বোলপুরে সশস্ত্র বাইক মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।
মনোনয়ন জমা হোক বা না হোক, অস্ত্রের দাপট কমছে না। বীরভূমে মঙ্গলবারও ত্রাসের আবহ বিরোধী শিবিরে। বোলপুরের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াল বিশাল সশস্ত্র বাইক মিছিল। বিনা বাধায় সে বাহিনী ঢুকে পড়ল মহকুমা শাসকের দফতর চত্বরে। পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর দেখাই মেলেনি সে মিছিলের ধারেকাছে।
মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছিল যে দিন থেকে, সে দিন থেকেই তুমুল অশান্তি দেখেছে বীরভূম। রামপুরহাট, সিউড়ি, বোলপুর, ময়ূরেশ্বর, হাঁসন, মহম্মদবাজার, মল্লারপুর— বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রের দাপট দেখা গিয়েছে। কোথাও বিডিও অফিস-এসডিও অফিস ঘিরে রেখে বিরোধীদের ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। কোথাও রাস্তায় সশস্ত্র বাহিনী নামিয়ে, বোমাবাজি করে, গুলি চালিয়ে বিডিও বা এসডিও অফিসের বহু দূরেই আটকে দেওয়া হয়েছে বিরোধীদের।
শুধু বীরভূমেই অবশ্য নয়, হিংসার ছবিটা আরও অনেক জেলাতেই একই রকম ছিল। প্রত্যেকটি বিরোধী দলই নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাচ্ছিল। তার প্রেক্ষিতে সোমবার রাতে পদক্ষেপ করে কমিশন। মঙ্গলবারও মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টে জোর ধাক্কা, সময়সীমা নিয়ে কমিশনের নির্দেশ স্থগিত
মঙ্গলবার সকাল থেকে তাই ফের মনোনয়ন জমা নেওয়া শুরু হয়েছিল। পরে অবশ্য কমিশন নিজের নির্দেশই বাতিল করে দেয়। মঙ্গলবার সকালে জানানো হয়, আজ আর কোনও মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে না।
মনোনয়ন যে আজ আর জমা নেওয়া হবে না, সে নির্দেশ জেলায় জেলায় পৌঁছতে অবশ্য বেলা কিছুটা গড়িয়ে গিয়েছিল। তাই শাসক দল আশ্রিত সশস্ত্র বাহিনীর দাপট এ দিনও দেখা গিয়েছে রাস্তায়। কারণ বিরোধীদের মনোনয়ন রুখতে সকাল থেকেই রাস্তায় নেমে পড়েছিল সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা।
সবে মনোনয়ন জমা শেষ হয়েছে। প্রত্যাহার পর্ব এখনও বাকি। তার আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে যে, জেলা পরিষদের ৪২টি আসনের মধ্যে ৪১টি-তে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছে তৃণমূল। ১টি আসনে বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে। সেই আসনটিতে ভোট হবে। জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতি একই ভাবে অনুব্রত মণ্ডলের দখলে চলে গিয়েছে। চলে গিয়েছে সিংহভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতও।
আরও পড়ুন: কমিশন জমা নিলেও ঝুলে ১৪৩
ভোটের আগেই এই জয় নিয়ে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের সমালোচনা শুরু হলেও অনুব্রত ব্রিগেড কিন্তু বিব্রত নয়। আবির মেখে, মিষ্টি খেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদকে প্রায় বিরোধীশূন্য করে ফেলার ‘সাফল্য’ উদযাপন করেছে জেলা তৃণমূল।
মঙ্গলবার ফের যদি মনোনয়ন জমা নেওয়া হত এবং কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখত, তা হলে অনেক আসনেই বিরোধী দলগুলি মনোনয়ন জমা দিয়ে দিত। সে ক্ষেত্রে ভোটের আগেই ভোট জিতে যাওয়ার খুশি ম্লান হয়ে যেতে পারত। তেমনটা যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্যই সশস্ত্র বাইক বাহিনী সকাল সকাল রাস্তায় নেমে পড়েছিল বলে বিরোধীদের দাবি। মনোনয়ন জমা নেওয়ার নির্দেশ পরে বাতিল হয়ে যাওয়ায় বাইক বাহিনীকে অবশ্য আর ‘পরিশ্রম’ করতে হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy