প্রতীকী ছবি।
সূত্র মিলছে না! রাজ্যে করোনা ভাইরাসের গতিবিধির নিরিখে এই উপলব্ধি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের। তাঁদের মতে, অঙ্কের মতো বাঁধাধরা নিয়মে চলে না এই ভাইরাস। বরং এই নতুন শত্রু বেশ রহস্যময়। তার চালচলনে ধাঁধা-ধোঁয়াশা অনেক।
আক্রান্তের সরাসরি সংযোগে বা কাছাকাছি এলে করোনাভাইরাসের অন্যের দেহে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ‘কোভিড১৯’ কী ভাবে সংক্রমিত হয়, সেই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্যান্য শ্বাসনালি সংক্রমণের ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়ার মতো এই ভাইরাস হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সূত্রে ভাইরাসের গতিবিধি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলছে না বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে তাঁরা দক্ষিণ দমদমের প্রৌঢ়, নয়াবাদের বৃদ্ধ এবং উত্তরবঙ্গের মহিলার সংক্রমণকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছেন।
করোনা সংক্রমণে রাজ্যে প্রথম যাঁর মৃত্যু হয়, তিনি ২ মার্চ বিলাসপুর থেকে কলকাতায় ফেরেন। ফেরার ন’দিনের মাথায় জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ মার্চ দক্ষিণ দমদমের বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়ের দেহে করোনা ধরা পড়ে। হাসপাতালে ভর্তির আগে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে স্বামীকে নিয়ে যান তাঁর স্ত্রী। ফলে প্রৌঢ়ের স্ত্রী, একই বাড়িতে বসবাসের সুবাদে আক্রান্তের ৭৯ বছরের মায়ের নামও ‘হাইরিস্ক ক্যাটেগরিতে’ চলে আসে। কিন্তু ওই দু’জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়েনি।
পঞ্চসায়রের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধ পরিবারের সঙ্গে একই গাড়িতে এগরা গিয়েছিলেন। আত্মীয়ের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বৃদ্ধ দম্পতি দিঘা ঘুরতে যান। এ ক্ষেত্রেও আক্রান্তের স্ত্রী, ছেলে বৌমা বা নাতনির নমুনা পরীক্ষায় এখনও করোনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাঁর আত্মীয়ের স্ত্রী ও পিসি আক্রান্ত হয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য, সূত্র মিলছে না! তাঁদের বক্তব্য, এগরার ঘটনায় কার থেকে কার দেহে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, সেটাই এখনও স্পষ্ট নয়।
মাইক্রোবায়োলজিস্ট পুরঞ্জয় সাহা জানান, মাত্র কয়েকটি ঘটনা নিরিখে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়। আরও ঘটনা বিশ্লেষণ করতে হবে। তাঁর মতে, কার রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কতটা, কত মাত্রায় দেহে ভাইরাস ঢুকেছে— এই সবই বিশ্লেষণ করা জরুরি।
এপিডেমোলজিস্ট পূরণ শর্মা বলেন, ‘‘নির্দেশিকা মেনে আক্রান্তের থেকে দূরত্ব বজায় রাখলে, মাস্ক পরলে, বার বার হাত ধুলে ভাইরাসের কোপে পড়ার আশঙ্কা কম। স্বজনেরা কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন, তা দেখতে হবে।’’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, দক্ষিণ দমদমের প্রৌঢ়ের লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগে পর্যন্ত করোনা-সম্ভাবনা আন্দাজই করা যায়নি। সতর্কতা অবলম্বনের ভিতই তো নড়বড়ে ছিল!
উত্তরবঙ্গের আক্রান্ত মহিলার প্রসঙ্গে টেনে এক জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক জানান, ওই মহিলা চেন্নাই থেকে ফেরার পরে ভাইয়ের বাড়িতে ছিলেন। গত ২০ মার্চ তাঁর শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়। এখনও পর্যন্ত ভাইয়ের মধ্যে কোনও করোনা-লক্ষণ নেই। পূরণবাবু জানান, ভুটানে আমেরিকা-ফেরত এক ব্যক্তি দেশে ফিরে করোনায় আক্রান্ত হন। তাঁর স্ত্রী, চালক এবং টুর গাইড একই গাড়িতে ছিলেন। চালক এবং টুর গাইডের রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও ১৫ দিনের মাথায় স্ত্রীর লালারসের চতুর্থ নমুনা পরীক্ষায় কোভিড১৯ ধরা পড়ে! আগের তিন বার কিন্তু স্ত্রীরও পরীক্ষার রিপোর্ট চালক এবং টুর গাইডের মতোই নেগেটিভ এসেছিল।
এই অবস্থায় স্ক্রিনিংয়ের নির্দেশিকা বদলের সময় এসেছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের মতে, এখন যা পরিস্থিতি, তাতে জেলায় বাইরে থেকে কেউ এলেই তাঁকে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে কোয়রান্টিনে রাখা উচিত। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সমর বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখনও ছবিটা যে অস্পষ্ট, তা ঠিক। সকলেই সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছি। বিপদ এড়াতে লকডাউনে বাড়ি থেকে বেরোনো উচিত নয়। সকলে মিলে না-লড়লে এই যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy