রাত পোহালেই আনুষ্ঠানিক ভাবে হবে দু-দেশের ছিটমহল বিনিময়। ছিটমহলের বাসিন্দাদের পুনর্বাসন, পুনর্স্থাপন সহ সামগ্রিক উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ করেছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। কোথায় স্কুল হবে, কোথায় হাসপাতাল। বিদ্যুতের খুঁটি বসার কাজ কখন থেকে শুরু হবে। পানীয় জলের জলাধার কোথায় বসবে। তা নিয়ে এক উন্মাদনায় যেন ভাসছেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। ছিটমহাল বিনিময় সমন্বয় কমিটির নেতা হোক বা প্রশাসনের কর্তা, কাউকে হাতের কাছে পেলেই ছুটে যাচ্ছেন তাঁরা। জানতে চাইছেন, কোথায় কী হবে।
মঙ্গলবার ৩১ জুলাই রাত ১২ টায় অবসান হতে চলেছে ছিটমহলের। তার পর থেকেই শুরু হবে উন্নয়নের কাজ। দিনহাটার মশালডাঙ্গা থেকে শুরু করে মেখলিগঞ্জের ছাট কুচলিবাড়ি বাংলাদেশি ৫১ টি ছিটমহলের ১৪ হাজার ৮৫৬ জন বাসিন্দা। এর বাইরেও আরও প্রায় এক হাজার বাসিন্দা ভারতীয় ছিটমহল থেকে এ পারে আসবেন। তাদের জন্য স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। সে জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।
কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, ‘‘উন্নয়নের কাজের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। ভারতীয় ছিটমহল থেকে য়ারা আসবেন তাদের পুনর্বাসনে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথমে অস্থায়ী ভাবে তাদের তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। পরে স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করে পুনর্বাসন দেওয়া হবে।’’ ছিটমহলে উন্নয়ের কাজ এখন সময়ের অপেক্ষা বলে জানান তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মূখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ছিটমহল বিনিময় হতে চলেছে। প্রথমে মানুষের প্রাথমিক চাহিদাগুলি পূরণ করা হবে। রাস্তা, পানীয় জল, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে। সেই সঙ্গে চলবে গণনার কার। এর পরে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড তৈরির কাজ হবে। ছিটমহলের মানুষ এখন ভাল থাকবেন।’’
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, ‘’৬৮ বছর পিছিয়ে রয়েছে ছিটমহল। সেই হিসেবেই আমরা উন্নয়ন চাই। ছিটমহলের সাধারণ মানুষের যাতে আর কষ্টের মধ্যে পড়তে না হয় তা দেখতে হবে। প্রশাসনের তরফে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিনিময় হলেই উন্নয়ন শুরু হবে বলে আশা করছি।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, ছিটমহল উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার যে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে তা দু’ভাবে খরচ করা হবে। বাংলাদেশের যে ছিটমহলগুলি ভারতের অংশ হয়ে যাবে সেখানে রাস্তা, স্কুল, বিদ্যুত পরিকাঠামো তৈরি, ক্ষুদ্র সেচের ব্যবস্থা, হাসপাতাল, পানীয় জলের ব্যবস্থায় ওই টাকার একটি অংশ খরচ করা হবে। হলদিবাড়িতে তিস্তার উপরে সেতু তৈরিতে বরাদ্দ হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। ভারতীয় ছিটমহলগুলি থেকে যে বাসিন্দারা এপারে আসবেন তাদের অস্থায়ী ও স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য বাকি টাকা খরচ করা হবে। প্রশাসনের তরফে প্রথমে ভাবা হয়েছিল ওপাশ থেকে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আসবেন। সেই হিসেবেই প্রকল্প তৈরি করা হয়। কিন্ত দুই দেশের জনগণনার পরে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে এক হাজারের মতো বাসিন্দা এপারে আসবেন। তাদের প্রথমে অস্থায়ী পুনর্বাসন দেওয়া হবে। দিনহাটার কৃষিমেলা বাজারে এবং মেখলিগঞ্জের একটি জায়গায় ত্রাণ শিবির করা হবে। তাদের খাওয়া এবং কাজের ব্যবস্থাও করে দেবে প্রশাসন। পরে তাদের স্থায়ী বসবাসের জন্য বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy