বিপ্লব দেব।
বিজেপির রথযাত্রা ঘিরে বিতর্কের মাঝেই নতুন টানাপড়েন বাধল প্রস্তাবিত অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা বন্দোবস্ত ঘিরে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের প্রস্তাবিত সফরের আগে নিরাপত্তার আয়োজন পর্যালোচনা করতে আসা সে রাজ্যের পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে কোচবিহার জেলা পুলিশ সম্পূর্ণ ‘অসহযোগিতা’ করেছে বলে অভিযোগ উঠল। ত্রিপুরার মুখ্যসচিব ললিতকুমার গুপ্ত ওই অভিযোগ জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে’কে চিঠি পাঠিয়েছেন এবং ‘দোষী’ পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন।
আগরতলায় ললিতকুমার আজ এ বিষয়ে বলেন, ‘‘ইমেল পাঠানো হয়েছে। রবিবার অফিস বন্ধ। ঘটনা যখন হয়ে গিয়েছে, তাই ফোন করে এ দিন তাঁদের বিরক্ত করা হয়নি। সোমবার অফিস খুললে কথা বলব।’’
আগরতলায় বিজেপির প্রধান মুখপাত্র অশোক সিন্হা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘‘কোনও রাজ্যে বিরোধী কোনও দল ক্ষমতায় থাকতেই পারে। তার জন্য অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এলে তাঁর নিরাপত্তার বন্দোবস্ত না-করাটা অগণতান্ত্রিক ও অশালীন। কোনও মুখ্যমন্ত্রীর জেড প্লাস নিরাপত্তার বিষয়ে গাফিলতি মানে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে খেলা করা।’’
অশোকবাবুর মতে, ‘‘কোচবিহারের পুলিশ নিজে থেকে এ কাজ করেনি। রাজনৈতিক চাপে এমন করতে বাধ্য হয়েছে। এই ধরনের রাজনৈতিক চাপ দেওয়া রাজ্য সরকারের পক্ষে লজ্জার বিষয়। তৃণমূল আসলে ভয় পেয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।’’
বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘শুধু ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী নন, অমিত শাহের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েও রীতি-নীতি মানা হয়নি। বাংলায় এটাই প্রত্যাশিত, তারা তো দেশের বাইরে! এখানে একুশে আইন চলে!’’ তৃণমূল সূত্রে বলা হয়েছে, এই বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও খবরই ছিল না। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপেরও প্রশ্ন নেই।
ত্রিপুরা প্রশাসনের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি জানিয়ে এবং ত্রিপুরা পুলিশের ডিএসপি কমলশুক্ল দাসের যাওয়ার বার্তা কোচবিহার জেলা পুলিশ ও রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তার দফতরে পাঠানো হয়েছিল। কোচবিহারের অতিরিক্ত এসপির সঙ্গে কমলবাবুর কথাও হয়। কিন্তু গত বুধবার (৫ ডিসেম্বর) রাত ১টা ৪০ মিনিটে নিউ কোচবিহার স্টেশনে পৌঁছে কমলবাবু দেখেন, কোনও গাড়ি বা পুলিশকর্মী নেই। সারা রাত স্টেশনে কাটিয়ে পরের দিন সকালে একটি গাড়ি ভাড়া করে এসপি অফিসে পৌঁছন। কমলবাবু ত্রিপুরা পুলিশের কাছে জমা দেওয়া রিপোর্টে লিখেছেন, এসপি অফিসে কোনও সাহায্য না-পেয়ে তিনি জেলা পুলিশ লাইনে যান। সেখানে তাঁকে একটি গাড়ি এবং এক জন নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে পুলিশ লাইনের বাইরে একটি ঘরে থাকার জন্য পৌঁছে দেওয়া হয়। পৌঁছনোর পরেই গাড়ি ও নিরাপত্তারক্ষী ফেরত চলে যায়।
কোচবিহারের এসপি ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, ‘‘ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছিল।’’ তবে ত্রিপুরার পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে অসহযোগিতা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি। কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অম্লান ঘোষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মুখে কুলুপ কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহারও।
পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের বক্তব্য, ‘সরকারি অতিথি’ আইন অনুযায়ী, দেশের রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, দেশের প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং যে কোনও রাজ্যপাল এ রাজ্যে এলে ‘সরকারি অতিথি’র মর্যাদা পান। কিন্তু দেশের ক্যাবিনেট মন্ত্রী বা কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কাজে এলে কিংবা রাজ্য আমন্ত্রণ জানালে, তবেই ‘অতিথি’র মর্যাদা মিলবে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে আসার সফরসূচি জানালেও তার কারণ জানাননি। রাজ্যও তাঁকে আমন্ত্রণ জানায়নি। তাই ‘অতিথি’-র মর্যাদা পাননি।
পশ্চিমবঙ্গের এক আমলা বলেন, ‘‘ধরা যেতে পারে উনি ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক কাজে আসছিলেন। তাই সরকারি অতিথি আইন অনুযায়ী যা করার কথা তা-ই করা হয়েছে। উপরন্তু উনি সফরও বাতিল করেন।’’ আর এক কর্তার যুক্তি, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত সফরসূচি রীতি মেনে জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। রাজ্যের তরফেও রুটিন চিঠি পাঠানো হয়েছিল। জেলাশাসকের পদক্ষেপ করার কথা। কিন্তু তার আগেই সফর বাতিল হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy