Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘দিশা’ই দিশাহীন, সরব আশাকর্মীরা

প্রসবের সময় গ্রামগঞ্জের বাড়ি থেকে মহিলাদের হাসপাতালে আনার কাজ করেন ব্লকের আশাকর্মীরা। অসুস্থ মা, শিশু এবং বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্তদেরও হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা।

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ০৩:৪৫
Share: Save:

হাসপাতাল-চত্বরে প্রকল্পের স্বার্থে রাতে থাকতে হবে মহিলাদের। তাই আশাকর্মীদের নিরাপত্তায় রেখে পৃথক বিশ্রামঘরের সঙ্গে শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল নির্দেশিকায়। কিন্তু দীর্ঘ সাত বছরেও ‘দিশা’ প্রকল্পের জন্য সেই পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ আশাকর্মীদের। কোথাও পুরুষ কর্মীদের সঙ্গে শৌচাগার ভাগ করার ‘পরামর্শ’ দিচ্ছেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ, কোথাও বা আশাকর্মীদের বিশ্রামঘরের বাসিন্দা হয়ে উঠেছেন হাসপাতালের রক্ষীরা!

প্রসবের সময় গ্রামগঞ্জের বাড়ি থেকে মহিলাদের হাসপাতালে আনার কাজ করেন ব্লকের আশাকর্মীরা। অসুস্থ মা, শিশু এবং বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্তদেরও হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। গ্রামগঞ্জে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার অন্যতম মুখ আশাকর্মীরাই। তাই ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল স্বাস্থ্য দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করে জানায়, প্রসূতি বা অন্য রোগীদের সঙ্গে রাতেও আশাকর্মীদের হাসপাতালে থাকতে হয়। তাই হাসপাতাল-চত্বরেই তাঁদের থাকার বন্দোবস্ত করা দরকার। সেই প্রকল্পেরই নাম ‘দিশা’। নির্দেশিকায় বলা আছে, দিশায় মহিলাদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। হাসপাতাল-চত্বরের মধ্যে নিরাপদ জায়গায় ‘হেল্প ডেস্ক’ তথা বিশ্রামকক্ষ নির্মাণ করতে হবে। দু’কামরার ঘরে বসার জায়গা, বিশ্রামের জন্য শয্যা এবং কক্ষ সংলগ্ন শৌচাগার থাকবে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

খানাকুল এক নম্বর ব্লকের আশাকর্মীদের অভিযোগ, গ্রামীণ হাসপাতালে যে-শৌচাগার রয়েছে, তা হেল্প ডেস্কের ঘর থেকে অনেক দূরে। গ্রুপ ডি-র পুরুষ কর্মীরাও তা ব্যবহার করেন। আশাকর্মীরা বলেন, ‘‘শৌচাগার এত দূরে যে, রাতে যেতে ভয় পাই। দিনের বেলাতেও ওই শৌচাগার ব্যবহার করতে অস্বস্তি হয়। ছেলেরাও তা ব্যবহার করছে! কর্তৃপক্ষ বলে দিয়েছেন, মেয়েদের আলাদা শৌচাগার দেওয়া সম্ভব নয়। ছেলেদের সঙ্গেই শৌচাগার ভাগ করতে হবে!’’

ওই ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক সুশান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘দিশার জন্য আমাদের আলাদা ঘর নেই। অস্থায়ী একটা ঘর রয়েছে। শৌচাগার নিয়ে অভিযোগ ঠিক নয়। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য তৈরি স্টাফ বাথরুম আশাকর্মীরা ব্যবহার করতেন। এখন নতুন শৌচাগার পাওয়া গিয়েছে। সেটি আশাকর্মীরা ব্যবহার করবেন।’’

উলুবেড়িয়া দু’নম্বর ব্লকের আশাকর্মীদের অভিযোগ, সেখানে দিশার ঘর হাসপাতালের রক্ষীরাও ব্যবহার করেন। শৌচাগার অত্যন্ত নোংরা। আশাকর্মীদের কথায়, ‘‘দিশার কথা কী বলছেন? যে-সব কাজ করার কথা নয়, আমাদের দিয়ে তা-ও করানো হচ্ছে। চিকিৎসক প্রসূতিদের কী পরামর্শ দিচ্ছেন, তা শুনতে গেলে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে।’’ ১৬ এপ্রিল হাসপাতালের সুপারকে সব জানানোর পরে অবস্থার কিছু বদল ঘটেছে।

পরিকাঠামোগত ত্রুটির প্রশ্নে দিশা নিয়ে অভিযোগ আছে অন্যত্রও। সেই জন্য মুর্শিদাবাদের রানিনগর এক নম্বর ব্লকের হুড়শি, লোচনপুরে দিশা চালু করা যায়নি বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে। ময়নাগুড়ি ব্লকে দিশায় আপত্তি রয়েছে আশাকর্মীদের। পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের সম্পাদিকা ইশমত আরা খাতুন বলেন, ‘‘রাজ্যের ৮০-৮৫% ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। সেই জন্য অনেক জায়গায় দিশা শুরু করা যায়নি। আমরা বলছি, উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও প্রশিক্ষণ ছাড়া দিশার কাজ করবেন না আশাকর্মীরা।’’

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, পৃথক ঘর, শৌচাগার তৈরির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না-পাওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে। ধীরে ধীরে পরিকাঠামোগত সমস্যার সমাধানও করা হচ্ছে। ‘‘এক দিনে তো সব করে দেওয়া সম্ভব নয়। ঘর সংলগ্ন না-হলেও কিছুটা দূরে যাতে শৌচালয় হয়, তা দেখা হচ্ছে। আশাকর্মীরা যাতে রাতে নার্সদের শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন, তা-ও বলা আছে। নিরাপত্তার অভাবে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, এমন অভিযোগ এখনও পর্যন্ত পাইনি,’’ বলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE