নিজাম প্যালেস থেকে বেরোচ্ছেন সিবিআই জয়েন্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ শ্রীবাস্তব। —নিজস্ব চিত্র
সিবিআই-কলকাতা পুলিশ সঙ্ঘাত আরও জোরদার হওয়ার ইঙ্গিত। সঙ্ঘাতের আবহেই এবার পাল্টা চাপের কৌশল নিল কলকাতা পুলিশ। এক ব্যবসায়ীর কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআই জয়েন্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ শ্রীবাস্তবকেই নোটিস ধরাল ভবানীপুর থানা। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে জয়েন্ট ডিরেক্টরের বয়ান রেকর্ড করার জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। সোমবার নিজাম প্যালেসে গিয়ে এই নোটিস দিয়ে আসেন পুলিশ অফিসাররা। সিবিআই-এর তরফে নোটিসের প্রাপ্তিস্বীকার করা হলেও মুখে কুলুপ এঁটেছে কলকাতা পুলিশ। অন্য দিকে রবিবার রাত থেকে ঘটনা পরম্পরা নিয়ে সোমবার দীর্ঘ বৈঠকের পর রিপোর্ট দিতে দিল্লিতে গেলেন সিবিআই জয়েন্ট ডিরেক্টর।
সিবিআই আধিকারিকরা কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত চরমে উঠেছে। ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে ধর্নায় বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যেই চাপ, পাল্টা চাপের কৌশলও বজায় রেখেছে দু’পক্ষ। এ বার চিট ফান্ডের তদন্তে এ রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিবিআই জয়েন্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ শ্রীবাস্তবকে নোটিস ধরিয়ে দিল কলকাতা পুলিশ।
কেন হঠাৎ নোটিস? কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, ভবানীপুর থানায় এক ব্যবসায়ীর কর্মীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে এই নোটিস। কি সেই অভিযোগ? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈভব খট্টার নামে এক ব্যক্তি ২০১৮ সালের ১৮ অগষ্ট ভবানীপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, সিবিআই পরিচয় দিয়ে কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি তাঁকে আটকে রেখেছিলেন। বৈভব খট্টর নিজেকে সেন্ট্রাল রোলিং ফ্লাওয়ার মিলের কর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁর অফিস ভবানীপুর থানা এলাকার এজেসি বোস রোডে। কিন্তু ভবানীপুর থানা কোনও পদক্ষেপ না করায় আলিপুর আদালতে যান খাট্টার। পুলিশ সূত্রে খবর, আদালত ভবানীপুর থানাকে ওই মামলায় এফআইআর রুজু করার নির্দেশ দেয়। ২১ জানুয়ারি ভবানীপুর থানা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১,৩৪২ এবং ৩৪ ধারায় মামলা রুজু করে। বৈভবের অভিযোগ অনুযায়ী এই মামলা দায়ের করা হয়েছে সিবিআইয়ের এক সাব-ইন্সপেক্টর সুনীল মিনা এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দিলেন প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, পঙ্কজ শ্রীবাস্তব যেহেতু সিবিআই-এর কলকাতার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এবং সিবিআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই কারণেই তাঁর বয়ান রেকর্ড করার জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছে। রবিবার রাতেই কলকাতা পুলিশের একটি দল নিজাম প্যালেসের ভিতরে পঙ্কজ শ্রীবাস্তবের সরকারি বাসভবনে পৌঁছে যায়। আর সোমবার ভবানীপুর থানার একটি দল নোটিস নিয়ে নিজাম প্যালেসে যায়। কিন্তু সেখানে মোতায়েন পুলিশ কর্মীরা তাঁদের আটকান। নির্দিষ্ট কারণ জানার পরই তাঁদের ছাড়া হয়। ভিতরে গিয়ে মুখবন্ধ খামে ওই নোটিস দিয়ে আসেন জয়েন্ট ডিরেক্টরকে। তবে ওই মামলায় পঙ্কজ শ্রীবাস্তব জড়িত কি না, তা তদন্ত সাপেক্ষ।
পরে নিজাম প্যালেস থেকে বেরিয়ে জয়েন্ট ডিরেক্টর বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশের নোটিস পেয়েছি। সেটি খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’ সিবিআই-এর পক্ষ থেকে নোটিসের প্রাপ্তিস্বীকার করা হলেও এ নিয়ে কলকাতা পুলিশের তরফে কোনও কিছু জানানো হয়নি। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) প্রবীণ ত্রিপাঠিকে বারবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। এসএমএস করা হলেও তার জবাব দেননি।
আরও পড়ুন: নজিরবিহীন, গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়ঙ্কর, সংসদে বললেন রাজনাথ, কথা রাজ্যপালের সঙ্গেও
কিন্তু রবিবার নজিরবিহীন সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিবিআই ডিরেক্টরকে নোটিস ধরানো হল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নানা মহলে জল্পনাও তুঙ্গে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সিবিআই-কে পাল্টা চাপে ফেলতেই এই নোটিস ধরানো হয়েছে।
অন্য দিকে, সিবিআই আধিকারিকদের হেনস্থা নিয়ে সোমবার দফায় দফায় বৈঠক করেন পঙ্কজ শ্রীবাস্তব। খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন ভিডিয়ো ফুটেজ। তার পর যাবতীয় রিপোর্ট ই-মেলের মাধ্যমে দিল্লিতে সংস্থার সদর দফতরে পাঠিয়ে দেন বলে সিবিআই সূত্রে খবর। নিজেও বিকেলের দিকে দিল্লিতে উড়ে যান। আগামিকাল সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি রয়েছে। সেটা যেমন কারণ, তেমনই সিবিআই-এর নয়া ডিরেক্টর ঋষিকুমার শুক্লার সঙ্গে গোটা ঘটনাক্রম নিয়ে আলোচনাও করবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy