Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শাসকের চেয়ে অনেক পিছিয়েও দ্বিতীয় বিজেপি

রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, রাজ্যের বহু জায়গায় তৃণমূলের ‘দাপট’ থেকে বাঁচতে সব বিরোধী দলের সমর্থকেরাই বিজেপি-কে সমর্থন করেছে। আবার কোথাও নির্দল হয়ে দাঁড়ানো ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল প্রার্থীদের কাছে টেনেছে বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০৪:৪৭
Share: Save:

শাসক তৃণমূলেরই দাপট সর্বত্র। তাদের চেয়ে অনেকটা পিছনে থেকেও পঞ্চায়েতে দ্বিতীয় স্থান পেল বিজেপি।

রাজ্যে সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন নির্বাচন ও উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে আসছিল বিজেপি-ই। পঞ্চায়েত ভোটে সেই প্রবণতাই অব্যাহত। অতীতে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলায় বিরোধী হিসেবে কংগ্রেসের দাপট ছিল। এ বার কংগ্রেসের ঘাঁটি ধূলিসাৎ। বামেরাও কোনও জেলায় সামগ্রিক ভাবে চোখে পড়ার মতো ফল করতে পারেনি। কিন্তু তার মধ্যেও নবগঠিত জেলা ঝাড়গ্রামে গ্রাম পঞ্চায়েতের যে ৭৮০ আসনে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৩৭৩ এবং বিজেপি ৩২৯। পুরুলিয়ার মোট গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ১৯৪৪টি। তার মধ্যে ভোট হয়েছে ১৯২১টিতে। সেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৭৬৪টি এবং বিজেপি ৬৩১টি আসন। বাঁকুড়ায় মোট ২৫০৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ভোট হয়েছে ৯১২টিতে। রাত পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, তার মধ্যে তৃণমূল ৫৪৫ এবং বিজেপি ২৩৪টি পেয়েছে।

রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, রাজ্যের বহু জায়গায় তৃণমূলের ‘দাপট’ থেকে বাঁচতে সব বিরোধী দলের সমর্থকেরাই বিজেপি-কে সমর্থন করেছে। আবার কোথাও নির্দল হয়ে দাঁড়ানো ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল প্রার্থীদের কাছে টেনেছে বিজেপি। এই দুইয়ের রসায়নেই পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের মধ্যে ভাল ফল করেছে তারা। পাশাপাশিই, বিজেপি-র একাংশের ব্যাখ্যা, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে, সীমান্তবর্তী এলাকায়, জনজাতি অধ্যুষিত আসনে এবং যে সব জায়গায় কোনও না কোনও ভাবে ধর্মীয় মেরুকরণ করা সম্ভব হয়েছিল, সেখানে তারা ভাল করেছে।

আরও পড়ুন: জিতেও হেরে ফের জিতলেন আনসার

বাম এবং কংগ্রেস অবশ্য এই পঞ্চায়েত ভোটের ফল থেকে কারও শক্তি যাচাইয়ের বিশ্লেষণে যেতে নারাজ। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, ‘‘অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটেনি। বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত তৈরি করে সাত বছরে মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম কথা রাখলেন!’’ তৃণমূল এবং বিজেপি, এই দুই শক্তির বিরুদ্ধেই যে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই জারি রাখতে হবে, বৃহস্পতিবার ফের তা মনে করিয়ে দিয়েছেন সূর্যবাবু। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়েরা এ দিনই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে দাবি জানিয়েছেন, বাংলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারা জারি করা উচিত। অধীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোটের দিন তাণ্ডব চলেছে। গণনা কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে ছাপ্পা দেওয়া হয়েছে। বৈধ ভোটকে অবৈধ করে দেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচন সম্পূর্ণ প্রহসন!’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘মালদহ, দুই দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূমের মহম্মদ বাজার, আমার নিজের গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি জিতেছে। আমরা দ্বিতীয়ই ছিলাম। এ বার তৃণমূলের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলব।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনই জানিয়েছেন, বিজেপি-সহ বিরোধীদের জয়ী প্রার্থীদের অনেকেই তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। যা জেনে দিলীপবাবুর জবাব, ‘‘আমি যদি ওঁকে বলি, তৃণমূলের অনেক বিধায়ক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন! সময়ে সব বোঝা যাবে। আর উনি যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, সেটা কে বলবে?’’ বিজেপি-র পঞ্চায়েত কমিটির সহ-আহ্বায়ক শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল কোনও রাজনৈতিক দল নয়। ওরা একটা হিংস্র জনগোষ্ঠী। কিন্তু ওরা সন্ত্রাস করেও আমাদের আটকাতে পারেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE