মেরামতি: বাঁকুড়ার লালবাজারের একটি গ্যারাজে। নিজস্ব চিত্র
কোনও গাড়ির ব্রেক ও ক্লাচে মরচে পড়ে গিয়েছিল। কোনও গাড়ির আবার ব্যাটারির জল শুকিয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় এমনই অবস্থা হয়েছিল মাইন-রোধক গাড়িগুলির। সেই সব গাড়িকে মেরামত করে ফের বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে টহল দিতে নামতে চলেছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। সেই সঙ্গে এক সময়কার মাওবাদী উপদ্রুত এলাকার খবরাখবর সংগ্রহেও তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকায় বসানো হচ্ছে বেশ কয়েকশো সিসি ক্যামেরা (ক্লোজ়ড সার্কিট ক্যামেরা) ও ওয়াচ টাওয়ার।
বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “মাইন প্রোটেক্টেড ভেহিকেলগুলি নিয়ে ফের জঙ্গলমহলে টহল দিতে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে জন্য গাড়িগুলি মেরামত করা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের পুলিশের যোগাযোগ আরও বাড়ানো হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকায় পুলিশ কর্তারা গিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলছেন। প্রতিটি গ্রামের খুঁটিনাটি বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বলা হয়েছে। গোয়েন্দারাও সক্রিয় রয়েছেন। নিয়মিত পুলিশি টহলও চলছে।
জঙ্গলমহলে অশান্তির সময় বাঁকুড়া জেলা পুলিশ পাঁচটি মাইন-নিরোধক গাড়ি পেয়েছিল। তখন ওই গাড়ি নিয়ে জঙ্গলের পথে টহল দিত বাহিনী। কিন্তু, পরিস্থিতি পাল্টানোয় দীর্ঘদিন কার্যত পড়েছিল গাড়িগুলি। জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে না চলার জন্য গাড়িগুলির কিছু যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে পড়েছিল। কিছু গাড়ির আলোও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিছু গাড়ির আবার ‘সিট কভার’ ছিঁড়ে গিয়েছিল। মোবিল না পাল্টানোয় কিছু গাড়ির ইঞ্জিনেও গোলমাল দেখা দিয়েছিল। বাঁকুড়া শহরে গাড়িগুলি মেরামত করতে আনা হয়েছিল। প্রতি গাড়ির পিছনে কয়েক হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল বলে পরিচিত রানিবাঁধ, বারিকুল, রাইপুর, সারেঙ্গা প্রভৃতি এলাকায় রাজ্যে পালাবদলের আগে মাওবাদী নাশকতায় অনেক রক্ত ঝরেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বারিকুল থানার ওসি প্রবাল সেনগুপ্ত, সারেঙ্গার আইসি রবিলোচন মিত্র, তিন সিআরপি জওয়ান-সহ সিপিএমের নেতা-কর্মী মিলিয়ে কমবেশি ৫০ জনকে মাওবাদীরা খুন করেছে। ২০১১ সালের পর পরিস্থিতি পাল্টায়। বারিকুলের খেজুরখেন্নার ছেলে, শীর্ষ মাওবাদী নেতা রঞ্জিত পাল-সহ অনেক স্কোয়াড সদস্য আত্মসমর্পণও করেন।
তবে, ইদানীং গোয়েন্দারা ফের জঙ্গলমহলে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় থেকে চার জনকে মাওবাদী কার্যকলাপে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোয়ালতোড় লাগোয়া সারেঙ্গার কিছু যুবকের বাইরে কাজ করতে যাওয়াও সন্দেহের তালিকায় রয়েছে পুলিশের। তাঁরা কোথায় গিয়েছেন, কী করছেন, খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, খাতড়া-সহ কয়েকটি জায়গায় একটি সর্বভারতীয় অতিবাম ছাত্র সংগঠনের কিছু সদস্য সম্প্রতি ঘুরে গিয়েছেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বাঁকুড়া জেলায় এখনও পর্যন্ত মাওবাদীদের আনাগোনার খবর না থাকলেও তাঁরা যে লিঙ্কম্যান তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে, সে ব্যাপারে কিছু তথ্য হাতে এসেছে।’’
এরই মধ্যে ২৮ নভেম্বর বাঁকুড়ায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে জঙ্গলমহলে নজরদারি চালাতে নির্দেশ দিয়ে যান। তারপরেই নড়াচড়া শুরু হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের পাঁচটি থানায় প্রায় ১৩০০টি সিসি ক্যামেরা ও ১৪টি ওয়াচ টাওয়ার বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy