Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Coronavirus

ট্রেনে তৈরি-খাবারে সাড়া, উড়ানে নালিশ বৈষম্যের

বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরানোর জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘বন্দে ভারত’-এর উড়ানে যাত্রীদের এক ও বিমানসেবিকাদের অন্য রকম খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২০ ০৫:০৪
Share: Save:

দূরসফরের দুই মূল বাহন বিমান ও ট্রেনে খাবারদাবার নিয়ে দুই বিপরীত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উড়ানের খাবার নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ এনেছেন এক শ্রেণির যাত্রী। আর করোনা আবহে ট্রেনে মূলত ‘রেডি টু ইট মিল’ অর্থাৎ তৈরি-খাবার বা অল্প আয়াসে তৈরি করে নেওয়া যায়, এমন খাবার পরিবেশনে জোর দেওয়ায় যাত্রীদের কাছ থেকে সদর্থক সাড়া মিলছে বলে রেল সূত্রের খবর।

বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরানোর জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘বন্দে ভারত’-এর উড়ানে যাত্রীদের এক ও বিমানসেবিকাদের অন্য রকম খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। কিন্তু ২৭ মে কলকাতা থেকে ফের ঘরোয়া উড়ান শুরু হলেও ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর নির্দেশে সেই উড়ানে যাত্রীদের খাবার দেওয়া হচ্ছে না।

বন্দে ভারত উড়ান মূলত চালাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। তাই খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়েছে তাদেরই। মায়ানমার থেকে বন্দে ভারত উড়ানে কলকাতায় আসা সুদেষ্ণা চৌধুরী জানান, তিনি বিমানে উঠে দেখেন, প্রতিটি আসনে খাবারের প্যাকেট ও এক বোতল জল রাখা হয়েছে। প্যাকেটে ছিল কেক, বিস্কুট, ফলের রস, স্যান্ডউইচ। লন্ডন থেকে আসা তন্ময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “লন্ডন বিমানবন্দরে খেয়ে নিয়েছিলাম। তাই খাবারের প্যাকেট খুলে দেখিনি।” তাঁর উড়ান দিল্লিতে যাত্রীদের নামিয়ে কলকাতায় এসেছে। তন্ময়বাবু জানান, দিল্লি থেকেও একটি খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়। তাতে মূলত শুকনো খাবারই ছিল।

যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, বিমানসেবিকাদের কিন্তু রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। উড়ান সংস্থায় খাবার সরবরাহকারী সংস্থার এক প্রতিনিধি জানান, যাত্রীদের জন্য কেক, বিস্কুট, ফলের রস, ব্রেড রোল থাকলেও বিমানসেবিকাদের জন্য ভাত-ডাল-পনিরের তরকারি থাকছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে এয়ার ইন্ডিয়া অবশ্য জানিয়েছে, যাত্রী ও বিমানসেবিকাদের একই খাবার দেওয়া হচ্ছে। ডিজিসিএ-র নির্দেশই রয়েছে, যাত্রী বা বিমানসেবিকাদের রান্না করা খাবার দেওয়া হবে না।

ট্রেনে ছবিটা আলাদা। করোনার দরুন ট্রেনে খাবার পরিবেশনের রীতিতে যে-পরিবর্তন আনা হয়েছে, যাত্রীরা তাতে সাড়া দিচ্ছেন বলেই রেলের দাবি। দেশে প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ শহরকে ছুঁয়ে কমবেশি ১০০ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলছে। তবে তাতে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে না। সংক্রমণ ঠেকাতে যথাসম্ভব স্পর্শ এড়িয়ে চলার নীতি নিয়েছে রেল। তাই ট্রেনে এবং রেলের ফুড প্লাজ়ায় চা, কফি, কেক, চিপস, বিস্কুট, ভুজিয়া, প্যাকেটবন্দি ঝালমুড়ি, নরম পানীয় ছাড়াও ‘রেডি টু ইট’ মিল পরিবেশনের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।

ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড টুরিজম কর্পোরেশন বা আইআরসিটিসি সূত্রের খবর, যাত্রীদের সুবিধের জন্য ‘রেডি টু ইট’ মিলের ক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্যাকেট খুলে শুধু গরম জল যোগ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে রান্না করা যায়, এমন বিভিন্ন পদ এখন ট্রেনে যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। নুডলস ছাড়াও থাকছে ভাত, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, রাজমা রাইস, মটর-পনির, উপমা, পোহার মতো খাবারও। বিভিন্ন নামী সংস্থা যাত্রীদের এই চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসছে। ফুড প্লাজ়াতেও মিলছে এই সব খাবার। ট্রেন-সফরে বাড়ি থেকে খাবার আনার সুযোগ থাকলেও যাত্রীরা ‘রেডি টু ইট মিল’-কে প্রাধান্য দিচ্ছেন।

আইআরসিটিসি-র পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা দেবাশিস চন্দ্র বলেন, ‘‘করোনা আবহে বিশেষ স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে। ‘রেডি টু ইট মিল’ নিয়ে যাত্রীদের আগ্রহ বাড়ছে।’’ স্বাস্থ্যবিধি মেনে, যত দূর সম্ভব স্পর্শ এড়িয়ে খাবার পৌঁছে দেওয়ার মধ্যে যাত্রীদের আস্থা অর্জনের বিষয়টিও জড়িত বলে মনে করছেন রেলকর্তারা। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বদলালেও পুরনো অভ্যেস ফিরবে কি না, নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তাঁরা। রাজধানী এক্সপ্রেসের ধাঁচে যে-সব বিশেষ ট্রেন চলছে, সেখানেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। বছরের অন্যান্য সময়ে রাজধানীর খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র থাকলেও এখন বিশেষ পরিস্থিতির দাবি মেনে চলতে হচ্ছে। নতুন ধরনের খাবারের স্বাদে কিছু তফাত থাকলেও এখনই সেটাকে দুধের সঙ্গে ঘোলের ফারাক বলতে চান না রেলকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE