অবশেষে সাত্তোরের বধূ নির্যাতন কাণ্ডে সিআইডি-র চার্জশিট গ্রহণ করল সিউড়ি আদালত।
শুক্রবার সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রথম বার ওই মামলায় সিআইডি-র জমা করা চার্জশিটে বেশ কিছু ফাঁকফোকর দেখে প্রশ্ন তুলে তা গ্রহণযোগ্যতায় নেয়নি আদালত। সিআইডি-র পেশ করা দ্বিতীয় দফার চার্জশিট গ্রহণযোগ্যতায় নেওয়া হবে কিনা, এ ব্যাপারে শুনানি ছিল সিউড়ি সিজেএম আদালতে। মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় চার্জশিট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন। তিন কনস্টেবল এবং ওসি (এসওজি) কার্তিকমোহন ঘোষ-সহ যে চার জনের নাম চার্জশিটে রয়েছে, তাঁদের আগামী ২৯ এপ্রিল আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।’’ ওই দিন কেউ অনুপস্থিত থাকলে, তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
পুলিশের বিরুদ্ধে সাত্তোরের এক বধূকে নির্মম অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনায় গত ৯ মার্চ আদালতে চার্জশিট জমা করে সিআইডি দল। কিন্তু, চার্জশিট গ্রহণযোগ্যতায় নেয়নি আদালত। উল্টে, গত ১৭ মার্চ চার্জশিটে বেশ কিছু বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বলে প্রশ্ন তোলেন সিজেএম। পুর্নতদন্তের নির্দেশও দেয় আদালত।
কী সেই ফাঁক? গত ১৭ জানুয়ারির ওই ঘটনার পরে নির্যাতিতার স্বামী পাড়ুই থানায় একটি অভিযোগ করেন। সেখানে কিছু পুলিশকর্মী ও ছয় তৃণমূলকর্মীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযানের কথা মেনে নিলেও শাসকদলের লোকেদের জড়িত থাকার অভিযোগ মানতে চায়নি পুলিশ। সিআইডি যে চার্জশিট জমা দিয়েছিল, তাতে নাম ছিল স্পেশ্যাল অপারেশন্স গ্রুপের ওসি কার্তিকমোহন ঘোষ, এসওজি-র দুই কনস্টেবল দীপক বাউড়ি, কাশীনাথ দাস এবং ইলামবাজার থানার এক মহিলা কনস্টেবল-সহ মোট চার জনের। অন্য দিকে, ঘটনার দিন দুই পরে বুদবুদ থানায় পৃথক একটি অভিযোগ করেন বিপ্লব চৌধুরী নামে জনৈক এক ব্যক্তি। তাতে ওই বধূর উপর নির্যাতনের ঘটনায় এসডিপিও বোলপুর, সিআই বোলপুর এবং ওসি এসওজি কার্তিকমোহন ঘোষ এবং এক তৃণমূল কর্মী শেখ আজগর-সহ কয়েক জনের নাম ছিল। দু’টি পৃথক অভিযোগ ধরে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্ত শেষ করে আদালতে সিআইডি-র পেশ করা চার্জশিটে অভিযুক্তদের মধ্যে এক মাত্র কার্তিকমোহন ঘোষ ছাড়া আর কারও নাম নেই। কিন্তু, বুদবুদ ও পাড়ুই থানায় দায়ের হওয়া অন্য অভিযুক্তদের ভূমিকা কী ছিল, সেই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি চার্জশিটে বলে প্রশ্ন তোলে আদালত। আরও কিছু বিষয়ে আপত্তি থাকায় ফের তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। অসুস্থতার কারণে সরে দাঁড়ান তদন্তকারী অফিসার প্রশান্ত নন্দী। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নেওয়া সুপ্রকাশ পট্টনায়ককে গত ২৩ মার্চ সুপ্রকাশ পট্টনায়ককে দ্রুত তদন্ত শেষ করে ফাইনাল রিপোর্ট জমা করতে বলে আদালত। গত ৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার চার্জশিট জমা করে সিআইডি। নতুন নাম যুক্ত না হলেও নতুন একটি ধারা ৩৫৪ (জামিন অযোগ্য) যুক্ত করা হয়েছে। এ দিন ওই চার্জশিটই আদালত গ্রহণযোগ্যতায় নেবে কিনা, দুই অভিযোগকারী এবং সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসারকে হাজিরা ছিল। অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতার স্বামী। তবে, ছিলেন বুধবুদ থানায় দায়ের করা অভিযোগকারী বিপ্লব চৌধুরী। নিজেদের আইনজীবী মারফত উভয়েই সিআইডি-র করা তদন্তে নিজেদের অনাস্থা ব্যক্ত করে আবেদন করেন। সঙ্গে সিবিআই-কে দিয়ে তদন্তের দাবিও ছিল। আদালত সব পক্ষের কথা শোনার পরে পেশ করা চার্জশিটকে গ্রহণযোগ্যতায় নেয়।
সিআইডি-র ডিএসপি সিঞ্চন রায়চৌধুরী এবং সরকারী আইনজীবী রণজিৎবাবুর বক্তব্য, বিচারকের পর্যবেক্ষণে আগের চার্জশিটে যে যে জায়গায় খামতি ছিল, তার সন্তোষজনক জবাব সিআইডি দিয়েছে। কিন্তু, সিবিআই দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিম্ন আদালতের এক্তিয়ারে নেই। পাশাপাশি তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি-কে নতুন কোন ধারা যুক্ত করা বা ব্যক্তির নাম যোগ করার বিষয়ে মতামত আদালত চাপিয়ে দেবে না। তাই চার্জশিট আদালতের গ্রহণযোগ্যতায় নেওয়া হল বলে নির্দেশে উল্লেখ করেছেন সিজেএম বলে রণজিৎবাবু জানিয়েছেন। এ দিন ফোনে নির্যাতিতার স্বামী বলেন, ‘‘আজ অসুস্থ থাকায় আদালতে যেতে পারিনি। তবে, যে অভিযোগ হয়েছিল, তা মেনে তদন্ত করেনি সিআইডি। ওদের তদন্তে আমাদের বিশ্বাস নেই। আমরা সিবিআই তদন্ত চেয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy