এই বৈঠকেই প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত। নিজস্ব চিত্র
দিন তিনেক আগে ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট যখন জানিয়েছিল, সমকামিতা অপরাধ নয়, নিঃশব্দে আর একটি পরিবর্তন ঘটে গেল উত্তর ২৪ পরগনার সরবেড়িয়া গ্রামে! ঘটনাচক্রে সেদিনই।
ওই গ্রামেরই এক রূপান্তরকামী মানুষের আবেদনে সাড়া দিয়ে সরবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত গত ৬ সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সমকামী, রূপান্তরকামী, উভকামীদের সম্পর্কে গ্রামে সচেতনতা অভিযান চালানো হবে। প্রথম সচেতনতা সভা বসবে পঞ্চায়েত অফিস চত্বরেই, অক্টোবরের শুরুতে। এলাকার সব স্কুলকে এই অভিযানে শরিক করা হবে।
যে রূপান্তরকামী মানুষটির আবেদনে সাড়া দিয়ে পঞ্চায়েতের এমন সিদ্ধান্ত, তাঁর নাম অনুরাধা (আদি নাম অনিমেষ সরকার)। রূপান্তরকামী এই পুরুষটি কলকাতার একটি কলেজের পড়ুয়া। গ্রামের কয়েক জন নিয়মিত তাঁর উপর মানসিক ও শারীরিক নিগ্রহ চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘‘শহরে তবু কিছু সচেতনতা আছে। কিন্তু গ্রামের লোকের কাছে নারী-পুরুষ ছাড়া বাকি সকলেই হিজড়ে। সমকামী, রূপান্তরিতদের ব্যক্তি পরিসরকে সম্মান করা তাঁদের কল্পনাতীত। কিন্তু গ্রামেও তো রূপান্তরিত, সমকামীরা আছেন। তাঁরা চূড়ান্ত হেনস্থার শিকার হন। আমি ভাগ্যবান যে, গ্রামের মানুষকে সচেতন করতে পঞ্চায়েতকে পাশে পেলাম।’’
সরবেড়িয়ার পঞ্চায়েতপ্রধান শেখ শাহজাহানের কথায়, ‘‘অনুরাধা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। তাঁর উপর অত্যাচার হচ্ছিল, কারণ, গ্রামাঞ্চলে এই ধরনের মানুষদের সম্পর্কে সচেতনতা নেই। গ্রামের মানুষের চোখে এঁরা সকলেই অস্বাভাবিক, অপরাধী। তিনি আমাদের দ্বারস্থ হন। আমরা পঞ্চায়েত থেকে হেনস্থাকারীদের ডেকে হুঁশিয়ার করি। কিন্তু মানসিকতা না বদলালে এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে সেটা বোঝা গিয়েছিল। তখনই সচেতনতা অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’
শেখ শাহজাহান জানান, নাবালিকা-বিয়ে বন্ধ করা, কন্যাশ্রী প্রকল্প, কাজ দেওয়ার নামে মেয়েদের পাচার করা, স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহারের মতো বিষয়ে পঞ্চায়েত প্রচার চালায়। তার সঙ্গে এ বার যোগ হবে সমকামী, রূপান্তরিত, উভকামী মানুষদের সম্পর্কে সচেতনতা কর্মসূচি। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় সম্পর্কেও মানুষকে অবহিত করা হবে। এই কাজে পঞ্চায়েতকে সাহায্য করবে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রান্সজেন্ডার, হিজরাস ইন বেঙ্গল’ (এটিএইচবি) এবং ‘হিউম্যান রাইটস ল নেটওয়ার্ক।’
এটিএইচবি-র প্রধান রঞ্জিতা সিংহের মতে, ‘‘সমকামিতা একটা আচরণ আর রূপান্তরকামীরা একটা সম্প্রদায়। এঁদের মধ্যেও নানা ভাগ রয়েছে। এ সব নিয়ে অধিকাংশ মানুষই অজ্ঞ। গ্রামে অবস্থা আরও খারাপ। তাই সেখানে এই মানুষদের উপর অত্যাচার আরও বেশি। একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এই মানুষদের সমস্যাগুলিকে সামনে আনতে এবং গ্রামের মানুষদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে, এটাও ঐতিহাসিক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy