছে। তবে ফোন করে বা চিঠি পাঠিয়ে নয়, শোভনকে ডাকা হয়েছে এসএমএস পাঠিয়ে। সে এসএমএস আবার শোভন পেয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সহকারীর কাছ থেকে।

চলতি বছরের ১৪ অগস্ট বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে স্বাভাবিক কারণেই তৃণমূলের কোনও কর্মসূচিতে তাঁদের আর ডাক পাওয়ার অবকাশ ছিল না। কিন্তু অচিরেই বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গেও শোভনদের দূরত্ব তৈরি হয়। বিজেপির কর্মসূচিও তাঁরা এড়িয়ে চলতে থাকেন। অবশেষে ভাইফোঁটার দিন শোভন-বৈশাখী একসঙ্গে হাজির হয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। ফলে শোভনদের ‘ঘর-ওয়াপসি’র জল্পনা জোরদার হয়ে ওঠে।

জল্পনা যে দিকেই গড়াক, শোভন চট্টোপাধ্যায় কিন্তু তৃণমূলে ফেরেননি। আনুষ্ঠানিক ভাবে এ কথাও ঘোষণা করেননি যে, তিনি আর বিজেপিতে নেই। শুধু ধোঁয়াশা বজায় রেখে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শোভন-বৈশাখী গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু সেটা ছিল সরকারি আমন্ত্রণ। বিধায়ক বা রাজনীতিক হিসেবে সে অনুষ্ঠানে যাওয়া বা সে আমন্ত্রণ স্বীকার করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা শোভনের সামনে ছিল না। একই ভাবে শোভনকে নিমন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা রাজ্য সরকার বা চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকদের সামনেও ছিল না। কিন্তু ৩ জানুয়ারি যে কর্মসূচির জন্য শোভনকে ডাকা হয়েছে, সেটা কোনও সরকারি কর্মসূচি নয়। সেটা একেবারেই তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচি। এবং সে কর্মসূচিতে শোভনকে ডাকার অর্থ হল, শোভন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরেছেন বলে ধরে নেওয়া। মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের।

কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কি যাচ্ছেন ৩ জানুয়ারির বৈঠকে? শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বৃত্ত জানাচ্ছে, যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

কেন প্রশ্ন ওঠে না? প্রাক্তন মেয়রের ঘনিষ্ঠরা একাধিক কারণ উল্লেখ করছেন। তাঁরা বলছেন প্রথমত, শোভন চট্টোপাধ্যায় এখনও একবারও ঘোষণা করেননি যে তিনি বিজেপি ছেড়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, শোভন চট্টোপাধ্যায় যে মাপের নেতা, তাতে তাঁকে কোনও বৈঠকে ডাকতে হলে আমন্ত্রণ যাওয়া উচিত কোনও সিনিয়র নেতার তরফ থেকে। কিন্তু তার বদলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সহকারীর কাছ থেকে আমন্ত্রণ, তা-ও আবার ফোন করে নয় এসএমএসে। এই আমন্ত্রণ শোভনের জন্য একেবারেই সম্মানজনক নয় বলে শোভন ঘনিষ্ঠদের মত। তৃতীয়ত, শোভনকে এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও হাসাহাসি চলছে বলে শোভন ঘনিষ্ঠরাই জানাচ্ছেন। যাঁকে নিজের ওয়ার্ডে বা নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতেই রাখা হয়নি, তিনি ওই কর্মসূচির রিভিউ বৈঠকে গিয়ে কী করবেন? প্রশ্ন কারও কারও।

সপ্তাহ খানেক আগে বিজেপি নেতৃত্ব শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন জে পি নড্ডার মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য। শোভন-বৈশাখী সেখানেও যাননি। তবে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে ফোনে শোভনের কথা হয়েছিল। বিজেপির আমন্ত্রণ ‘খুব আন্তরিক’ বলেও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন।

তৃণমূলের দিক থেকে আসা আমন্ত্রণের বিষয়ে কিন্তু সে রকম কোনও বিশেষণ শোভন বা বৈশাখীর কাছ থেকে মেলেনি। শোভন বিষয়টি নিয়ে কোথাও মুখ খোলেননি। তবে যাঁর কাছ থেকে তিনি এসএমএস পেয়েছেন, তাঁকে কোনও জবাবও শোভন দেননি বলে জানা গিয়েছে। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘এ রকম অনেক রাজনৈতিক কর্মসূচির আমন্ত্রণই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আসে। সব আমি জানতে পারি না। খুব গুরুত্বপূর্ণ আমন্ত্রণ হলে হয়তো আমার সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু অন্য সব আমন্ত্রণের কথাও যে আমি জানতে পারি, তা তো নয়। এই বিষয়টাও জানি না। জানার আগ্রহও নেই।’’

তৃণমূল ছাড়ার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে দূরত্ব শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তৈরি হয়েছিল, তা পরে অনেকটা কমেছে বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত। কিন্তু চাকরি থেকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা দীর্ঘ দিন নিতে না চাওয়া শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি যে ভাবে আচমকা গ্রহণ করে নিয়েছেন সে পদত্যাগপত্র, তার জেরে সমীকরণ ফের জটিল হয়েছে। শোভন নিজেও বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তার পরেও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ৩ জানুয়ারির বৈঠকে ডাকা হয়েছে। বৈশাখীকে বাদ দিয়ে একা শোভন স্বাগত— এই বার্তাই কি দিতে চাওয়া হয়েছে? হেসে জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE