পঞ্চায়েত ভোটের আগে দু’দলের রাজনৈতিক লড়াই ছিলই। রামনবমীকে ঘিরে দু’দলের রেষারেষি এক লপ্তে বাংলা জু়ড়ে এনে দিল ধর্মীয় উন্মাদনা!
কে কত বড় রাম-ভক্ত, রবিবার দিনভর তার প্রমাণই যেনে রেখে গেল বিজেপি এবং তৃণমূল। গেরুয়া শিবিরের নানা সংগঠনের ডাকে রামনবমীর আয়োজন অবশ্য পরম্পরাগত। বিবিধ সংগঠনের উদ্যোগেই পাঁচশোর বেশি জায়গায় মিছিল-উৎসবে যোগ দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। সঙ্গে তৃণমূলও এ বার আনুষ্ঠানিক ভাবে রমনবমী পালনে নেমে পড়ায় তিথি-পালনের নামে রীতিমতো টক্কর লেগেছে বাংলায়। এক দিকে খড়গপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ গদা-তরোয়াল নিয়ে মিছিল করে, দু’হাতে লাঠি খেলা দেখিয়ে প্রচারের আলো টানার চেষ্টা করেছেন। অন্য দিকে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী তমলুকে রামের উৎসবে সামিল হয়ে ‘ভারতমাতা কী জয়’ ধ্বনি দিয়েছেন! আলিপুরদুয়ারে অরাজনৈতিক সংগঠনের রামনবমীর মিছিলে বিজেপি নেতাদের পাশাপাশিই হেঁটেছেন তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। কাঁথিতে আবার ‘জয় শ্রী রাম’ লেখা নীল ফেট্টি বেঁধে পথে নেমেছেন তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী।
আর গোটা রাজ্য জুড়ে অহরহ শোনা গিয়েছে তীব্র ডিজে বক্স এবং ‘জয় শ্রী রাম’ চিৎকার!
বাইরে ধর্মীয় উৎসব হলেও ভিতরে রাজনীতির অঙ্ক অবশ্য যথারীতি হাজির। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলকে সংখ্যালঘু তোষণের দায়ে অভিযুক্ত করে রাজনীতির ফায়দা তোলার চেষ্টায় নেমেছে বিজেপি। গেরুয়া পালে যাতে সংখ্যাগুরুর পুরো হাওয়া না লাগে, সেই দিকে নজর দিতেই গত বছর থেকে রামনবমী এবং হনুমান জয়ন্তী উদযাপন শুরু করেছে তৃণমূল। এ বার পঞ্চায়েত এবং পরের বছরের লোকসভা ভোটের ঘর গোছানোর আবহে আনুষ্ঠানিক ভাবেই তারা রামনবমী পালনের কর্মসূচি নিয়েছিল। কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় নানা কর্মসূচিতে গিয়ে তৃণমূলের নেতারা বিজেপির প্রতি পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘রাম কি ওদের একার?’’ নিজেরা পালন করেও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ এনেছেন! স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা টুইটে রামনবমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সাবালকের মিছিলে অস্ত্র নাবালকও, নিন্দায় বিশিষ্টরা
তৃণমূল এবং বিজেপি নেতাদের রাস্তায় নেমে এবং কোথাও কোথাও অস্ত্র হাতে রামভক্তি ব্যক্ত করতে দেখে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘এক দল রাম সাজলে অন্য দল হনুমান সাজছে! প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা একেই বলে। আবার বলছি, বাংলার মানুষকে সতর্ক হতে হবে।’’ তৃণমূলের নেতারা আবার জানিয়ে রেখেছেন, এর পরে হনুমান জয়ন্তীতে তাঁরা ফের রামভক্তিতে শান দেবেন!
গেরুয়া সংগঠনের নানা মিছিলে মূলত যে রামকে এ দিন চোখে পড়েছে, তিনি বনবাসী। আর তৃণমূলের ব্যানারে-পোস্টারে রাম রাজবেশী। রাজ্যে দু’পক্ষের অবস্থানের প্রতীকী ছবি হয়তো! তবে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা দলনেত্রী মমতা, কন্যাশ্রী বা খেলাশ্রী— সব রকমের ছবি নিয়েই বেরিয়ে প়ড়েছেন। তাঁদের দিদি আছেন, তাঁরা রামেও আছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy