আরাবুল ইসলাম। -ফাইল চিত্র।
ভাঙড়ের মাটিতে, নিজের খাস তালুকে নিজে জিতে, ছেলেকে জেতালেও, শেষ পর্যন্ত জমি খোয়ালেন আরাবুল ইসলাম। তাঁর জমিতেই লাঙল-কোদাল দিয়ে চষে ফসল তুলে নিয়ে গেল পাওয়ার গ্রিড বিরোধী জমি রক্ষা কমিটি।
ভাঙড়ের এই ‘তাজা নেতা’র হাতিয়ারেই তাঁকে বধ করে পোলেরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচটি আসনে নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনল কমিটি। সঙ্গে প্রমাণ করে দিল, এই মুহূর্তে কমিটিই ভাঙড়ের এক সময়ের ‘বেতাজ বাদশা’-র সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, যারা আরাবুলের রাজনৈতিক অস্তিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
নির্বাচনের দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ভাঙড়ের এই আটটি আসনের ফলাফল কী হতে চলেছে। পোলেরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬টি আসনের মধ্যে পাওয়ার গ্রিড সংলগ্ন আটটি আসন এবং একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসন ছাড়া বাকি সব আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করেছিলেন আরাবুল। কিন্তু ভোটের লড়াই যেখানে সরাসরি হয়েছে, সেই আটটি আসনের মধ্যে পাঁচটিই হারলেন আরাবুল। কমিটির যুগ্ম সচিব মির্জা হাসানের দাবি,“আমরা ভোটের দিন সকাল থেকেই বলেছিলাম, উত্তর গাজিপুর, দক্ষিণ গাজিপুরের পাঁচটি বুথে ভোট লুঠ করেছে আরাবুলের বাহিনী। যেখানে যেখানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে, মানুষ ভোট দিতে পেরেছে, সেখানে আমরা জিতেছি। ওই পাঁচটি বুথেও যদি অবাধ নির্বাচন হত, তা হলে ফলাফল অন্যরকম হত।”
পাওয়ারগ্রিড বিরোধী জমিরক্ষা কমিটির জয়ী ৫ প্রার্থী: এসরাফিল মোল্লা, (বাঁ দিক থেকে), ফরিদুদ্দিন, ছালোয়ারা বিবি, জাহানারা বিবি এবং আজিজুল মোল্লা
নির্বাচনের দিনে সকালেই ব্যাপক সংঘর্ষের সাক্ষী ছিল উত্তর গাজিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথ। আরাবুলের ছেলে হাকিমুল এই আসনে প্রার্থী। হাকিমুল এই আসনে ১২৮৭ ভোটে জয়ী হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কমিটির প্রার্থী এন্তাজুলের ঝুলিতে পড়েছে মাত্র ৪০টি ভোট।
আরও পড়ুন- আরাবুলহীন ভাঙড়ে দাপাল তাঁর ‘ছায়ারা’
আরও পড়ুন- লক আপে থেকেও কমিটিকে ওয়াকওভার দিলেন না আরাবুল
দক্ষিণ গাজিপুরের দু’টি আসনেও জয়ী তৃণমূল প্রার্থী আহাদ বক্স এবং ঝিলিক বিবির বিরুদ্ধে কমিটির প্রার্থীদের ভোট দুই অঙ্ক ছাড়ায়নি। আর সে কারণেই কমিটির দখলে থাকা মাছিভাঙাতে ভোট না পেলেও বাকি পাঁচটি বুথে পাওয়া ভোটের জোরে পঞ্চায়েত সমিতিতে ২২৬৫ ভোটে জিততে অসুবিধা হয়নি আরাবুলের।
বৃহস্পতিবার নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,“আমরা কোনও কিছু ঘটলেই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কেউ কোনও অভিযোগ করার আগেই আরাবুলকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছি। জানিনা সে আদৌ দোষী কী না। তবে গ্রেফতার হওয়ার পরও আরাবুল জিতেছে। ওর বউ-ছেলেও জিতেছে। তার মানে ওকে মানুষ ভালবাসে।” মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য শুনে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, আরাবুলের গ্রেফতারি লোক দেখানো। আরাবুলের মাথার ওপর মুখ্যমন্ত্রীর আশীর্বাদের হাত আগেও ছিল, গ্রেফতারের পরেও ছিল, আ এখনও আছে, তা তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট।
তাই লড়াই আর এখন অসম নয়। এই ফলাফল আগামী দিনে ভাঙড়ের বুকে আরও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে রাখল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy