Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Sabyasachi Dutta

অনাস্থাই আনা হচ্ছে, জানিয়ে দিল তৃণমূল, দেখতে থাকুন কী হয়, মন্তব্য সব্যসাচীর

বিধাননগর থেকে সব্যসাচী-কাঁটা উপড়ে ফেলতে অনাস্থা আনার পথে রাজ্যের শাসক দল।

সব্যসাচীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার প্রস্তাব দিয়েছেন তাপস চট্টোপাধ্যায় জানালেন ফিরহাদ হাকিম। ছবি: নিজস্ব চিত্র।

সব্যসাচীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার প্রস্তাব দিয়েছেন তাপস চট্টোপাধ্যায় জানালেন ফিরহাদ হাকিম। ছবি: নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ২০:৫৪
Share: Save:

শেষ অস্ত্র প্রয়োগের পথেই হাঁটল তৃণমূল। বিধাননগর থেকে সব্যসাচী-কাঁটা উপড়ে ফেলতে অনাস্থা আনার পথে রাজ্যের শাসক দল। রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশেই মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানালেন ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়। অনাস্থা প্রস্তাবে কাউন্সিলরদের দিয়ে সই করানোর কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানালেন তিনি। কিন্তু সে খবরেও অবিচলিত থাকার ভঙ্গি করে সব্যসাচীর সহাস্য মন্তব্য: ‘‘আগে আগে দেখিয়ে হোতা হ্যায় কেয়া।’’

দলের তরফ থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল সোমবার সকাল থেকেই। রবিবার বিধাননগরের কাউন্সিলরদের নিয়ে ফিরহাদ হাকিম তৃণমূল ভবনে বৈঠক করেছিলেন এবং সব্যসাচী দত্তকে অকেজো করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছিলেন, সে কথা ঠিকই। কিন্তু বৈঠক সেরে বেরিয়ে ফিরহাদ নিজে বা বিধাননগরের কাউন্সিলরদের কেউ সব্যসাচী সম্পর্কে তীব্র আক্রমণাত্মক মন্তব্য করার পথে হাঁটেননি। রবিবার রাতে মুকুল রায়ের সঙ্গে সব্যসাচীকে দেখা যাওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের সংযমের বাঁধ ভাঙতে শুরু করে। সোমবার সকালে ফিরহাদ স্পষ্ট জানান যে, তৃণমূল চাইছে সব্যসাচী দল ছেড়ে বেরিয়ে যান। সব্যসাচীকে ‘বেইমান’ এব ‘মিরজাফর’ বলে আক্রমণ করেন তিনি। দলে থেকে সব্যসাচী দত্ত যা করছেন, তা কিছুতেই সহ্য করা সম্ভব নয় বলেও পুরমন্ত্রী মন্তব্য করেন।

ফিরহাদের এই আক্রমণেও অবশ্য সব্যসাচী অবিচলিতই থাকেন। তাঁকে দলে আর প্রয়োজন নেই বা দল তাঁকে আর চাইছে না, সে কথা লিখিত ভাবে জানানো হোক, তার পর তিনি ভেবে দেখবেন কী করা যায়— জানান সব্যসাচী। দিনভর নানা মন্তব্যে নাম না করে ফিরহাদ হাকিমকে তো বটেই, দলের চেয়ারপার্সন তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কটাক্ষ করেন বিধাননগরের মেয়র। রবিবারই তাঁকে ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, পুর ভবনে আর ঢোকার প্রয়োজন নেই, এমন কথা শোনা গিয়েছিল তৃণমূল সূত্রে। সব্যসাচী সোমবার সে প্রসঙ্গে বলেন যে, শোনা কথার কোনও মূল্য তাঁর কাছে নেই। তিনি এখনও মেয়র পদেই রয়েছেন, তিনি পুর ভবনে যাবেন এবং কারও ক্ষমতা থাকলে তাঁকে আটকে দেখাক— এমন চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন তিনি। কথামতো তিনি পুর ভবনে যান এবং মেয়রের চেয়ারে বসে সাংবাদিক সম্মেলনও করেন সোমবার।

প্রতি পদক্ষেপে যে ভাবে দলের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাচ্ছিলেন সব্যসাচী দত্ত, তা তৃণমূলের পক্ষে নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর হচ্ছিল। তাই শেষ অস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনও উপায় তৃণমূলের সামনে রইল না। মেয়র পদ থেকে সব্যসাচীকে সরিয়ে বিধাননগর পুরবোর্ডের নিয়ন্ত্রণ আবার নিজেদের হাতে নিতে নিজেদের বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পথে হাঁটতে হল রাজ্যের শাসক দলকে।

ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায় সোমবার সন্ধ্যায় জানান, সব্যসাচী দত্ত নিজে থেকে ইস্তফা দেন কি না, তা দেখার জন্যই দল অপেক্ষা করছিল। যে হেতু তিনি ইস্তফা দিলেন না, তাই অনাস্থা আনার প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়া হল। ফিরহাদ হাকিম সকালেই তাঁকে ফোন করেছিলেন এব তাঁর নির্দেশ অনুযায়ীই সব হচ্ছে বলে তাপস চট্টোপাধ্যায় জানান। তিনি জানান, একতৃতীয়াংশ কাউন্সিলরের সই নিয়ে এবং অন্য যে সব নিয়মকানুন মেনে অনাস্থা আনতে হয়, সে ভাবেই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হচ্ছে। অনাস্থা প্রস্তাবে প্রথম সইটা তিনি নিজেই করেছেন, এমনও জানান তাপস।

আরও পড়ুন: বাইকে চেপে একের পর এক শ্লীলতাহানি, বাইকে রাখা জলের জারই ধরিয়ে দিল অধরা অভিযুক্তকে

সব্যসাচী দত্ত অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তিনি শুধু মনে করিয়ে দিয়েছেন, নিয়ম মেনে অনাস্থা আনতে হবে এবং অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে ভোটাভুটি হতে হবে। মেয়রের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘দেখতে থাকুন কী হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sabyasachi Duta TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE