কোচবিহারের প্রান্তিক বাজারে সিপিএম কার্যালয়ে ভাঙচুর। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
নতুন ভোটার হতে পেরে দিন কয়েক আগেও উল্লাসে মেতেছিলেন তাঁরা। গণনার পরে সেই সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারাই হামলার অভিযোগ তুলে আক্ষেপ করছেন।
শুক্রবার ভোট গণনার পরে দিনহাটার মশালডাঙা, পোয়াতুর কুঠি, করলা সহ একাধিক ছিটমহলে তৃণমূলের কর্মীরা হামলা চালায় অভিযোগ। মশালডাঙা ছিটমহলের এক বাসিন্দার দোকানে তালা দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। পোয়াতুরকুঠিতে একাধিক বাড়ি দশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। করলা ছিটমহলে এক বাসিন্দাকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
এই অবস্থায়, সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হল নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি। তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা একটি চিঠি পাঠিয়েছে। অবস্থার পরিবর্তন না হলে ছিটমহলের বাসিন্দাদের নিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকিও দিয়েছে কমিটি। শুধু ছিটমহল নয়, জেলার বিভিন্ন জায়গায় শাসক দল সন্ত্রাস করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এ দিন বাম গণতান্ত্রিক জোটের একটি দল কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন জানান, ইতিমধ্যেই তাঁর কাছে কিছু অভিযোগ পৌঁছেছে। তিনি পুলিশ সুপার সুনীলকুমার যাদবের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “সাবেক ছিটমহল-সহ যেখান যেখান থেকে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে সর্বত্র পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কোথায় যাতে কোনও গণ্ডগোল না হয় তা দেখা হচ্ছে।” কোচবিহার জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “অভিযোগ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত অভিযোগ করেন, সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা অনেকে আতঙ্কে আছেন। তিনি বলেন, “ওই এলাকাগুলিতে শাসক দল ভোট কম পেয়েছে বলেই হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু এমনটা ঠিক নয়। যে মানুষগুলোকে কিছুদিন আগেই দেশের নাগরিক করা হল, তাঁদের উপরে হামলা ঠিক নয়। এর বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব।” তৃণমূলের দিনহাটা কেন্দ্র থেকে জয়ী প্রার্থী উদয়ন গুহ জানান, অশান্তি কোথাও বরদাস্ত করা হবে না। তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত কোথাও কোনও বড় গন্ডগোল হয়নি। যদি কেউ কোথায় অশান্তি করার চেষ্টা করে তা বরদাস্ত করা হবে না।”
সাবেক ছিটমহল করলার বাসিন্দা মজিরন বিবি অভিযোগ করেন, এ দিন দুপুরে তাঁদের বাড়িতে কিছু লোক জড়ো হয়। তাঁরা তৃণমূল কর্মী বলে নিজেদের বলে পরিচয় দেয়। দশ হাজার টাকা দাবি করে তাঁরা। প্রতিবাদ করায় তাঁর স্বামী মহম্মদ রহিম বকসকে মারধর করে। বাড়ির নানা জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। টাকা না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলে দাবি।
ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়টি ঠিক হওয়ার পরে দিনহাটায় এসে সাবেক ছিটমহলের পোয়াতুর কুঠির বাসিন্দা মুন্নাফ ব্যাপারিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি শাল উপহার দেন। এ দিন সকালে তৃণমূলের কয়েকজন কর্মী তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। সেই সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর উপহার দেওয়া শাল ফেরত চায় তারা। সেই সঙ্গে এক লক্ষ টাকা দাবি করে। তিনি বলেন, “ওদের দাবি পূরণ না হলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে ওরা।” ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা মনসুর আলি মিয়াঁর দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
সিপিএমের অভিযোগ, মাথাভাঙা পুরসভার বাম কর্মীদের উপরে হামলা চালায় তৃণমূল। কয়েকজনকে প্রকাশ্যে রাস্তায় কান ধরে উঠবোস করানো হয়। কিছুক্ষণ নীলডাউন করেও রাখা হয়। কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় অভিযোগ করেন, জেলা জুড়ে সন্ত্রাস চলছে।
ইতিমধ্যে তুফানগঞ্জ, শীতলখুচি, সিতাই, মাথাভাঙা, দিনহাটা, কোচবিহার উত্তর, দক্ষিণ-সহ নানা জায়গায় সন্ত্রাস হচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রায় পঞ্চাশটি পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। কয়েকটি পার্টি অফিস দখল করা হয়েছে। কিছু কর্মীর বাড়ি থেকে গরু, ছাগল এবং মোটরবাইক নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও বেছে বাম ও কংগ্রেস কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সন্ত্রাসের অভিযোগ ভিত্তিহীন। ভোটের আগেও নানা মিথ্যে অভিযোগ করেছে। এখন খবরের কাগজে বেঁচে থাকার জন্য আবারও মিথ্যে অভিযোগ করছে। মানুষ সব বুঝতে পারছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy