পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল এবং বিজেপিকে রুখতে স্থানীয় স্তরে সমঝোতা করেছিল কংগ্রেস ও সিপিএম। কিন্তু বোর্ড গঠনের সময়ে জেলার ১৪৬টি ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিল মালদহ জেলা কংগ্রেস। দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে লিখিত ভাবে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। লোকসভা ভোট যখন অদূরে, সেই সময়ে মালদহে জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম বেনজির নূরের এমন সিদ্ধান্ত নতুন করে জল্পনা উস্কে দিয়েছে। তাঁদের ওই সিদ্ধান্তের দায় প্রদেশ কংগ্রেস যেমন নেয়নি, তেমনই আবার জেলায় নিচু তলার কংগ্রেস কর্মীদের একাংশের মধ্যেও প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তাঁরা জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাল্টা কোমর বাঁধছেন।
মৌসমের ব্যাখ্যা, “বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক দলকে রোখাই আমাদের কাছে একমাত্র লক্ষ্য। সেই বার্তা পঞ্চায়েত স্তরের নেতৃত্বকে লিখিত ভাবে দেওয়া হয়েছে। বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে তৃণমূল এবং আমরা পরস্পরকে সমর্থন করছি।’’ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেই রফাসূত্র ঠিক হওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন তিনি।
মালদহে এখন দ্রুত জমি তৈরি করছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে সেখানে মৌসমদের পঞ্চায়েত-সিদ্ধান্তে স্বভাবতই স্বস্তিতে তৃণমূল। শাসক দলের তরফে মালদহের পর্যবেক্ষক ও মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, ‘‘বিজেপিকে আটকাতে ওঁরা আমাদের সমর্থন করছেন। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। ওই জেলায় পঞ্চায়েতের বোর্ড গড়তে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ওঁদের সাহায্য আমরা পেয়েছি।’’
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশে জল্পনা, আগামী ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মৌসমের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাঁর মামা এবং আর এক সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী এর আগেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছিলেন। মামা-ভাগ্নীর নানা পদক্ষেপেই তাঁদের দলবদল নিয়ে জল্পনা বাড়ছে! মৌসম যদিও এ দিন বলেছেন, “দলবদলের কোনও সম্ভাবনা নেই। কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে এ সব রটানো হচ্ছে।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য একেবারেই মৌসমের সঙ্গে একমত নন। তাঁর বক্তব্য, বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় স্তরেই লড়াই চলছে। কিন্তু বাংলায় বিজেপির সঙ্গে বাড়তি বিপদ তৃণমূল। তারা এখানে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। তাঁর কথায়, ‘‘মালদহে কারা কংগ্রেসকে ভেঙেছে, সেখানকার কংগ্রেস কর্মীরা আমার চেয়েও ভাল জানেন। তার পরেও তৃণমূলকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিলে কী বলার আছে!’’
জেলা নেতৃত্বের এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশও। তাঁদেরই এক জনের বক্তব্য, ‘‘পুলিশ দিয়ে ভয় দেখানো, ভোট লুঠ— সবই করেছে তৃণমূল। এখন সেই তৃণমূলকে সমর্থনের বার্তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy