অপরূপা বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র
গলা থেকে ন’টি সুচ বার করার আট মাসের মাথায় মৃত্যু হল কৃষ্ণনগরের কিশোরী অপরূপা বিশ্বাসের। বছর চোদ্দোর ওই কিশোরীর মৃত্যু হয় গত মঙ্গলবার। অপরূপার মৃত্যুতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত জুলাইয়ে কৃষ্ণনগর নরেন্দ্রনগর অক্ষয় বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া অপরূপাকে ন’টি সুচবিদ্ধ অবস্থায় কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় অস্ত্রোপচার করে তার গলার ভিতর থেকে ন’টি সুচ বার করেন। কিন্তু কী করে এতগুলি সুচ ওই কিশোরীর গলায় ঢুকল, অপরূপার বাবা-মা সেই বিষয়ে তখন কিছুই জানাননি। তবে নীলরতনের চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, ওই কিশোরীর গলার যে-জায়গা থেকে সুচগুলি বেরিয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, সে নিজে সেগুলি ঢোকায়নি।
অভিযোগ, গত বছরের ওই ঘটনার পরেই অপরূপার বাবা অধীর বিশ্বাস ও মা অর্পিতা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মেয়েকে তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং শরীরে সুচ ঢোকানোর অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ ঠিকমতো তদন্ত করেনি। এমনকি অপরূপাকে তখন শিশু কল্যাণ সমিতির সামনে হাজির করানো হয়নি। উল্টে অপরূপাকে তার বাবা-মায়ের হাতেই দেয় পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, অপরূপার বাবা-মাকে দিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত চালায় পুলিশ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অপরূপারই গলায় ফুটে ছিল ন’টি সুচ। —নিজস্ব চিত্র
এতেই আপত্তি তুলে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে তথ্যানুসন্ধান শুরু করেন অরিজিৎ অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, একাধিক পড়শি এবং খোদ অপরূপার দাদু সেই সময় নিজের মেয়ে-জামাইয়ের বিরুদ্ধে নাতনিকে তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং সুচ ঢোকানোর অভিযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ সেটাকে গ্রাহ্য করেনি। অরিজিৎবাবুর আরও অভিযোগ, পুরো বিষয়টি সেই সময় নদিয়ার শিশু কল্যাণ সমিতির দায়িত্বে থাকা মুর্শিদাবাদের শিশু কল্যাণ সমিতির সমিতির চেয়ারপার্সন শবনম রামস্বামীকে জানানো হলেও তিনি ব্যবস্থা নেননি। শিশু সুরক্ষা কমিশনকে সব জানিয়েও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ অরিজিৎবাবুর।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ওই কর্মীর আরও অভিযোগ, ‘‘বারবার পুলিশ, শিশু কল্যাণ সমিতিকে বলেছিলাম, মেয়েটিকে হোমে রেখে ঘটনার তদন্ত করা হোক। কিন্তু তাতে কান না-দেওয়ায় মেয়েটি মারা গেল।’’
কোতোয়ালি থানা এই অভিযোগ মানতে রাজি নয়। থানা জানিয়েছে, মেয়েটির বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মেলেনি। তাই অভিযোগ দায়ের হয়নি। মুর্শিদাবাদ শিশু কল্যাণ সমিতির তৎকালীন চেয়ারপার্সন শবনম রামস্বামী বলেন, ‘‘অনেক জেলা সামলাতে হত। আমি কিছু জানি না। অন্য দুই সদস্য জানতে পারেন।’’ বক্তব্য জানতে শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি, জবাব দেননি এসএমএসের।
অপরূপার মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে পড়শিরা অভিযোগ তোলায় পুলিশ দেহের ময়না-তদন্ত করিয়েছে। এখনও রিপোর্ট মেলেনি। অধীর-অর্পিতার আগে আরও দু’টি সন্তান ছিল। বছর চারেক আগে তাঁদের শিশুপুত্রের মৃত্যু হয়। এক শিশুকন্যাকে তাঁরা বেআইনি ভাবে দত্তক নিয়েছিলেন। সে-ও কয়েক মাসের মাথায় মারা যায়। পরপর দুই সন্তানের মৃত্যু, বেআইনি ভাবে এক শিশুকে দত্তক নেওয়া, অপরূপার গলায় ন’টি সুচ পাওয়া এবং পরে অপরূপার রহস্যজনক মৃত্যু— পুরো ঘটনাচক্র সম্বন্ধে জানতে চেয়ে অর্পিতাদেবীকে ফোন করলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘আগের দু’জনের ব্রঙ্কাইটিস হয়েছিল। আর মেয়েটিকে আমি কুড়িয়ে পেয়েছিলাম।’’
আর অপরূপার মৃত্যু? অর্চিতাদেবীর উত্তর ‘‘রক্তচাপ বেড়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছে।’’ কিন্তু মেয়ের গলায় সুচ ঢুকল কী ভাবে? প্রশ্ন শুনেই ফোন কেটে দেন অর্পিতাদেবী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy