Advertisement
০২ মে ২০২৪
চেনা চেহারায় ফিরল নানুর

কাজল-গদাধর সংঘাত জারি

গদাধর হাজরা বনাম কাজল শেখ, সেই সংঘাত সমানে চলেছে... এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বোমা-গুলির লড়াই এর আগেও বহুবার দেখেছে বীরভূম। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, বিধানসভা ভোটের মুখেও বেআব্রু কোন্দলে রাশ টানা না গেলে বিরূপ প্রভাব পড়বে ভোটবাক্সে। সে নিয়ন্ত্রণ কী ভাবে, প্রশ্ন সব মহলেই।

যুদ্ধে যারা। শুক্রবার সকালে নাহিনা গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

যুদ্ধে যারা। শুক্রবার সকালে নাহিনা গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:৫৭
Share: Save:

গদাধর হাজরা বনাম কাজল শেখ, সেই সংঘাত সমানে চলেছে...

এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বোমা-গুলির লড়াই এর আগেও বহুবার দেখেছে বীরভূম। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, বিধানসভা ভোটের মুখেও বেআব্রু কোন্দলে রাশ টানা না গেলে বিরূপ প্রভাব পড়বে ভোটবাক্সে। সে নিয়ন্ত্রণ কী ভাবে, প্রশ্ন সব মহলেই।

তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, গদাধর টিকিট পাওয়া ঠেকাতে বহু দিন ধরেই সক্রিয় কাজল-গোষ্ঠী। কিন্তু, অনুব্রত-সহ জেলা তৃণমূলের বড় অংশ গদাধরকেই ফের নানুরে দাঁড় করাতে চান। এ মাসের গোড়ায় সিঙ্গি পঞ্চায়েতে জনসভা করে গদাধর-কাজলের নাম না করেই হুঁশিয়ারি কাজলের এলাকা দখলে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি দেখে ঘর গোছাতে সক্রিয় হয়েছে কাজল শিবিরও। ফলে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাতের মাত্রা বাড়ছে।

সংঘর্ষের খবরে নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের নাম বারবার উঠে এসেছে। ২০০০ সালে নানুরের সুচপুরে সিপিএমের বিরুদ্ধে ১১ জন তৃণমূল সমর্থক খেতমজুরকে খুনের অভিযোগ ওঠে। ওই হত্যাকাণ্ড সামনে রেখে বীরভূমে তৃণমূলের উত্থানের শুরু। সেই সময় নানুর ব্লকের এগারোটি এবং বোলপুর ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতের বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম তথা বাম শরিকদের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘর্ষ প্রতিদিনের ঘটনা ছিল। সেই ছবি উল্টে যায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে। ওই ভোটে নানুর এবং বোলপুরের পঞ্চায়েতগুলি কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে তৃণমূল। তারপরেই সামনে আসতে শুরু করে শিবির বিভাজন। কেমন?


সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন...

সেই সময় দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের পর্যুদস্ত করে কোথাও দলীয় প্রতীকে কোথাও বা নির্দল খাড়া করে বর্তমান বিধায়ক গদাধর হাজরা এবং কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের ভাই কাজল শেখের জোট। কিন্তু গদাধর-কাজল সখ্যতা স্থায়ী হয়নি। নানুরের অধিকাংশ পঞ্চায়েত তো বটেই, বোলপুরের বাহিরী-পাঁচশোয়া, সিঙ্গি এবং সিয়ান-মুলুক পঞ্চায়েত বিধায়ক গদাধর হাজরাকে ব্রাত্য করে কর্তৃত্ব কায়েম করে কাজল। শুধু পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রণ নয়, গদাধর অনুগামীরা লাগোয়া অজয় নদের বালির ঘাটের দখল হারাতে শুরু করেন। শেষমেশ গদাধর নাম লেখান অনুব্রত শিবিরে।

মাস কয়েক আগে, বাহিরী এলাকায় কাজলকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে নাম জড়ায় গদাধর অনুগামীদের। তারপরে-পরেই পাল্টা হিসেবে তিন গদাধর অনুগামীকে খুনের অভিযোগে নাম জড়ায় কাজল-সহ তার অনুগামীদের। সম্প্রতি জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর উপস্থিতিতে সিঙ্গি পঞ্চায়েত এলাকার এক সভায় গদাধর হাজরা কাজলের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিঙ্গি-সহ সব পঞ্চায়েত দখলে নেওয়ার হুমকি দেন। তারপর থেকেই এলাকা দখল নিয়ে টক্কর একেবারে সেয়ানে-সেয়ানে। বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েতে কাজল অনুগামীদের হঠিয়ে, নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে গদাধর অনুগামীরা। ওই ‘সাফল্যে’ অনুপ্রাণিত হয়ে সিঙ্গি পঞ্চায়েতের দিকেও হাত বাড়ায় গদাধর গোষ্ঠী! মরিয়া হয়ে সক্রিয় হয় কাজল শিবিরও। এ সবের নিট ফল— এ দিনের সংঘর্ষ।

গত বুধবার থেকেই সিঙ্গি পঞ্চায়েতের নাহিনা ও বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েতের বাহিরী, যজ্ঞনগর, করিমপুর, সুলতানপুর, বড় শিমুলিয়া উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে তেতে উঠছে। বিধায়ক গদাধর হাজরার দাবি, ‘‘কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের ভাই কাজল শেখের নেতৃত্বে এলাকায় সন্ত্রাস এবং বোমাবাজি ও গুলিগোলা চলছে।’’ অভিযোগ মানতে চায়নি কাজল। মন্তব্য এড়িয়েছেন অনুব্রতও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যা বলার বিধায়ক বলবেন।’’

অনুব্রত মণ্ডলের পাশ কাটানো মন্তব্যে অন্য তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। সংশ্লিষ্ট মহলের মন্তব্য, এক সময় কাজলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে অনুব্রতের সঙ্গে টক্কর দিয়েছিলেন গদাধর। একই সুরে জেলা সিপিএমের এক নেতা বলেন, ‘‘সেই গদাধরকে এখন এগিয়ে দিয়ে মজা দেখছেন অনুব্রত। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার পাশা সাজাচ্ছেন!’’

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোমের মত, ‘‘ক্ষমতা দখল করতে তৃণমূল একের পর এক দুষ্কৃতীদের দলে নিয়েছে। যার মাশুল গুনছেন সাধারণ মানুষ।’’ এ সব থেকে পরিত্রাণ কবে? জানা নেই কারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE