শোভার হাটে লক্ষ্মীপুজোর মেলায় সম্প্রীতির উৎসব। জলপাইগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
পুজোর সময় ফুল কিনতে বাজারে ছুটেছেন পরিতোষ-আজিজুলরা৷ এখন মেলার মাঠের গর্ত বোজাতে একই সঙ্গে ছুটছেন অলোক-নজরুলরা।
উপলক্ষ লক্ষ্মীপুজো। তাকে ঘিরেই মেলা। কিন্তু দুই সম্প্রদায়ের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে বদলে গিয়েছে জলপাইগুড়ির গড়ালবাড়ির শোভারহাটের সেই মেলার চরিত্র। তিন দিনের লক্ষ্মীপুজো শেষে রবিবার থেকে শুরু হওয়া সেই মেলা এখন সত্যিই সর্বজনীন। দুর্গা পুজোর বিসর্জন ও মহরমের মহড়া পাশাপাশি রেখে জলপাইগুড়ি আগেই যে সম্প্রীতির ছবি এঁকেছিল, তা অব্যাহত রইল লক্ষ্মী পুজোতেও।
মেলা ঘিরে এখন কার্যত উৎসবে মেতে উঠেছেন গড়ালবাড়ি ও আশপাশের দুই সম্প্রদায়ের মানুষ৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জমিদার মধু রায় ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে এখানে প্রথম এই মেলার আয়োজন করেছিলেন৷ সেই মেলা এখনও চলছে৷ এখন এলাকার মানুষজনই মেলার আয়োজন করেন৷ মেলা কমিটির সদস্য তালিকায় চোখ রাখলেও ধরা পড়ে সম্প্রীতির ছবিটি। কমিটির নব্বইজন সদস্যের অর্ধেকই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের৷ মেলা কমিটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য রাসেল জারদারির কথায়, ‘‘এই মেলাই আমাদের কাছে বছরের সব থেকে বড় উৎসব৷’’ তাঁর কথার প্রমাণ মেলে এলাকার কয়েকটি বাড়ি ঘুরলেই ৷ ওসমান, জহিরুল, সিরাজ, জামালদের বাড়িতে গেলেও দেখা যায় আত্মীয়দের ভিড়৷ তাঁরা এসেছেন মেলা দেখতে৷ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই সংস্কৃতি বজায় রাখা সম্ভব হবে বলেও দাবি তাঁদের।
একই ছবি নদিয়ার কৃষ্ণনগরের চাঁদ সড়ক বারোয়ারিরও। বিচ্ছেদের মধ্যে নয়, মিলনের মধ্যে ধর্মকে দেখেন পুরোহিত রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী। এখানে দুর্গাপুজোয় মণ্ডপ তৈরি থেকে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় যোগ দেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ। আবার বিজয়া দশমীর পরের দিনই মহরমের শোভাযাত্রাতেও দেখা যায় একই ছবি। কৃষ্ণনগরের কুর্চিপোতাতেও দুর্গাপুজো ও মহরমে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ।
বিজয়া দশমীর বিকেলে ওই জেলারই শিকারপুর সীমান্তে মাথাভাঙা নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় নদীর দুপারে দাঁড়িয়ে থাকেন দু’দেশের বহু মানুষ। এ পার থেকে কোনও পুজোর কর্তা নদীতে ভাসিয়ে দেন মিষ্টির হাঁড়ি। ও পার থেকে ইকবাল শেখ বলেন, ‘‘পেয়েছি কর্তা। আসছে বছর আবার হবে।’’
লালবাগেও মহরমের তাজিয়া বের হওয়ায় প্রতিমা বিসর্জনের দিন পিছিয়ে যায়। মণ্ডপের পাশ দিয়ে তাজিয়া নিয়ে যেতে সাহায্য করেন পুজোর উদ্যোক্তারাই। মুর্শিদাবাদ পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাহানগর ওহরামগঞ্জ মহিলা দুর্গোৎসব সমিতির পুজোতে নবমীর দিন পাশাপাশি বসে পাত পেড়ে ভোগ খান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। মুর্শিদাবাদ পুরসভার ১ নম্বর গোলাপবাগ জনমঙ্গল সেবা সমিতির দুর্গা পুজোর আয়োজন হয় গোলাপবাগ দরগার জায়গায়। দরগা কমিটি দানপত্র করে তা লিখে দিয়েছে দুর্গোপুজো কমিটিকে। এখন সেখানে পাশাপাশি মন্দির ও দরগা নির্মাণের কাজ চলছে। মাঝে রয়েছে এক চিলতে পাঁচিল।
সহ প্রতিবেদন: শুভাশিস সৈয়দ ও সুস্মিত হালদার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy